কপাল পুড়ছে বিজেপির?
বিজেপির ভাগ্য ঝুলছে নীতিশ-নাইডুতে
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের অর্ধেকের বেশি ভোট গণনায় বিজেপির একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ার ইঙ্গিত মেলায় দেশটির রাজনীতিতে এখন ভাঙা-গড়ার ব্যাপক হিসেব-নিকেশ চলছে। বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটে ভাঙনেরও ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। ফলে বিজেপির জোট সরকার গঠনের হিসেব উল্টে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর এই হিসেব-নিকেশে ভারতে ডিগবাজি দেওয়া রাজনীতিক হিসেবে বেশি পরিচিত বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারের পাশাপাশি অন্ধ্র প্রদেশের তেলেগু দেশম পার্টির চন্দ্রবাবু নাইডু মূল ক্রীড়নকের ভূমিকা পালন করতে পারেন।
বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার ও তেলেগু দেশম পার্টির প্রেসিডেন্ট চন্দ্রবাবু নাইডু মঙ্গলবার বিকেলে ‘‘প্রতিহিংসার রাজনীতিতে নিজেদের পছন্দ-অপছন্দ নিয়ে আলাপ করেছেন বলে দাবি করেছে রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি)। হঠাৎ করে তাদের এই আলোচনা বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট থেকে তাদের বেরিয়ে যাওয়ার দিকে নিয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার আরজেডির জাতীয় মুখপাত্র মনোজ কুমার ঝা জনতা দলের (ইউনাইটেড) প্রধান নীতিশ কুমারের করা একটি ভবিষ্যদ্বাণীর স্মরণ করেছেন। কিছুদিন আগে নীতিশ কুমার বলেছিলেন, ২০২৪ সালে যারা ক্ষমতায় আসবে, তাদের ক্ষমতাচ্যুত করা হবে। আর তিনি এই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোট ইনডিয়া গঠনের প্রচেষ্টার সময়। যদিও পরবর্তীতে ইনডিয়া জোট থেকে বেরিয়ে যান বিহারের এই মুখ্যমন্ত্রী।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মনোজ কুমার ঝা বলেছেন, ‘‘আমরা অতীতে নীতিশ কুমার ও চন্দ্রবাবু নাইডু— উভয়ের সাথেই জোটবদ্ধ ছিলাম। আমরা জানি, তারা প্রতিহিংসার রাজনীতি অপছন্দ করেন। আর বিজেপি অবস্থান প্রতিহিংসার রাজনীতির পক্ষে। নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতা থেকে বিদায়ের পথে আছেন বলে মনে হচ্ছে। এই দুই নেতা কেন্দ্রে প্রহরী পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন বলে আমরা প্রত্যাশা করছি।’’
দলের জাতীয় সভাপতি লালু প্রসাদ যাদব ও তার উত্তরাধিকারী তেজস্বী যাদবসহ দলের নেতারা নীতিশ কুমারের সাথে যোগাযোগ করেছেন কি না, জানতে চাইলে মনোজ কুমার ঝা কৌশলী জবাব দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘তার সাথে যাদের যোগাযোগ করতে হবে, ইতোমধ্যে তারা তার সাথে কথা বলেছেন। আমাদের নেতা তেজস্বী যাদব কিছু দিন ধরে বলে আসছেন যে, নীতিশ কুমার ৪ জুনের দিকে বড় সিদ্ধান্ত নেবেন।’’
তিনি এটাও স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘‘আমি নীতিশ কুমার বা চন্দ্রবাবু নাইডুর কাছে কোনো আবেদন জানাচ্ছি না। তাদের সম্পর্কে যে আমার যে বোঝাপড়া তা থেকে আমি কেবল আমার আশা প্রকাশ করছি।’’
নীতিশ কুমারের জনতা দল (ইউনাইটেড) বিহারে লোকসভা নির্বাচনে প্রত্যাশার তুলনায় ভালো ফল করেছে। সেখানকার ১৬টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ১৪টিতে এগিয়ে আছে নীতির জনতা দল। বিপরীতে ১৭ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা বিজেপি জনতা দলের তুলনায় পাঁচ আসনে পিছিয়ে আছে। কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইনডিয়া জোট বিহারে লোকসভার ৪০টি আসনের মধ্যে এগিয়ে আছে ৮টিতে। মনোজ কুমার ঝায়ের আরজেডি পেয়েছে চার আসন। ফলে এই রাজ্যের দলগুলো যে জোট গঠনের দিকে হাঁটবে সে বিষয়ে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কথা বলেছেন মনোজ কুমার ঝা।
এছাড়া এনডিএ জোটের অন্যতম শরিক অন্ধ্র প্রদেশের চন্দ্রবাবু নাইডুর তেলেগু দেশম পার্টি। অন্ধ্র প্রদেশে লোকসভার ২৫ আসনের মধ্যে এখন পর্যন্ত ১৬ আসনে এগিয়ে আছে চন্দুবাবু নাইডুর তেলেগু দেশম পার্টি। আর ভারতীয় জনতা পার্টি ৩, যুবজন শ্রমিক রাইঠু কংগ্রেস পার্টি (ওয়াইএসআরসিপি) ৪ ও জনসেনা পার্টি ২টি আসনে এগিয়ে আছে।
তিনি বলেন, ‘‘আমরা অত্যন্ত ধীর গতির গণনার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছি। বিহারের অধিকাংশ আসনে বিকেল পর্যন্ত মাত্র তিন-চার লাখ ভোট গণনা হয়েছে; যেখানে গড়ে প্রায় ১০ লাখ মানুষ প্রতিটি আসনে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন।’’
আরজেডির এই মুখপাত্র বলেছেন, ‘‘অনেক আসনে আমরা অল্প ব্যবধানে পিছিয়ে আছি। তবে ভোট গণনা অব্যাহত থাকায় আমরা আত্মবিশ্বাসী যে এই চিত্র বদলে যাবে। আমরা নির্বাচন কমিশনকে বিধি-বিধান অনুযায়ী কাজ করার ও দিল্লি থেকে কোনও টেলিফোন ফরমায়েশে কাজ না করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছি।’’ দেশটির কেন্দ্রীয় ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল বিজেপির চাপের কারণে নির্বাচন কমিশন অনেক সময় কাজ করে বলে অভিযোগ করেছেন রাজ্যসভার এই এমপি।
মনোজ কুমার ঝা বলেন, ‘‘ইনডিয়া জোটে থাকা আমাদের সব অংশীদারদের তাদের ভোট পাহাড়া অব্যাহত রাখার অনুরোধ করছি। ভোট গণনা সন্ধ্যা পর্যন্ত চলতে পারে। এই সময় আমাদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।’’
সূত্র: দ্য হিন্দু।
এসএস