উত্তর খুঁজছেন তদন্তকারীরা
ডাক্তার দেখানোর কথা বলে ওই ফ্ল্যাটে কেন গিয়েছিলেন এমপি আনার?
চিকিৎসার জন্য ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে গিয়ে খুন হয়েছেন সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার। তবে তার মরদেহ এখনও উদ্ধার করা যায়নি। তদন্তকারীরা এই বিষয়ে জোরগতিতে কাজ করছেন।
ভারতের কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলোও এই তদন্তে সহযোগিতা করছে। মরদেহ উদ্ধারের পাশাপাশি তদন্তকারীরা এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা চালাচ্ছেন। এমনকি ডাক্তার দেখাতে যাওয়ার কথা বলে বন্ধুর বাড়ি থেকে বের হওয়া এমপি আনোয়ারুল কেন রাজারহাটের ওই ফ্ল্যাটে গিয়েছিলেন সেই প্রশ্নের উত্তরও খুঁজছেন তদন্তকারীরা।
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার (২৩ মে) এক প্রতিদেনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ অনলাইন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চিকিৎসার জন্য ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে যাওয়া ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একজন এমপিকে খুন করা হয়েছে বলে বুধবার জানিয়েছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে কলকাতার রাজারহাট অ্যাপার্টমেন্টের সিসিটিভি ফুটেজে ওই এমপিকে সর্বশেষ দেখা গেছে কিন্তু লাশ খুঁজে বের করতে ব্যর্থ হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ।
দ্য টেলিগ্রাফ অনলাইন বলছে, ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের (৫৪) হত্যাকাণ্ড ঘিরে রহস্য ঘনীভূত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সীমান্তের এপারের (পশ্চিমবঙ্গের) পুলিশ সূত্র তাকে ব্যবসায়িক বিরোধ ও ফাঁদে ফেলা হয়েছিল বলে দাবি করেছে।
এছাড়া বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী “এই খুনে” জড়িত থাকার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তারের ঘোষণা দিয়েছেন।
আনোয়ারুল আজীম আনার গত ১২ মে নদীয়ার গেদে হয়ে কলকাতায় পৌঁছান এবং পরের দিন নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া যায় বলে তদন্তকারী দলের একটি সূত্র জানিয়েছে। এরপর বুধবার সকালে বিধাননগর পুলিশ রাজারহাটের হাউজিং কমপ্লেক্সে তল্লাশি চালায়। মূলত গত ১৩ মে তিনজনের সাথে এই হাউজিং কমপ্লেক্সে তার প্রবেশের দৃশ্য সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে।
পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) এক সিনিয়র অফিসার বলেছেন, ‘আমরা ওই হাউজিং কমপ্লেক্সের একটি ফ্ল্যাটের বেডরুম, ওয়াশরুম এবং একটি ওয়াশবেসিনে লাল রঙের তরল পেয়েছি। পরে আমরা ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য সেসব নমুনা পাঠিয়েছি।’
তবে বুধবার রাত পর্যন্ত আনোয়ারুল আজীম আনারের লাশের সন্ধান পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বুধবার গণমাধ্যমকে বলেছেন: ‘তাকে (আনার) খুন করা হয়েছে এবং এটি একটি পূর্বপরিকল্পিত কাজ। এই মামলায় বাংলাদেশ থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তদন্ত এখনও চলছে।’
গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য কলকাতায় যান আওয়ামী লীগ দলীয় এই সংসদ সদস্য। পরের দিন, ১৩ মে চিকিৎসক দেখাতে হবে জানিয়ে দুপুর ১টা ৪১ মিনিটে ভারতের বরাহনগরের বাসিন্দা গোপাল বিশ্বাসের বাড়ি থেকে বের হন আনোয়ারুল। সন্ধ্যায় ফিরবেন বলেও জানান তিনি।
এরপর ১৬ মে থেকে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন তিনি। পরে ১৮ মে থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন সংসদ সদস্যের পরিচিত ও ‘বন্ধু’ বরাহনগরের বাসিন্দা গোপাল। নিখোঁজ প্রতিবেদনে বলা হয়, তিনি চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছেন বলে বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় গোপাল বিশ্বাসকে জানান আনোয়ারুল আজিম।
এরপর আনোয়ারুল আজিম আনারের খোঁজে তল্লাশি শুরু করে কলকাতা পুলিশ।
দ্য টেলিগ্রাফ অনলাইন বলছে, এমপির মৃত্যু নিয়ে জল্পনা-কল্পনার মধ্যে বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় তদন্তের গতি বাড়ানোর জন্য দিল্লিতে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেছে এবং এরপরই রাজ্য পুলিশকে সহায়তা করার জন্য কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গত কয়েকদিন ধরে ভারতের তদন্তকারীরা মামলার বিষয়ে ঢাকায় তদন্তকারীদের সঙ্গে সমন্বয় করছিলেন। একটি সূত্র জানিয়েছে, ‘কিছু লোক তাকে (আনার) কলকাতায় আসতে প্রলুব্ধ করেছিল এবং তাকে আটকে রেখে হত্যা করা হয়েছিল বলে জানতে পারা গেছে।’
সূত্রটি আরও জানিয়েছে, ‘আনোয়ারুল আজিম তার হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের চিনতেন... তাদের একজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী, যার সাথে আনারের কিছু বিরোধও ছিল এবং সেই এই হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্র করেছিল।’
সূত্রের বরাত দিয়ে টেলিগ্রাফ অনলাইন বলছে, ওই ব্যবসায়ী কলকাতায় এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ছিলেন এবং সেই সময়টিতে তিনি রাজারহাট কমপ্লেক্সে এক নারী এবং অন্য একজন ব্যবসায়িক সহযোগীর সাথে ছিলেন।
সূত্রটি আরও জানায়, ওই ব্যবসায়ী গত ১০ মে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হন এবং এর আগেই ‘পুরো অপারেশনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য তিনি বাংলাদেশ থেকে কয়েকজনকে কলকাতায় নিয়ে আসেন’।
‘অপারেশনের সাথে জড়িত সবাই বাংলাদেশি এবং তাদের বেশিরভাগই ইতোমধ্যেই ভারত ছেড়েছে,’ বলেও সূত্রটি জানিয়েছে।
আরও পড়ুন
এদিকে তদন্তের সাথে যুক্ত আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, গত ১৩ মে আনারকে রাজারহাট কমপ্লেক্সের ওই ফ্ল্যাটে প্রবেশের এক ঘণ্টার মধ্যে হত্যা করা হয়েছিল বলে বিশ্বাসযোগ্য কারণ রয়েছে। ডাক্তার দেখাতে যাওয়ার কথা বলে বরাহনগরের বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাংলাদেশি এই সংসদ সদস্য কেন রাজারহাটে গেলেন সেটিও বোঝার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা।
সূত্রটি বলছে, ‘প্রাথমিকভাবে খুনিরা তার (আনার) সেলফোন ব্যবহার করে তার বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের সদস্যদের মেসেজ পাঠিয়েছিল... এরপর তারা মোবাইল থেকে সিম কার্ডটি সরিয়ে বিহারে পাঠিয়ে দেয়, আর সেটিই আমাদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করেছিল।’
আনার বরাহনগর থেকে যে গাড়িতে উঠেছিল তার চালককে শনাক্ত করার পরে তদন্তকারীরা অবশেষে রাজারহাট কমপ্লেক্সের ওই ফ্ল্যাটে পৌঁছায়। সূত্রটি বলেছে, ‘তিনি হাউজিং কমপ্লেক্সের কাছাকাছি কোথাও ওই গাড়ি থেকে নেমে অন্য গাড়িতে উঠেছিলেন... আমরা মিসিং লিংকগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।’
টিএম