পরিকল্পনা ছাড়া গাজা যুদ্ধে জিততে পারবে না ইসরায়েল : ব্লিংকেন
হামাসকে নির্মূলের লক্ষ্য নিয়ে অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। টানা প্রায় আট মাস ধরে চলা এই অভিযানে নিহত হয়েছেন ৩৬ হাজারেরও বেশি মানুষ। গাজা উপত্যকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে মানবিক সংকট।
তবে এরপরও হামাসকে নির্মূল বা পরাজিত কোনোটিই করতে পারেনি ইসরায়েল। এমন অবস্থায় গাজায় যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ইসরায়েলের প্রস্তুতি না থাকা নিয়ে আবারও সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
বিজ্ঞাপন
দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, যুদ্ধ শেষ হলে পরের দিন কী হবে সেই পরিকল্পনা ছাড়া গাজা যুদ্ধে জিততে পারবে না ইসরায়েল। বৃহস্পতিবার (৩০ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় যুদ্ধোত্তর কৌশল না থাকা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আবারও ইসরায়েলকে দৃঢ়ভাবে সতর্ক করেছে। যুদ্ধ শেষ হলে কীভাবে এই অঞ্চলটি শাসিত ও স্থিতিশীল হবে সে সম্পর্কেও খোলা প্রশ্ন রেখেছে দেশটি।
বুধবার মলদোভানের রাজধানী চিসিনাউতে এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেন, হামাসের পরাজয় নিশ্চিত করতে এবং গাজায় নিরাপত্তা ও শাসনব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করার জন্য ইসরায়েলের একটি পরিকল্পনা তৈরি করা ‘অবশ্যক’।
ব্লিংকেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘(যুদ্ধ শেষের) পরের দিনের জন্য পরিকল্পনা না থাকলে, সেই পরের দিন কখনোই আসবে না।’
তিনি আরও বলেন, হামাসের সামরিক সক্ষমতা ধ্বংস করার প্রচেষ্টায় ‘প্রকৃত সাফল্য’ অর্জন করেছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। তবে তিনি সতর্ক করেছেন, গাজার ভবিষ্যতের বিষয়ে ইসরায়েলের সরাসরি ভূমিকা থাকা উচিত নয়।
ব্লিংকেন বলেন, ‘যদি তেমন কিছু হয়, তাহলে আমরা ভবিষ্যতে সেখানে দীর্ঘস্থায়ী বিদ্রোহ দেখতে পাবো।’
ব্লিংকেন আরও বলেন, ‘যুদ্ধোত্তর পরিকল্পনা না থাকলে হামাসের হাতেই দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া হবে, যা অগ্রহণযোগ্য। অথবা যদি সেটি নাও হয়, তাহলে আমরা সেখানে বিশৃঙ্খলা, অনাচার দেখতে পাবো এবং সেখানে একটি ক্ষমতা-শূন্যতা সৃষ্টি হবে যা শেষ পর্যন্ত হামাস গোষ্ঠীর মাধ্যমেই আবার পূর্ণ হবে বা হয়তো এমন কিছু - যদি কল্পনাও করা হয় - যা আরও খারাপ।’
মার্কিন কর্মকর্তারা প্রকাশ্যেই ইসরায়েলকে তথাকথিত যুদ্ধ শেষে হওয়ার ‘পরবর্তী দিনের পরিকল্পনার’ জন্য চাপ দিচ্ছেন। তারা বলছেন, যুদ্ধের পর ‘সংস্কারকৃত’ ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) মাধ্যমেই গাজার শাসন থাকা উচিত।
কিন্তু ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বারবার অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডটিকে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরের ধারণা প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, ইসরায়েল পশ্চিম তীর এবং গাজাসহ অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের ওপর নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখবে।
ইসরায়েলি নেতারা আরও বলেছেন, তারা চান হামাস ‘সম্পূর্ণভাবে পরাজিত’ হোক।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন যুদ্ধের পর গাজার কী হবে তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করলেও, কখন বা ঠিক কীভাবে এই সহিংসতার অবসান হবে তা স্পষ্ট নয়।
অবশ্য বুধবার ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জাচি হানেগবি বলেছেন, চলতি বছরের শেষের আগে যুদ্ধ শেষ হবে না। জেরুজালেম পোস্ট পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের পাবলিক রেডিওকে তিনি বলেন, ‘গাজায় চলমান এই যুদ্ধ অন্তত আরও সাত মাস চলবে।’
আরও পড়ুন
তার এই মন্তব্য এমন এক সময়ে সামনে এলো যখন গাজায় প্রায় আট মাস ধরে আগ্রাসনের পর ইসরায়েল বিশ্ব মঞ্চে নিজেকে ক্রমবর্ধমানভাবে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় দেখতে পাচ্ছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রসহ ইসরায়েলের অন্যান্য ঘনিষ্ঠ মিত্ররাও গাজায় বেসামরিক মানুষের মৃত্যু নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
এছাড়া হানেগবির এই মন্তব্য গাজার ভবিষ্যত এবং এই ভূখণ্ডে ইসরায়েল ঠিক কী ধরনের ভূমিকা পালন করবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। যদিও ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের যুদ্ধোত্তর পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে।
এমনকি ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রীও সতর্ক করেছেন, ইসরায়েল যাতে অনির্দিষ্টকালের জন্য গাজায় না থাকে তা নিশ্চিত করার জন্য তাকে (নেতানিয়াহু) অবশ্যই পদক্ষেপ নিতে হবে।
হামাস অবশ্য তাদেরকে বাদ দিয়ে সম্ভাব্য যেকোনও ধরনের যুদ্ধোত্তর পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছে। ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডের স্বাধীনতাকামী এই সশস্ত্র গোষ্ঠী পুনর্ব্যক্ত করেছে, তারা (যুদ্ধের পরও) গাজাতেই থাকবে।
টিএম