ফাইল ছবি

টানা আট মাসেরও বেশি সময় ধরে যুদ্ধ চলার পর গাজায় এখন সকলের আগ্রহের কেন্দ্রে রয়েছে যুদ্ধবিরতি। এমনকি যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সামনে আনা একটি প্রস্তাব জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে পাসও হয়েছে।

তবে যুদ্ধবিরতি এবং বন্দিদের মুক্তির পরিকল্পনায় বেশ কিছু পরিবর্তন আনতে প্রস্তাব দিয়েছে হামাস। আর এর জবাবে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ‘দরকষাকষি বন্ধের সময় এসেছে’।

বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

মূলত যুদ্ধবিরতির পরিকল্পনায় বেশ কিছু পরিবর্তন আনতে হামাসের প্রস্তাবের পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী এই গোষ্ঠীটির উদ্দেশে বলেছেন, ‘দরকষাকষি বন্ধের সময় এসেছে’।

দোহায় সাংবাদিকদের তিনি বলেন, কিছু পরিবর্তন প্রস্তাব নিয়ে কাজ করা গেলেও অন্যগুলো নিয়ে কাজের সুযোগ নেই, তবে যুক্তরাষ্ট্র এবং আলোচনার মধ্যস্থতাকারী কাতার ও মিসর ‘চুক্তিটি করতে চেষ্টা করে যাবে’।

হামাস গত মঙ্গলবার বলেছে, তারা এই প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক। তবে তারা গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনী পুরোপুরি প্রত্যাহার এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতির ওপর জোর দিয়েছে।

অবশ্য ইসরায়েল সরকার এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেনি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেছেন, যুদ্ধবিরতি নিয়ে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীটির প্রতিক্রিয়া প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের মতোই।

এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যে প্রস্তাবনা ১২ দিন আগেই দেওয়ার কথা বলেছেন তা ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এখনও প্রকাশ্যে অনুমোদন করেননি। ব্লিংকেন অবশ্য বলেছেন, গত সোমবার এক বৈঠকে নেতানিয়াহু তার ‘অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন’।

মূলত ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক চাপের পাশাপাশি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদও ওই প্রস্তাবের সমর্থনে একটি রেজুলেশন পাস করেছে। নিরাপত্তা পরিষদ বাইডেনের প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে সব পক্ষের উদ্দেশ্যে অবিলম্বে ও নিঃশর্তে সেই উদ্যোগ কার্যকর করার আহ্বান জানিয়েছে।

টানা আট মাস ধরে গাজায় আগ্রাসন ও নারী ও শিশুসহ বোমরিক হতাহত নিয়ে ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র দেশে-বিদেশে প্রবল চাপের মুখে রয়েছে। এর আগে নিরাপত্তা পরিষদে গাজায় অস্ত্রবিরতির একাধিক প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বাইডেন প্রশাসন সমালোচনার মুখে পড়েছিল।

এবার নিজস্ব উদ্যোগে এমন প্রস্তাব এনে পরিস্থিতি কিছুটা হলেও সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন।

তবে হামাস যুদ্ধের স্থায়ী অবসানের যে দাবি করছে, ইসরায়েল তা পুরোপুরি নাকচ করে দেওয়ায় আমেরিকার পক্ষে শান্তি পরিকল্পনা কার্যকর করা কঠিন হবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। গাজায় হামাসকে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করার আগে ইসরায়েল যুদ্ধ বন্ধ করতে প্রস্তুত নয়।

এমন অবস্থায় উপসাগরীয় দেশ কাতারে কূটনৈতিক সফরের মাধ্যমে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেন আঞ্চলিক সংকট সমাধানের চেষ্টা করছেন। তিনি কাতারের প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মেদ বিন আব্দুর রহমান আল থানির সাথে সাক্ষাৎ করেছেন হাসিমুখেই।

দেশটি এ সংকটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। হামাসের রাজনৈতিক শাখার কার্যালয় আছে কাতারে। আবার ইসরায়েলের সঙ্গে উপসাগরীয় এই দেশটির আলোচনারও একটি চ্যানেল আছে।

অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেন, ‘হামাস যেসব প্রস্তাব গত ৬ মে দিয়েছিল তার সাথে এবারের প্রস্তাব প্রায় অভিন্ন। এর পেছনেই পুরো বিশ্ব আছে। ইসরায়েলও তা গ্রহণ করেছে। এখন হামাস একটিই প্রতিক্রিয়া দিতে পারে এবং তা হলো ‘ইয়েস’।’

তার দাবি, ‘এর পরিবর্তে হামাস দুই সপ্তাহ অপেক্ষা করল এবং তারপর অনেকগুলো পরিবর্তনের প্রস্তাব করল এবং এর কয়েকটি তারা আগেও গ্রহণ করেছে। এর ফলে হামাস যে যুদ্ধ শুরু করেছে তা চলছে এবং আরও মানুষ দুর্ভোগ পোহাবে। ফিলিস্তিনিরা দুর্ভোগে পড়বে, আরও ইসরায়েলিরা দুর্ভোগে পড়বে।’

ব্লিংকেন অবশ্য হামাসের পরিবর্তনের দাবিগুলো ঠিক কী তা নিয়ে বিস্তারিত বলেননি। তবে হামাস গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় যে বিবৃতি দিয়েছে সেখানে ‘গাজায় আগ্রাসন পুরোপুরি বন্ধ’ এবং ইসরায়েলি সেনাদের পূর্ণাঙ্গ প্রত্যাহারের কথা বলা হয়েছে।

টিএম