হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি। ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। এরপরই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা।

প্রেসিডেন্ট রাইসির মর্মান্তিক মৃত্যুতে মর্মাহত হয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অন্যদিকে ইরানি প্রেসিডেন্টের মৃত্যুর ঘটনায় গভীর সমবেদনা এবং সহানুভূতি প্রকাশ করে শোক পালনের কথা জানিয়েছে পাকিস্তান।

সোমবার (২০ মে) এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স এবং সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

আল জাজিরা জানিয়েছে, রাইসির মর্মান্তিক মৃত্যুতে তিনি ‘গভীরভাবে শোকাহত’ বলে জানিয়েছেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্ত্র মোদি। তিনি আরও বলেছেন, ইরানের প্রয়াত এই প্রেসিডেন্ট ‘ভারত-ইরান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে শক্তিশালী করতে’ অবদান রেখেছিলেন।

সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া এক পোস্টে মোদি লিখেছেন, ‘তার (ইব্রাহিম রাইসি) পরিবার এবং ইরানের জনগণের প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা। ভারত এই দুঃখের সময়ে ইরানের পাশে আছে।’

এদিকে ইরানি প্রেসিডেন্টের মৃত্যুর ঘটনায় গভীর সমবেদনা এবং সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেছেন, ‘আমি এবং পাকিস্তানের সরকার ও জনগণ এই ভয়ানক ক্ষতির জন্য ইরানি জাতির প্রতি আমাদের গভীর সমবেদনা ও সহানুভূতি প্রকাশ করছি। শহীদদের রুহ বেহেশতে শান্তিতে থাকুক। মহান ইরানি জাতি তাদের প্রথাগত সাহসের মাধ্যমেই এই ট্র্যাজেডি কাটিয়ে উঠবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মর্মান্তিক এই ঘটনায় পাকিস্তান একদিনের জন্য শোক পালন করবে এবং প্রেসিডেন্ট রাইসি ও তার সঙ্গীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং ভ্রাতৃপ্রতিম ইরানের সাথে সংহতি জানাতে পাকিস্তান তার পতাকা অর্ধনমিত করবে।’

এক্সে দেওয়া এক বার্তায় কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানি বলেছেন, ‘বেদনাদায়ক হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ান এবং অন্যান্য কর্মকর্তাদের মৃত্যুতে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সরকার ও জনগণের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা এবং তাদের জন্য মহান আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা প্রার্থনা করছি।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে তাদের এবং তাদের পরিবারের জন্য ধৈর্য ও সান্ত্বনার জন্য করুণা ও ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আমরা আল্লাহর জন্য এবং আমরা তাঁর কাছেই ফিরে যাব।’

ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মাদ শিয়া আল-সুদানী এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘দুর্ভাগ্যজনক দুর্ঘটনায় ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট  ইব্রাহিম রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ান এবং তাদের সঙ্গীদের মৃত্যুর দুঃখজনক সংবাদ গভীর বিষাদের সাথে আমরা পেয়েছি। বেদনাদায়ক এই ট্র্যাজেডির সময় আমরা ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আলী খামেনি এবং ইরানি জাতি, দেশটির সরকার ও জনগণের প্রতি আমাদের আন্তরিক সমবেদনা ও সহানুভূতি প্রকাশ করছি।’

এদিকে ইরানের সঙ্গে ‘পূর্ণ সংহতি’ প্রকাশ করেছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। ফিলিস্তিনি এই গোষ্ঠীটি বলেছে, তারা প্রেসিডেন্ট রাইসি এবং অন্যান্য কর্মকর্তাদের মৃত্যুর পরে ইরানি জনগণের সঙ্গে ‘বেদনা ও দুঃখ’ ভাগ করে নিচ্ছে এবং ইরানের সাথে ‘পূর্ণ সংহতি’ প্রকাশ করেছে।

হামাস আরও বলেছে, প্রয়াত ইরানি কর্মকর্তারা ফিলিস্তিনি জনগণের সমর্থনে এবং গাজার চলমান যুদ্ধ বন্ধ করার প্রচেষ্টাসহ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের জন্য ‘সম্মানজনক অবস্থান’ নিয়েছিলেন।

হামাস এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান এই বিরাট ক্ষতির প্রভাব কাটিয়ে উঠবে বলে আমরা আত্মবিশ্বাসী; ভ্রাতৃপ্রতিম ইরানি জনগণের এমন কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে যা এই গুরুতর সংকট মোকাবিলা করতে পারে।’

অন্যদিকে ইয়েমেনের ইরানপন্থি শক্তিশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী হুথিরাও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। হুথি গোষ্ঠীর সুপ্রিম রেভোল্যুশনারি কমিটির প্রধান মোহাম্মদ আলী আল-হুথি এক্সে জানিয়েছেন, ‘ইরানি জনগণ, ইরানের নেতৃত্ব এবং প্রেসিডেন্ট রাইসির পরিবার ও প্রতিনিধি দলের প্রতি আমাদের গভীর সমবেদনা। আমরা মহান আল্লাহর কাছে তাদের পরিবারের ধৈর্য ও সান্ত্বনার জন্য দোয়া করছি। সত্যই আমরা আল্লাহর জন্য এবং তাঁর কাছেই আমরা ফিরে যাব।’

এছাড়া প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুতে ইরান এবং দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আলী খামেনির প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছেন ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। তিনি বলেছেন, রাইসি ভেনিজুয়েলার ‘নিঃশর্ত বন্ধু’ ছিলেন।

সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া এক পোস্টে মাদুরো লিখেছেন, ‘বলিভারিয়ান রিপাবলিক অব ভেনিজুয়েলার পক্ষ থেকে (আপনাকে) আন্তরিক আলিঙ্গন। আপনি ও ইরান মর্যাদা, নৈতিকতা এবং প্রতিরোধের উদাহরণ।’

টিএম