জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন ওমর আবদুল্লা, তাকে এবার লোকসভা নির্বাচনে হারিয়েছেন শেখ আবদুল রশিদ। তা-ও আবার জেলে বসে। শেখ আবদুল রশিদ জিতেছেন প্রায় চার লক্ষ ভোটে। 

কত খরচ করেছেন প্রচারে?

জম্মু ও কাশ্মীরের বারামুল্লা কেন্দ্রে প্রার্থী হয়েছিলেন জে অ্যান্ড কে ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর। সেখানে তাকে প্রায় চার লক্ষ ভোটে পরাজিত করেছেন রশিদ। নির্দল প্রার্থী হয়ে। যদিও এই প্রথম নয়, এর আগেও ভোটে লড়ে জিতেছিলেন রশিদ। তবে জেলে বসে নয়।
জম্মু ও কাশ্মীরের বারামুল্লা কেন্দ্রে প্রার্থী হয়েছিলেন জে অ্যান্ড কে ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর। সেখানে তাকে প্রায় চার লক্ষ ভোটে পরাজিত করেছেন রশিদ। 

রশিদের ছেলে আব্রার রশিদ বলেন, এই জনাদেশ মানুষের জয়। 

তার বাবার প্রচারে কত টাকা খরচ করা হয়েছে, তিনি তা-ও জানিয়েছেন। মাত্র ২৭ হাজার টাকা খরচ করা হয়েছে রশিদের প্রচারে। বাবার হয়ে প্রচারের দায়িত্ব সামলেছিলেন ২২ বছরের ছেলেই।

গণনা তখনও বাকি, নিজের হার স্বীকার করে নেন ওমর। জানান, ভোটারেরা নিজেদের মত‌ামত দিয়েছেন। গণতন্ত্রে এটাই সব কিছু। তিনি বিপক্ষকে অভিনন্দনও জানান।

এক্স (সাবেক টুইটার)-এ ওমর লিখেছেন, আমি বিশ্বাস করি না যে এই জয়ের ফলে তাড়াতাড়ি জেল থেকে মুক্তি পাবেন ইঞ্জিনিয়ার রশিদ। উত্তর কাশ্মীরের মানুষের জনপ্রতিনিধি পাওয়ার যে অধিকার রয়েছে, তা-ও পূরণ হবে না। তবে ভোটারেরা মতদান করেছেন, গণতন্ত্রে সেটাই আসল কথা।’’

২০১৯ সালের ৯ অগস্ট থেকে তিহাড় জেলে বন্দি রয়েছেন শেখ রশিদ ওরফে ইঞ্জিনিয়ার রশিদ। প্রায় পাঁচ বছর হয়ে গেল। তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের খরচ জোগানোর অভিযোগ রয়েছে। 

ছেলে আব্রার জানিয়েছেন, তার বাবার ভোটে জয় প্রমাণ করে দেয় যে, আসলে তিনি নিরপরাধ। তাকে দ্রুত জেল থেকে মুক্তি দেওয়ারও দাবি জানিয়েছেন।

আব্রার জানিয়েছেন, যখন ভোটে লড়ার কথা তার বাবা প্রথম ঘোষণা করেছিলেন, পাশে প্রায় কেউই ছিলেন না। ধীরে ধীরে বহু মানুষ এগিয়ে আসেন। পাশে দাঁড়ান। ক্রমে তিনি যখন মিছিল করতে শুরু করেন, সঙ্গে হাঁটতে থাকেন হাজার হাজার মানুষ।

রশিদের ভোটপ্রচারে খরচ হয়েছে ২৭ হাজার টাকা। আব্রার জানিয়েছেন, তার গাড়িতে তেল ভরার জন্যই এই খরচ হয়েছে। গাড়ি চেপে তিনি বারামুল্লা কেন্দ্র প্রায় চষে ফেলেছেন। 

আর বাকি খরচ? 

আব্রার জানিয়েছেন, হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবী প্রচারে অনুদান দিয়েছেন। তার ফলে এই বিপুল জয়। 

জম্মু ও কাশ্মীর আওয়ামী ইত্তেহাদ পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হলেন রশিদ। ২০০৮ এবং ২০১৪ সালে জম্মু ও কাশ্মীরের লাঙ্গাটে বিধানসভা কেন্দ্র থেকে ভোটে জিতে বিধায়ক হয়েছিলেন। ২০১৯ সালেও লোকসভা নির্বাচনে লড়েছিলেন। তবে হেরেছিলেন। ওই তিনটে নির্বাচনেও নির্দল হয়েই লড়েছিলেন তিনি।

পেশায় ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন রশিদ। ২০০৮ সালে চাকরি ছেড়ে দেন তিনি। সেই কারণেই নাম হয় ইঞ্জিনিয়ার রশিদ। এরপর শুরু করেন বিধানসভা ভোটের প্রচার। মাত্র ১৭ দিন প্রচার করে জিতেছিলেন ভোটে। 

২০১৯ সালে এনআইএ-র হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তিনি। বেআইনি কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইনে ওই প্রথম কোনও রাজনৈতিক নেতা গ্রেপ্তার হন। সেই থেকে তিনি জেলে। দুই ছেলে আব্রার এবং আসরারই সামলেছেন প্রচার। তাতেই বাজিমাত। 

কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, রশিদ কি সংসদে শপথগ্রহণ করতে পারবেন? যদিও শপথগ্রহণ করা তার সাংবিধানিক অধিকার, কিন্তু যেহেতু তিনি বন্দি, তাই বাধাও রয়েছে।

শপথগ্রহণের জন্য রশিদকে আগে জেল কর্তৃপক্ষের অনুমতি চেয়ে চিঠি দিতে হবে। কর্তৃপক্ষের নজরদারিতে সংসদে গিয়ে শপথ নিতে পারবেন তিনি। তবে তার পর আবার জেলে ফিরতে হবে তাকে।

শপথগ্রহণের পর রশিদকে লোকসভার স্পিকারকে লিখিতভাবে জানাতে হবে যে, তিনি সংসদে উপস্থিত থাকতে পারবেন না। অনুপস্থিত হিসাবে তিনি সংসদের সদস্য থাকতে পারেন কি না, ভোটাভুটির মাধ্যমে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।

তবে রশিদ যদি দোষী সাব্যস্ত হন এবং তাকে দু’বছর বা তার বেশি সময় জেলে থাকতে হয়, তা হলে সঙ্গে সঙ্গে সাংসদ পদ হারাবেন তিনি। এমনটাই নিয়ম।

এমএসএ