ফাইল ছবি

ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে পাস হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দেওয়া এই যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের পক্ষে ভোট পড়ে ১৪টি। নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যের মধ্যে ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিল কেবল রাশিয়া।

এদিকে নিরাপত্তা পরিষদে পাস হওয়া যুদ্ধবিরতির এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস। মঙ্গলবার (১১ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনি হামাস গোষ্ঠী সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ঘোষিত গাজায় যুদ্ধবিরতিকে সমর্থন করে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে পাস হওয়া প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে।

রেজোলিউশনটি গৃহীত হওয়ার পরপরই এক বিবৃতিতে হামাস বলেছে, ‘নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবে যা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তা গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, (ইসরায়েলি বাহিনীর) সম্পূর্ণ প্রত্যাহার, বন্দিদের বিনিময় (এবং) গাজার পুনর্গঠনকে তারা স্বাগত জানায়।’

এই রেজোলিউশনের নীতিগুলো ‘আমাদের জনগণ এবং প্রতিরোধ বাহিনীর দাবির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ’ উল্লেখ করে হামাস আরও বলেছে, আমাদের জনগণের দাবির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ এসব বিষয় বাস্তবায়নের জন্য মধ্যস্থতাকারীদের সাথে পরোক্ষ আলোচনায় যুক্ত হওয়ার পাশাপাশি সহযোগিতা করতেও তারা ইচ্ছুক।

নিরাপত্তা পরিষদে সোমবার আমেরিকার প্রস্তাবিত ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতির পক্ষে ভোট দেয় ১৪টি দেশ। অবশ্য আমেরিকার এ প্রস্তাবে ভোট দেয়নি রাশিয়া। মার্কিন এই প্রস্তাবে একটি ‘পূর্ণ ও সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতি’, হামাসের হাতে আটক বন্দিদের মুক্তি, নিহত বন্দিদের দেহাবশেষ ফেরত এবং ফিলিস্তিনি বন্দি বিনিময়ের শর্ত নির্ধারণ করা হয়েছে।

বাইডেনের এই প্রস্তাবে তিনটি পর্যায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রথম ধাপে বন্দি বিনিময়ের পাশাপাশি স্বল্পমেয়াদি যুদ্ধবিরতি হবে। দ্বিতীয় ধাপে ‘শত্রুতার স্থায়ীভাবে অবসান’ এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের পুরোপুরি প্রত্যাহারের কথা বলা হয়েছে।

তৃতীয় ধাপে যুদ্ধের কারণে ব্যাপকভাবে ধ্বংস হওয়া গাজার জন্য বহু বছরের পুনর্গঠন পরিকল্পনা রয়েছে। অবশ্য নিরাপত্তা পরিষদে পাস হওয়া যুদ্ধবিরতির এই প্রস্তাব নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি ইসরায়েল। 

মূলত গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব সত্ত্বেও ইসরায়েল অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে তার নৃশংস আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে।

উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।

এছাড়া ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।

মূলত ইসরায়েলি আক্রমণ গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজার সকলেই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন।

এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরায়েল ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে।

টিএম