ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। টানা প্রায় আট মাস ধরে চলা এই আগ্রাসনে বিপুল সংখ্যক মানুষ নিহত হয়েছেন। এমন অবস্থায় ইসরায়েলকে নিয়ে মন্তব্য করায় যুক্তরাষ্ট্রে এক মুসলিম নার্সকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

নিজের পেশাগত কাজের জন্য পুরস্কার গ্রহণের সময় করা মন্তব্যে ওই নার্স গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনকে ‘গণহত্যা’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। শুক্রবার (৩১ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গর্ভাবস্থা এবং প্রসবের সময় তাদের সন্তানদের হারানো শোকাহত মায়েদের সাথে কাজের জন্য পুরষ্কার গ্রহণের বক্তৃতায় গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধকে ‘গণহত্যা’ বলার পরে নিউইয়র্ক সিটির একটি হাসপাতাল ফিলিস্তিনি আমেরিকান এক মুসলিম নার্সকে বরখাস্ত করেছে।

বরখাস্তকৃত ওই নার্সের নাম হেসেন জাবর। তিনি এনওয়াইইউ ল্যাঙ্গোন হেলথ হাসপাতালের প্রসববেদনা ও ডেলিভারি নার্স ছিলেন।

ওই হাসপাতালের একজন মুখপাত্র বৃহস্পতিবার দাবি করেছেন, ‘বিভাজনমূলক ইস্যুতে কর্মক্ষেত্রে নিজের মতামত প্রকাশ না করতে’ প্রসববেদনা ও ডেলিভারি নার্স হেসেন জাবরকে পূর্বে সতর্ক করা হয়েছিল।’

জাবর ইনস্টাগ্রামে দেওয়া এক পোস্টে জানিয়েছেন, তাকে গত ৭ মে পুরস্কৃত করা হয়েছিল এবং সেসময় তিনি ওই মন্তব্য করেছিলেন। পরে একই মাসের শেষের দিকে তাকে চাকরিচ্যুতির নোটিশ দেওয়া হয়।

পুরস্কার গ্রহণের সময় দেওয়া বক্তৃতার একটি অংশে ফিলিস্তিনি আমেরিকান এই নার্স গাজা যুদ্ধের সময় বাচ্চাদের হারিয়ে যাওয়া মায়েদের সম্পর্কে কথা বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, পুরস্কারটি তার কাছে ‘একান্তই ব্যক্তিগত’।

জাবর তার বক্তৃতার ভিডিওটি অনলাইনে পোস্ট করেছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘গাজায় বর্তমান গণহত্যার সময় আমার দেশের নারীরা অকল্পনীয় ক্ষতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেখে আমার বেদনা হয়।’

হাসপাতালের মুখপাত্র অবশ্য বলছেন, জাবরকে গত বছরের ডিসেম্বরে সতর্ক করা হয়েছিল। তার দাবি, ‘আগের ঘটনার পরে, কর্মক্ষেত্রে এই বিভাজনমূলক অভিযুক্ত ইস্যুতে তার মতামত না আনতে বলা হয়েছিল।’

হাসপাতালের এই মুখপাত্র আগের ঘটনার বিবরণ না দিয়ে বলেন, ‘এর পরিবর্তে তিনি সাম্প্রতিক একটি ইভেন্টে তার প্রতি যে পরামর্শ ছিল তা না মানার পথ বেছে নেন। ওই অনুষ্ঠানে তার বহু সহকর্মী উপস্থিত ছিলেন, তাদের মধ্যে কেউ কেউ তার মন্তব্যে বিরক্ত হয়েছিলেন।’

তার ভাষায়, ‘ফলস্বরূপ, জাবর এখন আর এনওয়াইইউ ল্যাঙ্গোন হেলথের কর্মী নয়।’

উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।

এছাড়া ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি এই আক্রমণের ফলে গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ৩৬ হাজারের বেশি মানুষ নিহত এবং আরও ৮১ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।

মূলত ইসরায়েলি আক্রমণ গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজার সকলেই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন।

এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরায়েল ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে।

মূলত গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব সত্ত্বেও ইসরায়েল অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে তার নৃশংস আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে।

টিএম