ভারতে সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে জয়লাভ করেছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট এনডিএ। তবে বিজেপি এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। বিজেপির আসন সংখ্যা কমেছে, একইসঙ্গে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর প্রাপ্ত ভোটের সঙ্গে মোদির ঝুলিতে থাকা ভোটের ব্যবধানও অন্যান্য বারের তুলনায় কমেছে।

এমন অবস্থায় ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি ও দলটির অন্যতম শীর্ষস্থানীয় নেতা রাহুল গান্ধী বলেছেন, উত্তরপ্রদেশের বারাণসী আসনে নির্বাচনে লড়লে মোদিকে ২-৩ লাখ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করতো তার বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী।

বুধবার (১২ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু।

সংবাদমাধ্যম বলছে, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢরা বারাণসী থেকে ভোটে লড়লে ২ থেকে ৩ লাখ ভোটে নরেন্দ্র মোদিকে হারাতেন বলে দাবি করেছেন রাহুল গান্ধী। গান্ধী পরিবারের বিরুদ্ধে ‘পরিবারতন্ত্র’ নিয়ে মোদির সমালোচনার জবাবেও পাল্টা আক্রমণ করেছেন তিনি।

মোদি সরকারের নতুন মন্ত্রিসভায় ২০ জন নেতা-মন্ত্রীর ছেলেকে মন্ত্রী করার দিকে আঙুল তুলে রাহুল কটাক্ষ করে বলেছেন, ‘কথায় ও কাজে ফারাকের নামই নরেন্দ্র মোদি!’

মূলত লোকসভা ভোটে রায়বরেলীতে রাহুল গান্ধীর জয় ও আমেঠীতে স্মৃতি ইরানিকে হারিয়ে কংগ্রেসের কিশোরীলাল শর্মার জয়ের জন্য দুই লোকসভা আসনের মানুষকে ধন্যবাদ জানাতে মঙ্গলবার রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা রায়বরেলীতে গিয়েছিলেন। আর রাহুল কেরালার ওয়েনাড়ের মানুষকে ধন্যবাদ জানাতে যাবেন বুধবার।

রায়বরেলী ও ওয়েনাড়— দুই লোকসভা আসন থেকে জেতার পরে রাহুল কোনটি নিজের হাতে রাখবেন, আর কোনটি ছেড়ে দেবেন, তা এখনও স্পষ্ট করেননি। এর মধ্যে রাহুল যে আসন থেকে পদত্যাগ করবেন, সেখানকার উপনির্বাচনে প্রিয়াঙ্কাকে প্রার্থী করা হতে পারে বলে কংগ্রেস শিবিরে জল্পনা চলছে।

আর সেই জল্পনা উস্কে দিয়ে মঙ্গলবার রাহুল রায়বরেলীতে তার জয়ের কৃতিত্ব প্রিয়াঙ্কাকে দিয়ে বলেন, ‘দিনে মাত্র দু’ঘণ্টা ঘুমিয়ে আমার বোন রায়বরেলীতে পরিশ্রম করেছে।’

এরপরে প্রিয়াঙ্কাকে নিয়ে রাহুল ইঙ্গিতপূর্ণ হাসি দিয়ে বলেন, আমার একটা আইডিয়া আছে। সেটা আপনাদের পরে বলব। রায়বরেলী নিজের হাতে রাখতে পারেন বলে ইঙ্গিত দিয়ে রাহুল বলেন, শিগগিরই উন্নয়ন, ঐক্য ও মহব্বতের সঙ্কল্প নিয়ে আলোচনা করতে ফের এখানে আসব।

লোকসভা ভোটের ফল নিয়ে রাহুল বলেন, আমেঠী, রায়বরেলী-সহ উত্তরপ্রদেশ দেশকে রাস্তা দেখিয়েছে। তাই মোদিকে এখন সংবিধান তুলে মাথায় ঠুকতে হচ্ছে। উত্তরপ্রদেশের মানুষই মোদিকে এ কাজে বাধ্য করেছেন। অযোধ্যাতেও বিজেপি হেরেছে। কারণ রামমন্দিরের অনুষ্ঠানে আম্বানি-আদানি, বলিউড, ক্রিকেটাররা হাজির থাকলেও গরিব, অনগ্রসরদের সেখানে ডাকা হয়নি। আদিবাসী নারী রাষ্ট্রপতিকেও ডাকা হয়নি।

রাহুল বলেন, ‘বারাণসীতে নরেন্দ্র মোদি কোনও ক্রমে বেঁচে গেছেন।’

মূলত বারাণসীতে এবার মোদির জয়ের ব্যবধান পাঁচ লাখ থেকে কমে দেড় লাখ হয়েছে। রাহুল বলেন, ‘আমার বোন প্রিয়াঙ্কা লড়লে ২ থেকে ৩ লাখ ভোটে মোদিকে হারতে হতো।’ মোদি অবশ্য আগামী ১৮ তারিখ বারাণসী যাচ্ছেন।

২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে ৪ লাখ ৭৯ হাজার ভোটের ব্যবধানে জিতেছিলেন তিনি; যা এবার কমে ১ লাখ ৫২ হাজারে দাঁড়িয়েছে। দেশটির নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, এই লোকসভা নির্বাচনে বারাণসী থেকে মোদির বিপরীতে দাঁড়ানো কংগ্রেস প্রার্থী অজয় রাই পেয়েছেন ৪ লাখ ৬০ হাজার ৪৫৭টি ভোট। আর নরেন্দ্র মোদির ঝুলিতে রয়েছে ৬ লাখ ১২ হাজার ৯৭০টি ভোট।

ভোটের এই ব্যবধান এভাবেও বিশ্লেষণ করা যেতে পারে যে, লোকসভার ৫৪২টি (বাকি একটিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছেন বিজেপির মুকেশ কুমার চন্দ্রকান্ত দালাল) আসনের মধ্যে ২২৪টি আসনে জয়ী প্রার্থীরা প্রধানমন্ত্রী মোদির চেয়েও আরও কতটা বেশি ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন।

টিএম