ভারতে সাত দফার ম্যারাথন নির্বাচন শেষ হয়েছে গত ১ জুন। মঙ্গলবার (৪ জুন) এই নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হবে। তার আগে দেশটিতে বুথ ফেরত সমীক্ষা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। দেশটির মূলধারার অধিকাংশ সংবাদমাধ্যমে যে বুথ ফেরত সমীক্ষা দেখানো হয়েছে, তাতে বলা হচ্ছে বিপুল সংখ্য়াগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ফিরছে নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন সরকার।

সমীক্ষা বলছে, বিজেপির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) জোট ৩৫০টিরও বেশি আসন পেতে চলেছে। দেশটিতে সরকার গঠনের জন্য লোকসভার ৫৪৩ আসনের মধ্যে ২৭২ আসনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা দরকার। যে দল ২৭২টি আসন পাবে, সে দলই সরকার গঠন করতে পারবে। ২০১৯ সালে বিজেপি একাই পেয়েছিল ৩০৩টি আসন। এনডিএ পেয়েছিল ৩৩০টির বেশি আসন। এবার সেই রেকর্ড ভাঙবে বলে বুথ ফেরত সমীক্ষায় ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছে।

এবারে রাজ্য ধরে ধরে সমীক্ষা করা হয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে বিজেপি ২৪ থেকে ২৭টি আসন পেতে পারে। কোনো কোনো সমীক্ষায় বিজেপিকে দেওয়া হয়েছে ৩০টির বেশি আসন। পশ্চিমবঙ্গে লোকসভার আসন রয়েছে ৪২টি। ২০১৯ সালে বিজেপি পেয়েছিল ১৮টি আসন। শাসকদল তৃণমূল জিতেছিল ২২টি। আর কংগ্রেস পেয়েছিল দু’টি আসন।

এরপর ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির ফল আগের চেয়ে খারাপ হয়। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, বুথ ফেরত সমীক্ষায় যে ফল দেখানো হচ্ছে, বাস্তবের সঙ্গে তার মিল কম।

ভারতের ভোট বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বিশ্বনাথ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে যে ফলাফল দেখানো হচ্ছে, আমার মনে হয় না তা বাস্তবে হবে। আমার ধারণা, তৃণমূল এবং বিজেপি প্রায় সমান সমান আসন পাবে। অর্থাৎ, ২০১৯ এর ফলাফলের চেয়ে বিশেষ কোনো পরিবর্তন হবে না।’’

বিশ্বনাথ মনে করেন, কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদির সরকার ফিরবে। তবে সেখানেও আসন সংখ্যা আগেরবারের চেয়ে বিশেষ বদলাবে না। ভারতীয় সাংবাদিক ও দিল্লি প্রেস ক্লাবের প্রধান গৌতম লাহিড়ির মতে, বুথ ফেরত সমীক্ষায় যে নম্বর দেখানো হচ্ছে, সেই নম্বরেই ভুল আছে। কর্ণাটকে কংগ্রেস যতগুলো আসনে লড়ছে, তার চেয়ে বেশি আসন দেখানো হয়েছে একটি সমীক্ষায়। ফলে বোঝাই যাচ্ছে, বুথ ফেরত সমীক্ষা নিরপেক্ষ নয়, রাজনৈতিক মদতপুষ্ট।

গৌতমের বক্তব্য, এবারের ভোটে গোটা দেশেই অ্যান্টি ইনকমবেন্সি অর্থাৎ, শাসকবিরোধী মনোভাব দেখা গেছে ভোটারদের মধ্যে। ফলে বিজেপি সরকার গঠন করতে পারবে না বলেই মনে হচ্ছে। আর পশ্চিমবঙ্গে যে ফলাফল দেখানো হচ্ছে, বাস্তবে ঠিক তার উল্টোটা ঘটবে।

বিজেপি বুথ ফেরত সমীক্ষাকে স্বাগত জানালেও কংগ্রেস ইতিমধ্যে এর নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। কংগ্রেস হাইকমান্ড কর্মীদের জানিয়েছে, ভোট গণনার আগে বিরোধী শক্তিকে মানসিক চাপে ফেলতেই গণমাধ্যমকে ব্যবহার করেছে বিজেপি। বুথ ফেরত সমীক্ষার ফলাফল তেমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে। গণনার দিন কর্মীদের শেষ পর্যন্ত গণনাকেন্দ্রে থাকার হুইপ জারি করেছে কংগ্রেস।

তৃণমূল-সহ ইনডিয়া জোটের একাধিক দলও একই ধরনের কথা বলেছে। তাদের বক্তব্য, বুথ ফেরত সমীক্ষার ক্ষেত্রেও বিজেপি মিডিয়াকে ব্যবহার করেছে। যে ফলাফল দেখানো হচ্ছে, বাস্তবের সঙ্গে তার কোনো মিল নেই।

এসএস