পর্ন তারকাকে ঘুষ প্রদানের মামলায় সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালতের রায় প্রদানের ঘটনায় কোনো উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেননি যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সেই সঙ্গে রায় নিয়ে মাতামাতির পরিবর্তে নিজের দল ডেমোক্রেটিক পার্টির কর্ম-সমর্থকদের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মনোনিবেশ করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

নিজে অবশ্য এ ইস্যুতে কিছুই বলেননি বাইডেন, তার প্রতিনিধি হিসেবে বিবৃতি দিয়েছেন আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির এই শীর্ষ নেতার তার নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা টিমের পরিচালক মাইকেল টেইলার এবং হোয়াইট হাউস মুখপাত্র ইয়ান স্যামস। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার আদালত রায় ঘোষণার কিছু সময় পর এক বিবৃতি টেইলার বলেন, ‘আজ নিউ ইয়র্কের আদালতে আরও একবার প্রমাণিত হলো যে কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়; কিন্তু আজকের রায় যুক্তরাষ্ট্রের জনগণকে সুন্দর ভবিষ্যতের পথে নিয়ে যেতে পারবে না।’

‘জনগণকে একটি সুন্দর ভবিষ্যত উপহার দিতে হলে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অবশ্যই ওভাল অফিসের (যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কার্যালয়) বাইরে রাখতে হবে। আর তা কেবল ব্যালট বাক্সের মাধ্যমেই সম্ভব।’

জো বাইডেনের পূর্বসূরি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ— পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক ইস্যুতে তার মুখ বন্ধ রাখার জন্য ২০১৬ সালের নির্বাচনের আগে স্টর্মিকে ১ লাখ ৩০ হাজার ঘুষ দিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচনী বাজেট থেকে এই অর্থ স্টর্মিকে দিয়েছিলেন তিনি এবং এ সংক্রান্ত নথিতে সেই ঘটনা গোপন করেছিলেন।

মামলায় তার বিরুদ্ধে আনা ৩৪টি অভিযোগের সবগুলোতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন ট্রাম্প। আগামী ১১ জুলাই রায় ঘোষণা করবেন আদালত।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন হোয়াইট হাউসের কাউন্সিল কার্যালয়ের মুখপাত্র ইয়ান স্যামস এক বার্তায় বলেন, ‘আদালতের রায়কে সম্মান জানাচ্ছি। এর বেশি কিছু আর বলার নেই।’

জানা গেছে, এই মুহূর্তে হোয়াইট হাউসেও নেই ট্রাম্প। নিজের বড় ছেলে বিউ বাইডেনের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ডেলাওয়্যার অঙ্গরাজ্যে স্ত্রী জিল বাইডেনসহ অবস্থান করছেন তিনি। মস্তিষ্কের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২০১৫ সালে মৃত্যু হয়েছিল বিউ বাইডেনের।

প্রসঙ্গত, আগামী নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হচ্ছেন বাইডেন, আর তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হবেন রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০২০ সালের নির্বাচনেও দু’জনের দ্বৈরথ হয়েছিল, তবে সেবার ডোনাল্ড ট্রাম্প ছিলেন প্রেসিডেন্ট এবং জো বাইডেন ছিলেন প্রার্থী।

নিউইয়র্কের ম্যানহাটানের আদালতে যখন ট্রাম্পের মামলার বিচারকাজ চলছিল, সে সময় মাঝে মাঝে প্রকাশ্যে এ নিয়ে ট্রাম্পের উদ্দেশে রসিকতা করলেও অধিকাংশ সময় এ ইস্যুতে চুপ ছিলেন জো বাইডেন।

মার্কিন রাজনীতি বিশ্লেষকরা মতে, এই রায় যুক্তরাষ্ট্রের তরুণ ভোটারদের মধ্যে খানিকটা সাড়া ফেলেছে, তবে ভোটার টানার জন্য বাইডেন এ সুযোগ গ্রহণ করবেন— এমন সম্ভাবনা কম।

যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ডেভিড ক্যারল এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা মনে হয় না ভোটার টানতে বাইডেন এই ইস্যুর ব্যবহার করবেন। কারণ এই রায় অনেক বড় একটি ব্যাপার। এটি ঐতিহাসিক।’

সূত্র : এএফপি

এসএমডব্লিউ