ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে নিজেদের যোদ্ধাবাহিনীর অর্ধেক সদস্যকে হারিয়েছে উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাস। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের কর্মকর্তারা রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

কর্মকর্তারা বলেছেন, গত ৭ অক্টোবর সংঘাত শুরুর আগে হামাসের সামরিক শাখায় ছিল ২০ থেকে ২৫ হাজার যোদ্ধা। আট মাস পর বর্তমানে গোষ্ঠীটির যোদ্ধা বাহিনীর সদস্যসংখ্যা নেমে এসেছে ৯ থেকে ১২ হাজারে। এই সময়সীমায় অবশ্য ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর সদস্যরাও নিহত হয়েছেন, তবে তাদের সংখ্যা মাত্র ৩০০ বা তার কিছু বেশি।

জনবল কমে যাওয়ায় এখন রণকৌশলে পরিবর্তন এনেছে গোষ্ঠীটি। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এখন আর সরাসরি সম্মুখ সমরে আসছেন না হামাস যোদ্ধারা। তার পরিবর্তে তারা অ্যামবুশ এবং ইম্প্রোভাইজড বোমার ওপর নির্ভর করছেন বেশি।

গাজায় বসবাসকারী ফিলিস্তিনিদেরও অনেকে বলেছেন, হামাসের এই কৌশল পরিবর্তনের ব্যাপারটি নজরে পড়েছে তাদেরও। গাজার বাসিন্দা ওয়াসিম ইব্রাহিম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘যুদ্ধের প্রথম দিকের মাসগুলোতে হামাসের যোদ্ধারা মুখোমুখী যুদ্ধে নামতেন, ইসরায়েলি হামলাকে প্রতিহত করার পাশাপাশি অনেক সময় ইসরায়েলি বাহিনীকে পিছু হটতে বাধ্যও করতেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ইসরায়েলি বাহিনী আসছে— এমন খবর পাওয়া মাত্র তারা তৎপর হতেন।’

‘কিন্তু গত বেশ কিছুদিন ধরে হামাস যোদ্ধাদের রণকৌশলে পরিবর্তন এসেছে। এখন তারা ইসরায়েলি বাহিনীকে রণক্ষেত্রে প্রবেশ করতে দেন এবং মুখোমুখী সংঘাতের পরিবর্তে অ্যামবুশ ধরনের হামলা চালান।’

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বাহিনীর একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে রয়টার্সকে বলেন, ‘আমদের ধারণা, মুখে যা ই বলুক— হামাস এই যুদ্ধকে আরও দীর্ঘায়িত করতে চায়। এ কারণে তারা এই কৌশল নিয়েছে।’

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘যোদ্ধাদের সংখ্যা কমলেও আপাতত অস্ত্র-গোলাবারুদের অভাবে ভুগছে না হামাস। গোপন সুড়ঙ্গ ও অন্যান্য চোরাপথে তাদের কাছে অস্ত্র আসছে।’

এ ইস্যুতে আরও তথ্য জানতে হামাসের মুখপাত্রদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল রয়টার্স, কিন্তু তাদের কেউই কথা বলতে রাজি হননি।

তবে মার্কিন ওই কর্মকর্তার অনুমান যদি সত্যি হয়, সেক্ষেত্রে যে ব্যাপারটি স্পষ্ট হয়ে উঠছে তা হলো— গাজায় দীর্ঘ দিন যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চায় ইসরায়েল এবং হামাস উভয়ই। কারণ গত সপ্তাহে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা জাশি হানেগবি বলেছিলেন, ২০২৪ সাল শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত গাজায় যুদ্ধ বন্ধ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা আপাতত নেই।

মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, হামাস যে কৌশল নিয়েছে, তাতে সীমিত জনবল নিয়ে আরও কয়েক মাস যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারবে গোষ্ঠীটি।

গত বছর ৭ অক্টোবর ইসরয়েলের সীমান্তে হামাস যোদ্ধাদের অতর্কিত হামলা এবং সেখানকার ভূখণ্ডে ঢুকে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে অন্তত ১ হাজার ২০০ সামরিক-বেসামরিক মানুষকে হত্যার মধ্যে দিয়ে শুরু হয় এই যুদ্ধ। হত্যার পাশাপাশি অন্তত ২৪২ জনকে জিম্মি হিসেবে গাজায় ধরে নিয়ে গিয়েছিল হামাস যোদ্ধারা।

অতর্কিত এই হামলার জবাবে ওই দিনই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী, যা এখনও চলছে। ভয়াবহ এই অভিযানে গাজায় ৩৬ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন; নিহতদের ৫৬ শতাংশই নারী এবং শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন ৭৫ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি।

সূত্র : রয়টার্স

এসএমডব্লিউ