সদ্য শেষ হলো ভারতের লোকসভা নির্বাচন। ১৯ এপ্রিল থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার পর ৩১ মে শেষ হয়েছে ভোটগ্রহণ। প্রায় দেড় মাস ধরে সাত ধাপে এই নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন ৬৪ কোটিরও বেশি ভোটার।

মঙ্গলবার ৪ জুন নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা কবে ভারতের নির্বাচন কমিশন। তবে বুথভেরত বিভিন্ন জরিপ এবং ভারতের রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে গত দু’বারের মতো এবারও নির্বাচনে বিশাল জয় পেতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট।

সেই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সমানেও অভূতপূর্ব এক সূযোগ এনে দিয়েছে এ নির্বাচন। কারণ এনডিএ জোট জিতলে টানা তৃতীয়বারের মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রী হবেন নরেন্দ্র মোদি। ভারতের রাজনীতির ইতিহাসে নরেন্দ্র মোদিই প্রথম রাজনীতিবিদ, যিনি পরপর তিনটি নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করতে চলেছেন।

লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে জনগণকে কিছু প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিজেপি। গত দেড় মাস ধরে বিভিন্ন প্রচারণা সভায় বার বার সেসব প্রতিশ্রুতি আউড়েছেন মোদি এবং বিজেপি নেতারা। সেসব বাস্তবায়ন করবেন বলে কথাও দিয়েছেন। যেসব প্রতিশ্রুতি তারা দিয়েছিলেন, সেগুলো হলো—

সম্পত্তির উত্তরাধিকার হিসেবে নারী-পুরুষের সাম্য

নির্বাচনী ইশতেহারে পারিবারিক সম্পত্তির উত্তরাধিকার হিসেবে নারী ও পুরুষের মাধ্যে সাম্য বিধান নিশ্চিতে নতুন আইন ইউনিফর্ম সিভিল কোড প্রণয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিজেপি। এই আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন হলে ভারতে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব নারী ও পুরুষ পিতামাতার সম্পত্তির সমান হিস্যা পাবেন।

এই আইন অবশ্য বহু বছর ধরেই প্রণয়ন করতে চাইছে বিজেপি; কারণ দলটির মতে, লিঙ্গগত সাম্য, ন্যায়বিচার ও জাতীয় ঐক্য বজায় রাখতে এই আইন খুবই উপযোগী।  তবে মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রবল আপত্তি ছিল আইনের পথে প্রধান বাধা। তবে সম্প্রতি ভারতজুড়ে ইউনিফর্ম সিভিল কোড প্রণয়নের দাবি দিন দিন শক্তিশালী হয়ে উঠছে। তাই ধারণা করা হচ্ছে, মুসলিম সম্প্রদায়ের অসন্তোষ সত্ত্বেও এবারের নির্বাচনে জিতে আইনটি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করবে বিজেপি।

বিতর্কিত স্থানে মন্দির নির্মাণ

উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যা শহরে বিতর্কিত বাবরি মসজিদের স্থলে চলতি বছর রাম মন্দির উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ভারতে এমন আরও বেশ কয়েকটি বিতর্কিত স্থান রয়েছে। বিজেপি এবং কট্টরপন্থী হিন্দু দলগুলোর দাবি—এসব স্থানে একসময় হিন্দু মন্দির ছিল, কিন্তু সুলতানি ও মোগল আমলে সেসব মন্দির ভেঙে ফেলা হয়েছে।

মোদির বর্তমান সংসদীয় আসন উত্তরপ্রদেশের বারানসী এবং মথুরায় এমন দু’টি মসজিদ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। ভারতের সর্বোচ্চ আদালতে এ নিয়ে মামলাও চলছে। ভারতের রাজনীতি বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, এবারের নির্বাচনে জিতলে ওই দুই মসজিদ ভেঙ্গে সেখানেও মন্দির স্থাপন করা হবে।

এক জাতি, এক নির্বাচন

বিজেপি রাজনৈতিক ভাবে ‘এক দেশ, এক জাতি, এক নির্বাচন’ দর্শনের অনুসারী। বর্তমানে ভারতের কেন্দ্রীয় পার্লামেন্ট নির্বাচন ও রাজ্য সরকারের নির্বাচন বিভিন্ন সময়ে হয়; কিন্তু বিজেপি চায়, এক দফায় ভারতের পার্লামেন্ট ও রাজ্য সরকারের নির্বাচন হোক। বিজেপির যুক্তি— যদি এ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়, তাহলে বিপুল পরিমাণ সময় ও অর্থ সাশ্রয় সম্ভব।

ভারতের রাজনৈতিক বাস্তবতায় বর্তমানে এমন আইন প্রণয়ন কঠিন, তবে অসম্ভব নয়। এবারের নির্বাচনে জিতলে এই আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে আরও এক ধাপ এগোবে বিজেপি।

অর্থনীতি

নির্বাচনী ইশতেহারে ভারতকে তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে পরিণত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিজেপি। বর্তমানে ভারত বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ।

গত দুই মেয়াদে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন সরকারের হাত ধরে ভারতের অর্থনীতির অগ্রগতি ঘটেছে। প্রতি বছরই দেশটির প্রবৃদ্ধি বেড়েছে, মূল্যস্ফীতি হ্রাস পেয়েছে এবং বাজেট ঘাটতিও নিয়ন্ত্রণে থেকেছে।

এখন ভারতের সবচেয়ে বড় যে সমস্যা— তার নাম বেকারত্ব বা কর্মহীনতা। দেশটির মোট কর্মক্ষম জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বেকার। নির্বাচনী ইশতেহারে এই সংকট সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিজেপি।

উত্তরপূর্বাঞ্চলে শান্তি

গত বছর থেকে ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরে শুরু হয়েছে হিন্দু ধর্মাবলম্বী জনগোষ্ঠী মেইতেই এবং খৃস্টান ধর্মাবলম্বী কুকি-চিন জাতির মধ্যে সংঘাত। এই এক বছরের সংঘাতে মণিপুরে উভয় জনগোষ্ঠী অন্তত ২২০ জন নিহত হয়েছেন এবং বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন আরও কয়েক লাখ। বিজেপির নির্বাচনী ইশতেহারে মণিপুরে শান্তি স্থাপনের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

সূত্র: রয়টার্স

এসএমডব্লিউ