ভারতে লোকসভা নির্বাচন শেষ হয়েছ আগেই। এবার ফলাফলের পালা। ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে ভোট গণনা। আর কয়েক ঘণ্টার অপেক্ষা মাত্র। এরপরই মিলবে ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল।

এই নির্বাচনের মাধ্যমে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিই কি তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করবেন, নাকি ভাগ্য মুখ তুলে তাকাবে বিরোধীদের দিকে? মঙ্গলবার (৪ জুন) কারা শেষ হাসি হাসবে। ভোটগণনা সম্পন্ন হওয়ার পরই স্পষ্ট হবে এসব প্রশ্নের উত্তর।

তবে ভারতে ভোট গণনা কীভাবে হয়, আর ঠিক কখনই বা ভোটের ফল অর্থাৎ জয়-পরাজয়ের চিত্র মোটামুটি স্পষ্ট হবে?

সংবাদমাধ্যম বলছে, অতীতের মতো এবারও ভারতে ভোটগ্রহণ করা হয়েছে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম দিয়ে, যার ফলে ভোট গণনা খুব দ্রুত শেষ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ভারতের নির্বাচন কমিশন (ইসিআই) সাম্প্রতিক প্রথা মেনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ব্যবহার করে নির্বাচনী প্রক্রিয়া পরিচালনা করে থাকে। তবে ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে কমিশন প্রথমবার ভোটদানের একটি সুবিধা চালু করেছিল। আর তা হচ্ছে- ৮৫ বছর বা তার বেশি বয়সী প্রবীণ নাগরিকদের এবং সেইসঙ্গে ৪০ শতাংশ প্রতিবন্ধকতা সম্পন্ন বিশেষ ভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে বাড়িতে বসেই ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে ৷

ভারতের নির্বাচনী বিধিমালা অনুযায়ী, ভোট গণনা প্রক্রিয়ার জন্য একটি সুগঠিত কাঠামো আছে। সেই নিয়মের ওপর ভিত্তি করে নির্বাচন কমিশন ভোট গণনা প্রক্রিয়ায় নিয়োজিত কর্মকর্তাদের জন্য হ্যান্ডবুকও তৈরি করেছে।

নিয়ম অনুযায়ী ভোট গণনার দায়িত্ব রিটার্নিং অফিসারের। রিটার্নিং অফিসার এমন একজন কর্মকর্তা যাকে প্রতিটি নির্বাচনী এলাকার তদারকি করার জন্য রাজ্য সরকারের সঙ্গে পরামর্শ করে ইসিআই নিযুক্ত করে থাকে। আর সহকারী রিটার্নিং অফিসাররা গণনা প্রক্রিয়া তদারকি করার জন্য আইনত অনুমোদিত।

যদি রিটার্নিং অফিসারকে একাধিক সংসদীয় বা বিধানসভা কেন্দ্রের দায়িত্ব দেওয়া হয়, তবে তাদের সহকারী রিটার্নিং অফিসাররা পৃথকভাবে বিধানসভা বিভাগের ভোট গণনা পরিচালনা করতে পারেন।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, সকাল ৮টায় জেলায় নির্বাচনী কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে ইভিএমগুলোকে স্ট্রংরুম থেকে গণনা হলে নিয়ে যাওয়া হয়। কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী থাকে এই সময়। স্বচ্ছতা বজায় রাখতে, নির্বাচন কমিশন স্ট্রংরুম থেকে ইভিএম মেশিন গণনা হলে নিয়ে যাওয়ার সময়ে দলগুলোর পোলিং এজেন্টদেরও সঙ্গে রাতে হয়। এর মাধ্যমে বিষয়টিতে স্বচ্ছতা বজায় রাখা হয়।

প্রতি রাউন্ডে একসঙ্গে কয়টি ইভিএম খোলা হয়?

নির্বাচন কমিশন ভোট গণনার জন্য একাধিক রাউন্ডের ব্যবস্থা করে। পোস্টাল ব্যালটে প্রথম রাউন্ডে গণনা করা হয়। এরপর ইভিএম খোলা হয়। এক রাউন্ডে ১৪টি টেবিলে, ১৪টি ইভিএম একসঙ্গে খোলা হয়। ইভিএম-এ পড়া ভোট গণনা শেষ হলে প্রথম রাউন্ড সম্পন্ন হয়।

কত রাউন্ড গণনা শেষে জয়-পরাজয়ের চিত্র মোটামুটি স্পষ্ট হয়?

এই বিষয়টি নির্ভর করছে নির্দিষ্ট আসনে কত ভোট পড়ছে তার ওপর। অনেক আসনে আট থেকে ১০ রাউন্ডে ফলাফল জানা গেলেও অনেক আসনে বেশি ভোট পড়ার কারণে সময় বেশি লাগে। কিছু কিছু জায়গায় ১৪-২৪ রাউন্ড পর্যন্ত গণনা চলতে পারে।

মূলত ওই আসনে কত বুথ রয়েছে, কত ভোট পড়েছে সেই সব বিষয়গুলো নির্ভর করে। এইসব বিষয়ের নিরিখে কিছু কিছু আসনে কয়েক রাউন্ড গণনা শেষেই স্পষ্ট হয় সম্ভাব্য জয়-পরাজয়ের চিত্র আবার কিছু কিছু আসনে একেবারে শেষ রাউন্ডেও ফলাফল উল্টে যায় প্রত্যাশিত ফলাফলের থেকে।

নির্বাচন কমিশন অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন ভাবে গণনা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। দুপুরের মধ্য়ে ভোটের ট্রেন্ড মোটামুটি স্পষ্ট হবে বলে মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।

গণনা কেন্দ্রে নির্বাচনী কর্মকর্তারা ইভিএমের সিল খুলে একটি ‘কন্ট্রোল ইউনিট’ এবং একটি ‘ব্যালট ইউনিট’-এ আলাদা করেন। ‘কন্ট্রোল ইউনিট’ একটি ‘রিডিং মেশিন’-এর সাথে সংযুক্ত। ‘রিডিং মেশিন’ ইভিএম-এ প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা নির্ধারণ করে এবং ‘গণনা শীটে’ রেকর্ড করে।

‘গণনার শীটে’ নথিভুক্ত ভোটের সংখ্যা বিভিন্ন প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যার সঙ্গে মিলিত হয়। এই মিলটি ‘ভোটিং অফিসার’ এবং ‘পার্টি এজেন্ট’-এর উপস্থিতিতে করা হয়। ভোট গণনা সম্পন্ন হওয়ার পর ‘গণনা কর্মকর্তা’ ফলাফল ঘোষণা করেন।

২০১০ সাল থেকে, ভারতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) এর সঙ্গে ব্যবহার করা হচ্ছে ‘ভোটার ভেরিফাইড পেপার অডিট ট্রেল’ (ভিভিপিএটি)ও। ভিভিপিএটি হলো স্বাধীন ইলেকট্রনিক ডিভাইস যা ভোটারের দেওয়া ভোটের একটি স্লিপ প্রিন্ট করে এবং একটি সুরক্ষিত বাক্সে রাখে।

ইভিএম-এ দেওয়া ভোটের রেকর্ড যাচাই করতে ভিভিপিএটি ব্যবহার করা হয়। ভোট গণনা প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর, নির্বাচন কমিশন বিজয়ী প্রার্থীকে একটি সনদপত্র প্রদান করে থাকে।

টিএম