বাংলাদেশ উপকূল এবং পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপের মাঝামাঝি এলাকা দিয়ে বঙ্গোপসাগর উপকূলে আঘাত হেনেছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমাল। এরপর শক্তিশালী এই ঘূর্ণিঝড় পশ্চিমবঙ্গে রাতভর তাণ্ডব চালিয়েছে।

রাজ্যটির বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞও চালিয়েছে ঘূর্ণিঝড় রেমাল। ভারতীয় বার্তাসংস্থা পিটিআইয়ের বরাত দিয়ে সোমবার (২৭ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঘণ্টায় ১৩৫ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে প্রচণ্ড শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ বাংলাদেশের উপকূল এবং তৎসংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে স্থলভাগে আছড়ে পড়েছে।

এরপর রাতভর ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে বহু বাড়িঘর ও কৃষিজমি প্লাবিত হয়েছে এবং ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে।

এনডিটিভি বলছে, বাংলাদেশের মংলার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত সাগরদ্বীপ ও খেপুপাড়ার মধ্যবর্তী পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের সংলগ্ন উপকূলে রোববার রাত সাড়ে ৮টায় ঘূর্ণিঝড় রেমাল আঘাত হানতে শুরু করে।

রেমালের তাণ্ডবে ভঙ্গুর বহু বসতবাড়ি ভেঙে পড়েছে এবং বহু গাছ উপড়ে পড়ার পাশাপাশি বিদ্যুতের খুঁটিও ভেঙে পড়েছে। সুন্দরবনের গোসাবা এলাকায় একজন আহত হয়েছেন।

অবশ্য ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আগেই পশ্চিমবঙ্গের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে এক লাখেরও বেশি মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ‘প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমাল পশ্চিমবঙ্গের সাগর দ্বীপ এবং বাংলাদেশের খেপুপাড়ার মধ্যে রোববার রাতে ঘণ্টায় ১৩৫ কিলোমিটার বাতাসের গতিবেগ নিয়ে স্থলভাগে আছড়ে পড়ে’।

নিউজ ফুটেজে দেখা গেছে, জোয়ারের বিশাল ঢেউ দিঘার উপকূলীয় এলাকায় আছড়ে পড়ছে।

এছাড়া ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বিস্তীর্ণ উপকূলরেখা বরাবর ভারী বৃষ্টি হয়েছে এবং ক্রমবর্ধমান ঢেউ মাছ ধরার বহু নৌকাকে ভাসিয়ে নিয়েছে এবং নিচু এলাকায় ঘরবাড়ি এবং কৃষিজমি প্লাবিত হয়েছে।

এদিকে কলকাতার বিবিরবাগান এলাকায় প্রবল বর্ষণে দেয়াল ধসে একজন আহত হয়েছেন। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুর জেলা থেকে পাওয়া খবরে বলা হয়েছে, খড়ের ঘরের ছাদ উড়ে গেছে, বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে পড়েছে এবং বেশ কয়েকটি এলাকায় গাছ উপড়ে গেছে।

কলকাতা সংলগ্ন নিচু এলাকার রাস্তাঘাট ও বাড়িঘরও জলমগ্ন হয়ে পড়েছে।

পশ্চিমবঙ্গ সরকার অবশ্য রোববার বিকেলের মধ্যেই উপকূলীয় এবং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার মানুষকে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, স্কুল ও কলেজে স্থানান্তরিত করে।

একজন কর্মকর্তার মতে, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা বিশেষ করে সাগর দ্বীপ, সুন্দরবন এবং কাকদ্বীপ থেকে লোকেদের স্থানান্তরিত করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জনগণকে বাড়িতে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন এবং তাদের সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।

কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, কলকাতা মিউনিসিপ্যাল ​​কর্পোরেশন (কেএমসি) কর্তৃপক্ষ বহু উঁচু ও জরাজীর্ণ ভবন থেকে লোকজনকে সরিয়ে নিয়েছে।

এছাড়া ঘূর্ণিঝড়ের কারণে দিঘা, কাকদ্বীপ এবং জয়নগরের মতো এলাকায় হালকা বৃষ্টি এবং বাতাসের সৃষ্টি হয়েছে, যা সোমবার আরও তীব্র হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

টিএম