ইউরোপীয় ইউনিয়নের ‘বিতর্কিত’ নতুন অভিবাসন এবং আশ্রয়নীতি প্রণয়নে একটি সমন্বিত কৌশলগত পরিকল্পনা পেশ করেছে ইউরোপীয় কমিশন। বুধবার কমিশন  জানিয়েছে, ২০২৬ সালের মাঝামাঝিতে নতুন এই অভিবাসন ও আশ্রয়নীতি জোটভুক্ত দেশগুলোতে বাস্তবায়ন করতে চায় তারা।

ইউরোপীয় কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্গারিটিস শিনাস এক বিবৃতিতে বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে এই নীতিকে কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করাই তাদের লক্ষ্য। এই ইস্যুতে বছরের পর বছর ধরে চলা বিতর্কের অবসান হয়েছে গত মাসে। জোটভুক্ত দেশগুলোর জন্য শেষপর্যন্ত একটি অভিন্ন আশ্রয়নীতি প্রণয়ন করতে পেরেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

নতুন নীতি অনুযায়ী আশ্রয় আবেদন প্রক্রিয়াকরণে জোটভুক্ত ২৭টি দেশকেই দায়িত্ব নিতে হবে। এমনকি এই নীতির বিপক্ষে যেসব দেশের অবস্থান ছিল, তাদেরও এই দায়িত্ব নিতে হবে। তবে নতুন নীতিমালাটি আশ্রয় আবেদন বা প্রক্রিয়াকে আগের চেয়ে অনেক কঠোর করে তুলবে।

অভিন্ন এই আশ্রয়নীতিটি নিজ দেশে চালু করার জন্য জোটের দেশগুলোকে দুই বছর সময় দেওয়া হয়েছে। সেই হিসাবে ২০২৬ সালের মাঝামাঝি এসে গোটা ইউরোপীয় ইউনিয়নে নীতিটির বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে ইউরোপীয় কমিশন।

শিনাস বলেন, ‘‘সব সদস্য রাষ্ট্র একই জায়গা থেকে শুরু করছে না।’’ উদাহরণ হিসাবে তিনি বলেন, কিছু সদস্য রাষ্ট্র ইতিমধ্যে সীমান্তে উন্নত স্ক্রিনিং পদ্ধতির অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্বরাষ্ট্র কমিশনার ইলফা ইয়োহানসন এই অভিন্ন নীতিকে ‘সত্যিকার অর্থেই একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত’ হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেছেন, এর মধ্য দিয়ে সীমান্ত সুরক্ষার পাশাপাশি জোটভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সংহতি আরো দৃঢ় হবে।

বৃহস্পতিবার লুক্সেমবুর্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের একটি বৈঠক রয়েছে। সেখানে এই কৌশলগত পরিকল্পনাটি তুলে ধরা হবে। সদস্য রাষ্ট্রগুলো কীভাবে নিজ নিজ দেশে এই নীতি বাস্তবায়ন করবে তা আগামী ১২ ডিসেম্বরের মধ্য কমিশনে জমা দিতে হবে।

ইয়োহানসন বলেছেন, অভিন্ন আশ্রয়নীতি বাস্তবায়নে সদস্য দেশগুলোকে ৩৬০ কোটি ইউরো অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে কয়েকটি দেশ এই নীতি বাস্তবায়নে কাজ শুরু করেছেন বলেও জানান তিনি।

নতুন নীতি অনুযায়ী, যেসব দেশের আশ্রয়প্রার্থীদের ইউরোপীয় ইউনিয়নে আশ্রয়ের আবেদন মঞ্জুর করার হার ২০ শতাংশের নিচে এবং যেসব দেশে জননিরাপত্তার ঝুঁকি রয়েছে সেসব দেশগুলো থেকে আসা আবেদনকারীদের সীমান্তে তল্লাশি এবং যাচাই-বাছাই করবে কর্তৃপক্ষ।

আইন অনুসারে, জননিরাপত্তার কথা ভেবে ঝুঁকি এড়াতে সদস্য রাষ্ট্রগুলোতে আশ্রয় চাইতে আসা ব্যক্তিদের আঙুলের ছাপ এবং ছবি দিয়ে নিবন্ধিত করা হবে। কমিশনের পরিকল্পনা অনুযায়ী ‘ইউরোডাক’ নামের একটি বড় ধরনের তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা। সেখানেই আশ্রয়প্রার্থীদের সব তথ্য সংরক্ষণ করা হবে। এই তথ্যের মাধ্যমে ইউরোপজুড়ে আশ্রয়প্রার্থীদের বিভিন্ন বিষয় পর্যবেক্ষণ করা হবে।

২০২২ সাল থেকে শুরু হওয়া ইইউ রিটার্ন কোঅর্ডিনেটরের কার্যপরিধিও বাড়ানো হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে কোনো আশ্রয়প্রার্থীকে জোর করে ফেরত পাঠানো বা ডিপোর্ট কার্যকরে দক্ষতা ও ন্যায্যাতা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয়ভাবে কাজ করবে ইইউ রিটার্ন কোঅর্ডিনেটর।

কিন্তু এই অভিন্ন আশ্রয়নীতি খুব একটা সুফল বয়ে আনবে বলে বিশ্বাস করে না ২৭ দেশের এই জোটের অর্ধেকের বেশি সদস্য। গত মাসে আশ্রয়প্রার্থীদের তৃতীয় কোনো দেশে রেখে আশ্রয় আবেদন প্রক্রিয়াকরণে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানিয়ে কমিশনকে চিঠি দিয়েছে ইতালি, গ্রিস, ডেনমার্ক এবং চেক প্রজাতন্ত্রসহ মোট ১৫টি দেশ।

তবে ভাইস প্রেসিডেন্ট শিনাস জানিয়েছেন, আশ্রয়প্রার্থীদের রুয়ান্ডায় পাঠাতে যুক্তরাজ্য যে চুক্তি করেছে তা ইউরোপীয় ইউনিয়নের আইন অনুযায়ী এবং অভিন্ন নীতিমালা অনুযায়ী কার্যকর করার সুযোগ নেই। ইনফোমাইগ্রেন্টস।

এসএস