ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসকে নির্মূলের লক্ষ্য নিয়ে অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। জবাবে ইসরায়েলি সেনাদের বিরুদ্ধে পাল্টা প্রতিরোধ চালিয়ে যাচ্ছে হামাসও।

টানা সাত মাসেরও বেশি সময় ধরে চলছে সংঘাত। এমন অবস্থায় ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে নেতানিয়াহুর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ইসরায়েলের বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ার লাপিদ। নির্দিষ্ট কিছু ‘শর্তের অধীনে’ এই পদক্ষেপ নিতে বলেছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (২৩ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেশ কিছু শর্ত ও গ্যারান্টির বিনিময়ে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে মেনে নেওয়ার জন্য বুধবার প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ইসরায়েলের বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ার লাপিদ।

ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে তিন ইউরোপীয় দেশ– স্পেন, আয়ারল্যান্ড ও নরওয়ে নিজেদের পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করার পর লাপিদ এই আহ্বান জানালেন। ইউরোপীয় এই দেশগুলো বলেছে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি আলোচনা এগিয়ে নিতে সহায়তা করবে।

লাপিদ অবশ্য নেতানিয়াহুকে এই ধরনের অবস্থান গ্রহণ করতে বাধা দেওয়ার জন্য ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গভিরকে দায়ী করেছেন বলে স্থানীয় ইয়েদিওথ আহরনোথ পত্রিকা জানিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘নেতানিয়াহুর ঘোষণা করা উচিত, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যোগদানসহ কিছু শর্ত এবং নির্দিষ্ট গ্যারান্টির অধীনে তিনি একটি ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্র মেনে নিতে ইচ্ছুক।’ তবে এই শর্তাবলী এবং গ্যারান্টি বা প্রস্তাবিত ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতার প্রকৃতি সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিতভাবে কিছু বলেননি লাপিদ।

চরমপন্থি বেন-গভিরের সমালোচনা করে ইসরায়েলের বিরোধীদলীয় এই নেতা বলেছেন, ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তুতি সম্পর্কে ঘোষণা করার ‘অনুমতি তিনি নেতানিয়াহুকে দেবেন না’। এমনকি বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘পাগলামিতে বাস করা’ বলেও বর্ণনা করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘এই সরকার পারবে না। আমাদের এটিকে (নেতানিয়াহু সরকার) বাড়িতে পাঠাতে হবে এবং একটি কার্যকরী সরকার গঠন করতে হবে।’

আনাদোলু বলছে, ২০২২ সাল থেকে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে ইসরায়েলে অতি-কট্টরপন্থি জোট সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। উগ্র ডানপন্থি এই সরকার স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ধারণার তীব্র বিরোধিতা করে থাকে।

এদিকে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে নিজেদের পরিকল্পনার কথা স্পেন, আয়ারল্যান্ড ও নরওয়ে এমন এক সময়ে ঘোষণা করল যখন গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব সত্ত্বেও ইসরায়েল অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে তার নৃশংস আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে। 

এছাড়া ফিলিস্তিন ইতোমধ্যে আটটি ইউরোপীয় দেশের কাছ থেকে স্বীকৃতি পেয়েছে। দেশগুলো হচ্ছে: বুলগেরিয়া, পোল্যান্ড, চেক প্রজাতন্ত্র, রোমানিয়া, স্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরি, সুইডেন এবং গ্রীক সাইপ্রিয়ট প্রশাসন।

উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।

এছাড়া ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি এই আক্রমণের ফলে গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ৩৫ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত এবং আরও প্রায় ৮০ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন।

মূলত ইসরায়েলি আক্রমণ গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজার সকলেই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন।

এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরায়েল ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে।

টিএম