গত মঙ্গলবারই পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভার ৫৪৩ জন এমপিকে নির্বাচিত করেছে ভারতীয় জনতা। ভোটের ফল বলছে, সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় জাদুসংখ্যার অনেকটা আগেই থামতে হয়েছে বিজেপিকে।

তবে বিজেপির নেতৃত্বাধীন জোট এনডিএ’র শরিক দলগুলোর সহায়তায় সরকার গঠন করতে চলেছে পদ্মশিবিরই। এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে চলেছে নীতীশ কুমারের জেডিইউ এবং চন্দ্রবাবু নাইডুর টিডিপি। এনডিএ পেয়েছে ২৯৩টি আসন আর বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ পেয়েছে ২৩২টি আসন।

এই লোকসভা নির্বাচনে যেমন বহু তারকা প্রার্থী জিতেছেন, তেমন হারের মুখও দেখেছেন অনেকে। সম্প্রতি অবশ্য ভারতে অন্য পেশা থেকে সক্রিয় রাজনীতিতে আসা এবং ভোটে দাঁড়ানোর ঘটনা বেড়েছে।

অনেকেই মনে করেন, বিকল্প জীবিকার সন্ধানেই অনেকে অন্য পেশা ছেড়ে লোকসভার এমপি যেতে চান। জনমানসে কৌতূহল রয়েছে সাংসদদের বেতন, প্রাপ্য সুযোগসুবিধা নিয়েও। তবে এই বিষয়ে রটনা যত বেশি, ঘটনা ততটাও নয়।

মাসে একজন এমপির মূল বেতন ১ লাখ রুপি। তবে কয়েক বছর আগে পর্যন্তও লাখের অঙ্কে বেতন পেতেন না দেশের সাংসদেরা।

২০১৮ সালে পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভা এবং নিম্নকক্ষ লোকসভার সদস্যদের মাসিক বেতন বৃদ্ধি করা হয়। বেতনবৃদ্ধির কারণ হিসাবে মুদ্রাস্ফীতি এবং মূল্যবৃদ্ধিকে দায়ী করা হয়েছিল।

মূল বেতনের পাশাপাশি সাংসদেরা একাধিক ভাতা পান। লোকসভার এমপিরা তাদের নির্বাচনীয় এলাকায় পরিষেবা দেওয়ার জন্য প্রতি মাসে ৭০ হাজার রুপি ভাতা পান।

মূলত নিজের সংসদীয় এলাকায় দপ্তর খোলা এবং সেখানে নিযুক্ত কর্মীদের বেতন দেওয়ার জন্যই ওই ভাতা পেয়ে থাকেন একজন সাংসদ। এমপির দপ্তরের কাজ সাধারণ মানুষের সুবিধা-অসুবিধার কথা শোনা এবং প্রয়োজনে সেগুলোর সমাধান করা।

এ ছাড়াও লোকসভার একজন সাংসদ নিজস্ব দপ্তর চালানোর জন্য মাসে ৬০ হাজার রুপি ভাতা পেয়ে থাকেন। এই টাকায় তিনি নিজের দপ্তরে কর্মী নিয়োগ করতে পারেন। এই কর্মীরা মূলত সাংসদের অনুপস্থিতিতে বিভিন্ন জরুরি ফোন ধরার কাজ করেন এবং দপ্তর সচল রাখেন।

যখন লোকসভঅ অধিবেশন চলে কিংবা কোনও পার্লামেন্টারি স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়, তখন উপস্থিতির জন্য এমপিরা দিনে ২০০০ রুপি করে ভাতা পান। মূলত রাজধানীতে থাকা-খাওয়া সমেত দৈনন্দিন ব্যয় নির্বাহ করতে এই টাকা দেওয়া হয়।

একজন লোকসভা সাংসদ দেশের মধ্যে বছরে ৩৪ বার বিনামূল্যে বিমান সফর করতে পারেন। বিনামূল্যের বিমান সফরে সাংসদের সঙ্গে থাকতে পারেন তাঁর নিকটাত্মীয়েরাও।

তা ছাড়াও সারা বছর বিনামূল্যে ট্রেনের প্রথম শ্রেণির কামরার সওয়ারি হতে পারেন এমপিরা। ব্যক্তিগত কাজে কোথাও গেলেও বিনামূল্যে এই ট্রেন পরিষেবা মেলে। নিজের লোকসভা কেন্দ্রে গাড়ি নিয়ে ঘুরলে জ্বালানি তেলের খরচও দিয়ে দেওয়া হয় এমপিদের।

পার্লামেন্টে উপস্থিত থাকার জন্য এমপিদের দিল্লিতে থাকতে হয়। প্রত্যেক এমপিকে রাজধানীর অভিজাত এলাকায় পাঁচ বছরের জন্য বাংলো বাড়ি দেওয়া হয়। তবে বাড়িটির আকার, অবস্থান কেমন হবে, তা নির্ভর করে একজন সাংসদ কত বার নির্বাচিত হয়েছেন, তার উপরে।

প্রথম বার পার্লামেন্টে যাওয়া এমপিদের তুলনায় একাধিক বার জয়লাভ করা এমপিদের বাংলো বাড়ির আকার বড়। দিল্লির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় থাকার সুযোগ পান প্রবীণ সাংসদেরা।

যারা কোনও কারণে সরকারি বাংলো কিংবা হস্টেলে থাকতে চান না, তাদের বাড়িভাড়া বাবদ মাসে ২ লাখ রুপি দেওয়া হয়।

একজন সাংসদ এবং তার নিকটাত্মীয়েরা সরকারি স্বাস্থ্য প্রকল্পের আওতায় বিনামূল্যে চিকিৎসা করাতে পারেন। সে ক্ষেত্রে তাদের দেশের যে কোনও সরকারি হাসপাতাল এবং প্রকল্পের আওতাধীন নির্দিষ্ট কিছু বেসরকারি হাসপাতালে যেতে হয়।

প্রতি বছর শুধু ফোন খরচ বাবদ একজন সাংসদকে দেড় লাখ টাকা দেওয়া হয়। তা ছাড়াও সাংসদ তার বাড়ি এবং দপ্তরে বিনামূল্যে উচ্চ গতির ইন্টারনেট পরিষেবা পেয়ে থাকেন।

লোকসভা এমপিরা বছরে ৫০ হাজার ইউনিট পর্যন্ত বিনামূল্যে বিদ্যুৎ পরিষেবা পেয়ে থাকেন। তা ছাড়াও ওই একই সময়ের মধ্যে একজন এমপি বিনামূল্যে চার হাজার লিটার পানি পেয়ে থাকেন।

প্রাক্তন এমপিরা প্রতি মাসে ২৫ হাজার রুপি পেনশন হিসাবে পেয়ে থাকেন। তবে সাংসদের কার্যকালের মেয়াদ এক বছরের জন্য বাড়লেও পেনশনের পরিমাণ মাসে ২০০০ রুপি করে বৃদ্ধি পায়।

সূত্র : আনন্দবাজার

এসএমডব্লিউ