ভারতের গত লোকসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশে বিজেপি যেখানে ৮০টি আসনের মধ্যে ৬২টি জিতেছিল, এবার সেখানে মাত্র ৩৩টি আসন জিতেছে দলটি। আর এরপরই শুরু হয়েছে বিবাদ— অমিত শাহ না যোগী আদিত্যনাথ, কার কারণে এই ভরাডুবি।  

যোগী আদিত্যনাথ ও অমিত শাহ— দুই শিবিরের নেতারাও একে অপরকে দুষছেন। দিল্লিতে তলব করা হয়েছে উত্তরপ্রদেশ বিজেপির রাজ্য সভাপতি ভূপেন্দ্র চৌধরিকে।  

উত্তরপ্রদেশ ছাড়াও বিজেপি খারাপ ফল করেছে বারাণসী ও অযোধ্যায়। গতবার যেখানে বারাণসীতে নরেন্দ্র মোদির জয়ের ব্যবধান ছিল পাঁচ লাখের কাছাকাছি, এবার তা নেমে এসেছে দেড় লাখের কাছাকাছিতে। অযোধ্যায় রামমন্দির অর্ধনির্মিত অবস্থাতেই ভোটের আগে উদ্বোধন করে দিয়ে বিজেপি গোটা দেশে জয়ের স্বপ্ন দেখছিল। রামমন্দির যে লোকসভা কেন্দ্রের আওতায়, সেই ফৈজাবাদেই বিজেপি সমাজবাদী পার্টির কাছে হেরেছে।  

এদিকে যোগী আদিত্যনাথের মতো প্রভাবশালী মুখ্যমন্ত্রী থাকতেও উত্তরপ্রদেশে ভরাডুবির কারণ কী তা নিয়ে বিশ্লেষণ চলছে। যোগীর ঘনিষ্ঠ নেতারা বলছেন, মুখ্যমন্ত্রী জেলা স্তরের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে যেসব নেতাদের প্রার্থী করার সুপারিশ করেছিলেন, অমিত শাহ তা খারিজ করে দিয়ে বহু ক্ষেত্রে নিজের পছন্দমতো নেতাদের প্রার্থী করেছেন।  

কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব আবার যোগীর দিকেই আঙুল তুলছে। কারণ, অযোধ্যায় মন্দিরের পরিকাঠামোর জন্য জমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ, পুরনো দোকান ভেঙে নতুন দোকান তৈরি করতে ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণ নিয়ে অযোধ্যার স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল। এই ক্ষোভকে কাজে লাগানোর পাশাপাশি জাতপাতের সমীকরণের ফায়দা তুলতে সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদব দলিত পাসি সম্প্রদায়ের নেতা অবধেশ প্রসাদকে প্রার্থী করেছিলেন। তিনিই বাজিমাত করেছেন। 

একইভাবে বারাণসীর পুরো দায়িত্বও টিম নরেন্দ্র মোদির হাতে ছিল বলে যোগীর ঘনিষ্ঠ নেতাদের দাবি। তাদের যুক্তি— প্রথম থেকেই মোদি গুজরাটের নেতাদের নিয়ে এসে বারাণসীর দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তাদের সঙ্গে গুজরাটের ব্যবসায়ীরাও বারাণসীতে এসে প্রভাব বিস্তার করেন। তারাই সব প্রকল্পের মুনাফা কুড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছেন বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের মনে ক্ষোভ তৈরি হয়। সর্বোপরি বারাণসীতে কাশী বিশ্বনাথ করিডর তৈরি নিয়েও পুরনো বারাণসীর বাসিন্দাদের মধ্যে প্রবল ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল। মোদির লোকসভা কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা গুজরাটের নেতারা সে দিকে নজর দেননি।

এনএফ