ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) জোটের সরকারের অতীতের ব্যর্থতায় হতাশ হয়ে পড়া দেশটির প্রধান ভোট ব্যাংক হিসেবে পরিচিত কৃষকদের ক্ষোভ প্রশমনের চেষ্টা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে তিনি দেশটির কৃষকদের আয় বাড়ানোর জন্য নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন।

বিজেপি সরকারের এক নথি পর্যালোচনা করেছেন ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিনিধি শিবাঙ্গী আচার্য ও সরিতা চাগন্তি সিং। সেই নথি অনুযায়ী, নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন ভারতের প্রশাসন আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে গ্রামীণ মাথাপিছু আয় ৫০ শতাংশ বাড়াতে চায়।

তিনি কৃষিতে কর্পোরেট বিনিয়োগ বাড়িয়ে এই খাতে সামগ্রিক বিনিয়োগের পরিমাণ ২৫ শতাংশে উন্নীত করতে চান; যা বর্তমানে ১৫ শতাংশে রয়েছে। আর ২০৪৭ সালের মাঝে তা ৪০ শতাংশের বেশি করে কৃষকদের আয় বৃদ্ধির পরিকল্পনা করেছেন তিনি।

এছাড়াও দেশটির ক্ষুদ্র শিল্পকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে অ-কৃষি খাতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করতে চান নরেন্দ্র মোদি।

দেশটির এই প্রধানমন্ত্রী তার প্রথম মেয়াদে ২০১৬ সালে দেওয়া প্রতিশ্রুতিতে বলেছিলেন, কৃষকদের আয় ২০২২ সালের মধ্যে দ্বিগুণ করবেন তিনি। কিন্তু তার সেই প্রতিশ্রুতি ব্যর্থ হওয়ায় কৃষকদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। চলতি মেয়াদের বিভিন্ন সময়ে দেশটির বিভিন্ন প্রান্তে কৃষক আন্দোলন ব্যাপক বেকায়দায় ফেলে দিয়েছিল নরেন্দ্র মোদির সরকারকে। যে কারণে নতুন লক্ষ্যমাত্রাকে তুলনামূলক কম উচ্চাভিলাষী হিসেবে নেওয়া হলেও তৃণমূল পর্যায়ে তা নিয়ে জনগণের মাঝে সন্দেহ রয়েছে।

এই খাতে কর্পোরেট বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য বিজেপি সরকারের কৃষি আইন ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা আছে কি না তা নথিতে দেখা যায়নি। তবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশ থেকে গম, চাল এবং পেঁয়াজের রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছিলেন। দেশীয় বাজারে মুদ্রাস্ফীতি ও দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়; যা কৃষকদের আয়ে আঘাত হানে।

নরেন্দ্র মোদির এবারের নির্বাচনী ইশতেহারে ফসলের জন্য সরকারের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বৃদ্ধি, বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য পরিকাঠামো শক্তিশালী করার পরিকল্পনার ঘোষণা রয়েছে।

• বুথ ফেরত জরিপে কে এগিয়ে

ভারতের সংবিধান অনুযায়ী, কোনো দল বা জোট যদি সরকার গঠন করতে চায় তাহলে তাদের লোকসভার ৫৪৩টি আসনের মধ্যে কমপক্ষে ২৭২টিতে জয় পেতে হবে। এবারের লোকসভা নির্বাচনে দুটি বড় জোটের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা গেছে। এর একটি দেশটির ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) এবং অন্যটি কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইনডিয়া জোট।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এনডিএ জোট টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইনডিয়া জোটও নির্বাচনে ভূমিধস জয়ের ব্যাপারে আশাপ্রকাশ করেছে।

শনিবার ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে বরাবরের মতো দেশটির সংবাদমাধ্যমে বুথ ফেরত জরিপের ফলাফল প্রকাশিত হতে শুরু করেছে। যদিও এসব জরিপের ফলাফল অনেক সময় উল্টো যেতে দেখা যায়। এর আগে, ২০১৯ সালের নির্বাচনে ৩৫৩ আসনে জয় পেয়েছিল এনডিএ জোট।

সন্ধ্যার দিকে দেশটির অন্তত চারটি গণমাধ্যমের বুথ ফেরত জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, নরেন্দ্র মোদির বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট লোকসভার ৩৫০টিরও বেশি আসনে জয় পেতে যাচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসছেন নরেন্দ্র মোদি।
 
দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটি প্রথম বুথ ফেরত জরিপের ফল প্রকাশ করে বলেছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভারতীয় জনতা পার্টির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট এবারের সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দেশটির চারটি সংবাদমাধ্যম ও সংস্থার বুথ ফেরত জরিপের ফলাফলে বলা হয়েছে, ক্ষমতাসীন এনডিএ জোট ৫৪৩ আসনের লোকসভার ৩৫০টিরও বেশি আসনে জয় পেতে পারে। যেখানে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য ২৭২টি আসন প্রয়োজন।

ইন্ডিয়া নিউজ ও ডি-ডায়নামিকসের বুথ ফেরত জরিপ বলছে, লোকসভা নির্বাচনে এনডিএ জোট ৩৭১ ও ইনডিয়া জোট ১২৫ আসনে জয় পেতে পারে। এছাড়া কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইনডিয়া জোট ১২৫ আসনে জয়ী হতে পারে।

দেশটির অপর সংবাদমাধ্যম রিপাবলিক ভারত ও ম্যাট্রিজের বুথ ফেরত জরিপের ফলাফলেও বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট ৩৫৩ থেকে ৩৬৮ আসনে জয় পেতে পারে বলে জানানো হয়েছে। এছাড়া দেশটির বিরোধী দলগুলোর জোট ইনডিয়া ১১৮ থেকে ১৩৩ আসনে জয়ী হতে পারে। অন্যান্য দলগুলো ৪৩ থেকে ৪৮ আসনে জয় পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সূত্র: রয়টার্স, এনডিটিভি।

এসএস