(বাঁ থেকে) কে চন্দ্রবাবু নাইডু, নরেন্দ্র মোদি এবং নীতিশ কুমার

১৮ তম নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর বিজেপির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) জোটের শরিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আজ বুধবার রাজধানী নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে হয়েছে এই বৈঠক।

নরেন্দ্র মোদির পাশাপাশি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিজেপির অপর দুই শীর্ষ নেতা অমিত শাহ এবং জে পি নাড্ডা।

এনডিএ জোটের সব শরিক দলের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত হয়েছিলেন বৈঠকে। তবে বিজেপির একটি সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে অন্যান্য শরিকদের তুলনায় বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার এবং অন্ধ্র প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রবাবু নাইডুর দিকে বিশেষ মনযোগ ছিল নরেন্দ্র মোদির। এমনকি বৈঠকের গোটা সময় মোদির পাশে ছিলেন এ দুই নেতা।

বিজেপির সূত্র জানিয়েছে, দু’টি কারণে কে চন্দ্রবাবু নাইডু এবং নীতিশ কুমারের প্রতি বিশেষভাবে মনযোগী বিজেপির হাইকমান্ড— প্রথমত, ২০১৪ এবং ২০১৯ সালের নির্বাচনের তুলনায় এবারের নির্বাচনে বিজেপির ফলাফল অনেকটা হতাশাজনক এবং দ্বিতীয়ত, নীতিশ ও নাইডু জোট ছাড়ছেন বলে ছড়িয়ে পড়া গুঞ্জন।

ভারতের পার্লামেন্ট লোকসভার মোট আসন ৫৪৩টি। কোনো দল বা জোট যদি সরকার গঠন করতে চায়, তাহলে সেই দল বা জোটকে পার্লামেন্টে ন্যূনতম ২৭২টি আসন নিশ্চিত করতে হবে।

২০১৪ সালের নির্বাচনে বিজেপি এককভাবে জয়ী হয়েছিল ২৮২টি আসনে। পরের বার ২০১৯ সালের নির্বাচনে বিজেপির ফলাফল ছিল আরও ভালো— ৩০৩ আসনে জয়। ফলে গত দু’বার সরকার গঠন টিকিয়ে রাখতে জোট শরিকদের তেমন গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন পড়েনি বিজেপির।

তবে এবারের চিত্র ভিন্ন। এবার ২৪০টি আসনে জয় পেয়েছে বিজেপি, আর জোট শরিক দলগুলো সম্মিলিতি ভাবে জয়ী হয়েছে ৫৩টি আসনে। তাই এককভাবে সরকার গঠন না করতে পারলেও জোটগতভাবে সরকার গঠনে কোনো বাধা নেই বিজেপির।

এদিকে, গতকাল নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পরপরই গুঞ্জন উঠেছিল যে নীতিশ কুমার ও কে চন্দ্রবাবু নাইডু এনডিএ জোট ছেড়ে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইনডিয়া জোটে যোগ দিচ্ছেন। জোটের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই দু’জনের যে অতীত রেকর্ড, তাতে এমন গুঞ্জন উঠলে তা ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেওয়া সম্ভব নয় বিজেপির পক্ষে।

বস্তুত, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার ‘ডিগবাজি’ বা দল বদলের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। ২০১৯ সালের নির্বাচনে বিজেপির সঙ্গে এনডিএ জোটে থাকলেও পরে রাজ্য রাজনীতিতে সুবিধার জন্য বিহারের আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল আরজেডির সঙ্গে জোট করেন নীতিশ। আরজেডি ব্যাপকভাবে বিজেপি বিরোধী দল।

আরজেডির সঙ্গে জোটের সুবাদে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন জোট ইনডিয়াতেও যোগ দিয়েছিলেন নীতিশ। এমনকি ইনডিয়ার অন্যতম মুখপাত্র হিসেবে মনোনীতও হয়েছিলেন।

কিন্তু কয়েক মাস পরেই ইনডিয়া জোট থেকে বেরিয়ে ফের পুরোনো জোট এনডিএতে ফিরে আসেন নীতিশ। বিহারের এই বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদের অতীতেও এমন দলবদলের রেকর্ড রয়েছে। তাই নীতিশ সম্পর্কে বিজেপি হাইকমান্ড বেশ সতর্ক।

অন্ধ্র প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রবাবু নাইডু বিজেপির গুরুত্বপূর্ণ জোটশরিক হওয়া সত্ত্বেও দুর্নীতির অভিযোগে গত এনডিএ সরকারের আমলে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার মাধ্যমে বেশ হয়রানির স্বীকার হয়েছেন। তাকে কারাগারেও যেতে হয়েছিল।

ফলে বিজেপির ওপর ‘প্রতিশোধ’ নিতে এবং দলটিকে চাপে ফেলতে তিনি এনডিএ ছেড়ে ইনডিয়া জোটে যোগ দিতে পারেন— এমন গুঞ্জন উঠেছিল।

এসব গুঞ্জনকে আমলে নিয়েই জোটের দুই নেতাকে কাছে টেনেছেন মোদি। বিজেপি সূত্র জানিয়েছে, দলের হাইকমান্ডের এখন প্রধান লক্ষ্য এনডিএ জোটকে অক্ষত রাখা।

বিহারের রাজ্য সরকারে ক্ষমতাসীন নীতিশ সরকারের রাজনৈতিক দল জনতা দল ইউনাইটেড ( জেডিইউ) এবারের লোকসভা নির্বাচনে ১২টি আসনে জিতেছে। অন্যদিকে অন্ধ্র প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রবাবু নাইডুর দল তেলেগু দেশম পার্টি (টিডিপি) এবারের নির্বাচনে রাজ্যে ১৬টি আসনে জয় পেয়েছে।

সূত্র : এনডিটিভি

এসএমডব্লিউ