টানা তৃতীয় মেয়াদে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে যাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদি। রোববার (৯ জুন) সন্ধ্যায় নয়াদিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি শপথ নেবেন। টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার করতে এবারই প্রথম মোদিকে জোট শরিকদের মুখাপেক্ষী হতে হয়েছে।

আর তাই শরিক দলগুলোর জন্য বিজেপি ঠিক কতটা ও কোন কোন মন্ত্রণালয় ছাড়বে, তা নিয়ে কৌতূহল রয়েছে অনেকেরই। যদিও মোদির নতুন মন্ত্রিসভায় প্রধান প্রধান পদগুলো বিজেপি নিজের হাতেই রাখবে বলে শোনা যাচ্ছে।

রোববার (৯ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, মোদির তৃতীয় সরকার কেমন হবে তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছেন এনডিএ নেতারা। শীর্ষস্থানীয় বেশ কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, এন চন্দ্রবাবু নাইডুর টিডিপি ও নীতিশ কুমারের জেডিইউ মোদি সরকারে নতুন মন্ত্রিসভায় সম্ভবত অন্তত একটি করে ক্যাবিনেট মন্ত্রী এবং একজন করে প্রতিমন্ত্রীর পদ পেতে পারে।

গতকাল প্রধানমন্ত্রী মোদির বাসভবনে ১১ ঘণ্টার ম্যারাথন বৈঠকের পর নতুন মন্ত্রিসভার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অমিত শাহ, বিজেপি প্রধান জেপি নাড্ডা এবং দলের জাতীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বিএল সন্তোষ ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

রোববার সন্ধ্যা ৭.১৫ মিনিটে শপথ নেবেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। এর আগে, তিনি তার বাসভবনে হবু মন্ত্রীদের জন্য চা-চক্রের আয়োজন করবেন বলে সূত্রগুলো জানিয়েছে। সূত্রগুলো বলছে, বিদায়ী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এবং সড়ক ও মহাসড়ক বিষয়ক মন্ত্রী নীতিন গড়করি নতুন মন্ত্রিসভায়ও তাদের পদ ধরে রাখতে পারেন।

অন্যান্য মিত্রদের মধ্যে এলজেপির চিরাগ পাসওয়ান (রাম বিলাস) জেডিএসের এইচডি কুমারস্বামী, আপনা দলের অনুপ্রিয়া প্যাটেল (সোনেলাল), আরএলডির জয়ন্ত চৌধুরী এবং হিন্দুস্তানি আওয়াম মোর্চার জিতন রাম মাঞ্জি মন্ত্রী পদ পেতে পারেন বলে সূত্র জানিয়েছে।

পশ্চিম দিল্লির সংসদ সদস্য কমলজিৎ সেহরাওয়াত, হরিয়ানার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খট্টর এবং মধ্যপ্রদেশের নেতা শিবরাজ সিং চৌহান এবং জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়াও মন্ত্রী পদ পেতে পারেন বলে সূত্রগুলো জানিয়েছে।

এছাড়া উত্তর-পূর্ব থেকে বিজেপির নেতা সর্বানন্দ সোনোয়াল এবং কিরেন রিজিজু মন্ত্রী হিসাবে ফিরতে পারেন। এর পাশাপাশি আরও কিছু নাম শোনা যাচ্ছে।

নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে টানা দুই মেয়াদ দেশ শাসন করার পর সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে বিজেপি ২৪০টি আসন পেয়েছে। এতে করে কট্টর হিন্দুত্ববাদী এই দলটি এবার এককভাবে ম্যাজিক ফিগার পার করা থেকে পিছিয়ে পড়েছে। আর এরপরই দলটি চন্দ্রবাবু নাইডু এবং নীতীশ কুমারের দ্বারস্থ হয়েছে। উভয় নেতাই জোট-রাজনীতির অভিজ্ঞ সেনা বলে পরিচিত এবং তারা কঠিন দর-কষাকষি চালাতে দক্ষ।

বিজেপি সূত্র অবশ্য আগেই এনডিটিভিকে বলেছিল, তারা নিরাপত্তা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার চারটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় অন্য কাউকে দেবে না। এই চারটি মন্ত্রণালয় হচ্ছে- স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা, অর্থ এবং পররাষ্ট্র। এছাড়াও মোদির প্রথম ও দ্বিতীয় মেয়াদের সরকারে ভারতে সড়ক যোগাযোগের সম্প্রসারণ অনেক প্রশংসা অর্জন করেছে। আর তাই এই সফলতার পেছনের ব্যক্তি নীতিন গড়করি এবারও তার মন্ত্রিত্ব ধরে রাখতে পারেন।

অবশ্য ১৬ আসনে জয় পাওয়া টিডিপি এবং ১২ আসনে জয় পাওয়া জেডিইউ মোদির নতুন সরকারে বড় ভূমিকার দাবি করেছে বলে জানা গেছে। তবে তাদের সেই দাবি পূরণ হয়েছে কিনা তা প্রধানমন্ত্রী মোদির নতুন মন্ত্রিসভা ঘোষণা হলেই কেবল দেখা যাবে।

এনডিটিভি বলছে, জেডিইউ থেকে সাবেক দলীয় প্রধান রাজীব রঞ্জন সিং এবং রাজ্যসভার সংসদ সদস্য ও বিহারের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী কার্পুরি ঠাকুরের ছেলে রাম নাথ ঠাকুর মন্ত্রী পদ পেতে পারেন।

অন্যদিকে টিডিপি সংসদ সদস্য ড. চন্দ্র সেখর পেমমাসানি এবং রাম মোহন নাইডু কিঞ্জারাপু মোদির নতুন সরকারে মন্ত্রী পদ পাচ্ছেন বলে দলটির নেতা জয় গাল্লা সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে ঘোষণা করেছেন।

উল্লেখ্য, এবার ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি কোনও দল। বিজেপি আটকে গেছে ২৪০ আসনে। তাই সরকার গড়তে নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহদের ভরসা করতে হচ্ছে এনডিএর শরিকদের ওপর।

প্রাপ্ত আসন সংখ্যার নিরিখে এনডিএর শরিকদের মধ্যে বিজেপির পরই রয়েছে তেলুগু দেশম পার্টি (টিডিপি)। তাদের ঝুলিতে রয়েছে ১৬টি আসন। তৃতীয় স্থানে নীতীশ কুমারের জনতা দল ইউনাইটেড (জেডিইউ)। তারা পেয়েছে ১২টি আসন।

এনডিএ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও ২০১৪ এবং ২০১৯ সালের মতো এ বার বিজেপি একক ভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। আর তাই সরকার গঠনের ক্ষেত্রে যদি টিডিপি, জেডিইউয়ের মতো দল বেঁকে বসে, তবে চাপে পড়বেন মোদি। তারা যাতে জোট ছেড়ে বেরিয়ে না যায়, তা নিয়েও তৎপর বিজেপি।

টিএম