কুয়েতের দক্ষিণাঞলীয় এলাকা মানগাফের আবাসিক ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে কুয়েতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গ্রেপ্তার ৩ জনের মধ্যে একজন দেশটির নাগরিক, বাকি দু’জন অভিবাসী।

গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে ‘দায়িত্বে অবহেলা এবং ভবনের অগ্নি নিরাপত্তার ব্যাপারে উদাসীনতা প্রদর্শনের মাধ্যমে মানুষ হত্যা’র অভিযোগ আনা হয়েছে বলে জানা গেছে।

গত বুধবার স্থানীয় সময় ভোরের দিকে মানগাফ এলাকার একটি ছয় তলা ভবনে আগুন লাগে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ওই অগ্নিকাণ্ডের খবর পায় সকাল ৬ টার দিকে।

কুয়েতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানিয়েছেন, ওই ভবনটিতে অভিবাসী শ্রমিকরা বসবাস করতেন। অন্তত ২০০ শ্রমিক বসবাস করতেন ভবনটিতে এবং তাদের অধিকাংশই ভারতীয়। কয়েকজন ফিলিপাইনের নাগরিকও থাকতেন ভবনটিতে।

আগুনে এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৫০ জন। শুক্রবার কুয়েতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইয়াহিয়া এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ছিল ৪৯ জন। গতকাল রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। এখন মোট মৃতের সংখ্যা ৫০ জন।’

‘মৃতদের অধিকাংশই ভারতের নাগরিক। ৩ জন অন্য দেশের নাগরিকও আছেন, তবে তারা কোন দেখ থেকে এসেছিলেন, তা এই মুহূর্তে আমার স্মরণে নেই।’

তবে কুয়েতের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গছে, ওই ৩ জন ফিলিপাইনের নাগরিক ছিলেন।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় জ্বালানি তেলের মজুত থাকা দেশগুলোর মধ্যে কুয়েত অন্যতম। এই মুহূর্তে বিশ্বে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের যে মজুত, তার ৭ শতাংশ রয়েছে কুয়েতের খনিগুলোতে।

তেলভিত্তিক অর্থনীতি হওয়ায় মধ্যপ্রাচ্যের উপসাগরীয় অঞ্চলের এই দেশটির জনসংখ্যা ৪০ লাখ। এই জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি অভিবাসী শ্রমিক, যারা দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে সেখানে গিয়েছেন। এই শ্রমিকদের বসবাসের জন্য কিছু কিছু অঞ্চল নির্দিষ্ট করে দিয়েছে কুয়েতের সরকার।

অগ্নিকাণ্ডের শিকার ভবনটি মালয়ালি ব্যবসায়ী কেজি আব্রাহামের মালিকানাধীন এনবিটিসি গ্রুপের বলে জানা গেছে। কুয়েতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ফাহাদ আল ইউসেফ গতকাল এক ব্রিফিংয়ে বলেছেন, ‘শ্রমিকদের অবাসিক ভবনগুলোর মধ্যে যেগুলোতে অগ্নি নিরাপত্তা নেই, সেসব ভবনের কর্তৃপক্ষকে শাস্তির আওতায় আনা হবে।’

আগুনে দগ্ধ হওয়া ভারতীয় ও ফিলিপিন নাগরিকদের দেহ তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠাচ্ছে কুয়েতের সরকার। ভারতীয় মৃতদের সবাই তামিলনাড়ু ও কেরালা রাজ্যের। মৃতদের প্রত্যেকের পরিবারের সদস্যদের ২ লাখ রুপি সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

বুধবারের অগ্নিকাণ্ড কুয়েতের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অগ্নিকাণ্ডগুলোর মধ্যে একটি। এর আগে ২০০৯ সালে এক কুয়েতি নারী স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ের প্রতিবাদ হিসেবে বিয়ের অনুষ্ঠানের তাঁবুতে আগুন দিয়েছিলেন। এতে নিহত হয়েছিলেন ৫৭ জন।

সূত্র : এএফপি/ এনডিটিভি ওয়ার্ল্ড

এসএমডব্লিউ