আজিজ, বেনজীর, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী নিয়ে যা বলল যুক্তরাষ্ট্র
বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদের ওপর দিন কয়েক আগেই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দুর্নীতির সঙ্গে ব্যাপকভাবে জড়িত থাকার দায়ে তার বিরুদ্ধে এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও এখন বেশ আলোচিত। এছাড়া জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে মোতায়েন করা শান্তিরক্ষীদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের রেকর্ড আছে বলে জার্মান সম্প্রচারমাধ্যম ডয়চে ভেলের একটি তথ্যচিত্রে অভিযোগ করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
এসব বিষয় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়ে উঠে এসেছে। আলোচিত এসব বিষয় নিয়ে স্থানীয় সময় সোমবারের (২৮ মে) ব্রিফিংয়ে দেশটি তার অবস্থান জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, দুর্নীতি দমন ইস্যুটি মার্কিন নিরাপত্তা স্বার্থের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। দেশটি বলছে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শান্তি এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতে শান্তিরক্ষা মিশন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বপালন করে।
এছাড়া ডয়চে ভেলের সাম্প্রতিক তথ্যচিত্রের মতো প্রতিবেদন সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র অবগত বলেও জানানো হয়েছে। সোমবার নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার।
এদিনের ব্রিফিংয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের রেকর্ড আছে এমন ব্যক্তিদের জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে মোতায়েন করার বিষয়ে জানতে চান এক সাংবাদিক। তিনি বলেন, জার্মানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে, সাডেচ সায়েতিং এবং সুইডেনভিত্তিক গণমাধ্যম নেত্র নিউজের যৌথ তদন্তে জানা গেছে, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সাবেক এবং বর্তমান সদস্যরা নিয়মিতভাবেই জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী হিসাবে শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োগ পাচ্ছে। চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে যুক্তরাষ্ট্র যেখানে ব়্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সেই প্রেক্ষাপটে এই বাহিনীর সদস্যদের যেভাবে শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োগ দেওয়া অব্যাহত রয়েছে, সে বিষয়ে আপনারা কতটা উদ্বিগ্ন? কারণ যুক্তরাষ্ট্র তার দেশের জনগণের ট্যাক্সের আয় থেকে শান্তিরক্ষা বাহিনীর মোট খরচের প্রায় ২৭ শতাংশ যোগান দিয়ে থাকে।
জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, এই রিপোর্টগুলো সম্পর্কে আমরা অবগত। আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার উন্নয়নে শান্তিরক্ষা কার্যক্রম অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে এবং শান্তিরক্ষায় নিয়োজিত কর্মীদের মানবাধিকার রক্ষা করা অপরিহার্য। ইউএন ডিউ ডিলিজেন্স পলিসি অনুসারে, জাতিসংঘ এক্ষেত্রে সৈন্য এবং পুলিশ প্রেরণকারী দেশগুলোর নিজস্ব প্রত্যয়নের ওপর নির্ভর করে যে, তারা (সংশ্লিষ্ট দেশ) মানবাধিকার লঙ্ঘন বা আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘনের সাথে জড়িত সেনা বা পুলিশ সদস্যদের শান্তিরক্ষা মিশনে পাঠাচ্ছে না।
পৃথক এক প্রশ্নে ওই সাংবাদিক জানতে চান, বাংলাদেশের সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদের ব্যাপক দুর্নীতির বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তার বিরুদ্ধে দুটি মার্কিন নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আপনি কি আমাদের বলতে পারেন, কোনও মার্কিন সংস্থা যুক্তরাষ্ট্রে বা অন্য কোনও দেশে তার কোনো সম্পদের খোঁজ পেয়েছে কিনা এবং (যদি পাওয়া যায়) যুক্তরাষ্ট্র সেসব সম্পদ জব্দ করেছে কিনা? একইভাবে, আপনার কাছে কি দুর্নীতিগ্রস্ত সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ সম্পর্কে কোনো তথ্য আছে, সম্প্রতি আপনারা তার বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। আপনারা কী বর্তমান সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেবেন? কারণ ক্ষমতাসীন শীর্ষ নেতৃত্বের কাছ থেকেই তারা অবাধে যা কিছু করতে চায় তা-ই করার সুযোগ পেয়েছেন।
জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এই মুখপাত্র বলেন, আপনার প্রথম প্রশ্ন প্রসঙ্গে বলব, আমার কাছে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে বলার মতো মতো কোনও তথ্য নেই। দ্বিতীয় প্রশ্নটির উত্তরে বলব, আপনার উল্লেখ করা অভিযোগ এবং মিডিয়া রিপোর্ট সম্পর্কে আমরা অবগত।
আরও পড়ুন
তিনি বলেন, আমরা স্পষ্ট করেই বলেছি, দুর্নীতি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করে, উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করে, সরকারকে অস্থিতিশীল করে এবং গণতন্ত্রকে দুর্বল করে বলে আমরা বিশ্বাস করি। এই প্রশাসনের শুরু থেকেই আমরা দুর্নীতিবিরোধী নীতিকে আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছি।
ম্যাথিউ মিলার আরও বলেন, বিশদ এই কৌশলটির পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ হিসাবে শীর্ষ পর্যায়ের কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই নিয়ে এখন ঘোষণা করার মতো নতুন কিছুই আমার কাছে নেই। আপনি জানেন, নিষেধাজ্ঞা দেওয়া বা অন্যান্য পদক্ষেপ নেওয়ার আগে আমরা কখনোই তা আগাম ঘোষণা করি না।
টিএম