প্রথমবারের মতো ভারতের ওড়িশা রাজ্যে সরকার গঠন করছে বিজেপি। সেই সরকার পরিচালনার দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে মোহনচরণ মাঝির কাঁধে। ওড়িশায় বিজেপির প্রথম মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন চারবারের এই বিধায়ক।

মোহন মাঝি আড়াই দশক ধরে বিজেপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন এবং তার বাবা ছিলেন সিকিউরিটি গার্ড। বুধবার (১২ জুন) রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেবেন মোহন।

আর সেই অনুষ্ঠানে হাজির থাকবেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মঙ্গলবার (১১ জুন) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৪ বছর ধরে ওড়িশায় ক্ষমতায় ছিল বিজেডির সরকার। মুখ্যমন্ত্রীর আসনে ছিলেন নবীন পট্টনায়ক। তবে ২০২৪ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ধরাশায়ী হয়েছে বিজেডি। আর বড় জয় নিয়ে প্রথমবারের জন্য রাজ্যটিতে ক্ষমতায় আসে বিজেপি শিবির।

পরে ওড়িশার নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে কেওনঝাড়ের চারবারের বিধায়ক মোহনচরণ মাঝিকে বেছে নেয় বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সেই সঙ্গে উপমুখ্যমন্ত্রী করা হচ্ছে পার্বতী পরীদা এবং কণকবর্ধন সিংহদেওকে। মঙ্গলবার বিকেলে দলের দুই কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক রাজনাথ সিং এবং ভূপেন্দ্র যাদবের উপস্থিতিতে নবনির্বাচিত বিজেপি বিধায়কদের বৈঠকে তাদের নাম ঘোষণা করা হয়।

এনডিটিভি বলছে, মোহনচরণ মাঝি ওড়িশার কেওনঝাড় জেলার রাইকালা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা পেশায় ছিলেন একজন নিরাপত্তারক্ষী। তিনি ১৯৯৭ সাল থেকে ২০০০ সালের মধ্যে গ্রামের প্রধান ছিলেন এবং ২০০০ সালে কেওনঝাড় থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হওয়ার আগে বিজেপির ওড়িশা এসটি (তফসিলি উপজাতি) মোর্চার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

৫২ বছর বয়সী এই রাজনীতিক তার আসন থেকে এই বছরের বিধানসভা নির্বাচনসহ চারবার জিতেছেন। সর্বশেষ নির্বাচনে তার ভোটের ব্যবধান ছিল ১১ হাজার ৫৭৭। তিনি আইন বিষয়ে ডিগ্রিধারী।

মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত মোহন মাঝি তার সাংগঠনিক দক্ষতার জন্য পরিচিত। তিনি ওড়িশার বিদায়ী বিধানসভার চিফ হুইপও ছিলেন।

মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত হওয়ার পর নিজের প্রথম প্রতিক্রিয়ায় মাঝি বলেন: ‘ভগবান জগন্নাথের আশীর্বাদে বিজেপি ওড়িশায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে এবং রাজ্যে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। আমি ওড়িশার সাড়ে চার কোটি মানুষকে ধন্যবাদ জানাতে চাই যারা পরিবর্তনের পক্ষে ভোট দিয়েছে।’

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, ৫২ বছর বয়সী আদিবাসী নেতা মোহন গত আড়াই দশক ধরে বিজেপির সঙ্গে যুক্ত। সৎ এবং পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির পাশাপাশি আগ্রাসী মেজাজের জন্যেও তিনি পরিচিত। গত বছর বিধানসভা অধিবেশন চলাকালীন বিজেডি সরকারের খাদ্যশস্য দুর্নীতির প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে স্পিকারের আসনে ডাল ছুড়ে তিনি সাসপেন্ড হয়েছিলেন।

উল্লেখ্য, লোকসভার পাশাপাশি এবার ওড়িশায় বিধানসভা ভোটও হয়েছিল। নির্বাচনে রাজ্যের ২১টি লোকসভা আসনের মধ্যে ২০টি আসনে জয় পেয়েছে বিজেপি শিবির। নবীনের বিজেডি কোনও আসনই পায়নি। অন্যদিকে কংগ্রেস একটি আসনে জিতেছে।

পাশাপাশি ১৪৭ আসনের ওড়িশা বিধানসভায় ৭৮টিতে জিতে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে বিজেপি। অন্যদিকে বিজেডি ৫১টি এবং কংগ্রেস ১৪টিতে জিতেছে। অন্যরা চারটিতে।

২৪ বছরের মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কের দল বিজেডিকে পরাস্ত করে এবারই প্রথম ভুবনেশ্বরের ক্ষমতা দখল করল বিজেপি।

টিএম