টানা সাত মাসেরও বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে আগ্রাসন চালাচ্ছে ইসরায়েল। এর মধ্যেই উঠছে গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন। এছাড়া যুদ্ধ শেষ হলে গাজার ভবিষ্যৎ কী হবে তা নিয়ে পরিকল্পনা দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রও ইসরায়েলি নেতাদের ওপর চাপ দিচ্ছে।

তবে তেমন কোনও পরিকল্পনা এখনও সামনে আনতে পারেনি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সরকার। এমন অবস্থায় পরিকল্পনা প্রণয়নে ব্যর্থতার জন্য নেতানিয়াহুর দিকে আক্রমণ শানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় যুদ্ধোত্তর পরিকল্পনার প্রশ্নে নেতানিয়াহু সরকারের ব্যর্থতার জন্য খোলাখুলি হতাশা প্রকাশ করেছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট। এতে করে সামরিক অভিযানের দিকনির্দেশনা নিয়ে ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিপরিষদের ভেতরেই দ্বন্দ্ব ও বিভক্তির বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে।

একইসঙ্গে গাজায় বেসামরিক ও সামরিক শাসন করার কোনো পরিকল্পনা ইসরায়েলের নেই বলেও প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে জনসমক্ষে ঘোষণা করার জন্য অনুরোধ করেছেন গ্যালান্ট।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেছেন, ‘(গত বছরের) অক্টোবর থেকে, আমি মন্ত্রিসভায় এই বিষয়টি ধারাবাহিকভাবে উত্থাপন করছি এবং কোনো সাড়া পাইনি।’

প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু অবশ্য গ্যালান্টের এই অভিযোগের কঠোর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী দুই ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাস এবং ফাতাহকে উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, তিনি ‘হামাস্তানের বিনিময়ে ফাতাহস্তান পেতে প্রস্তুত নন’।

গ্যালান্ট সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, সিদ্ধান্তহীনতা গাজায় কেবল দুটি খারাপ বিকল্প রেখে যাবে: হয় হামাসের শাসন বা না হয় ইসরায়েলি সামরিক শাসন। তিনি বলেন, এগুলো ‘আমাদের সামরিক অর্জনগুলোকে ক্ষয় করবে, হামাসের ওপর চাপ কমিয়ে দেবে এবং বন্দিদের মুক্তির জন্য যথাযথ কাঠামো অর্জনের সম্ভাবনাকে ধ্বংস করবে।’

যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার আরেক সদস্য বেনি গ্যান্টজ - যিনি অতীতে নেতানিয়াহুর সাথে দ্বিমত পোষণ করেছেন - প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সাথে একমত হওয়ার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন: ‘গ্যালান্ট সত্য কথা বলে। যে কোনো মূল্যে দেশের জন্য সঠিক কাজ করাটাই নেতৃত্বের দায়িত্ব।’

গ্যালান্ট বলেছেন, তার অধীনে থাকা প্রতিরক্ষা দপ্তর গত বছরের অক্টোবরে গাজায় ইসরায়েলের স্থল আক্রমণ শুরু হওয়ার রাতেই মন্ত্রিসভায় একটি যুদ্ধ পরিকল্পনা পেশ করেছিল। তিনি বলেন, পেশ করা সেই পরিকল্পনাগুলোর মধ্যে ‘স্থানীয়, শত্রুতামূলক মনোভাব নেই এমন ফিলিস্তিনি শাসন প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাবও অন্তর্ভুক্ত ছিল।’

তিনি বলেন, এই প্রস্তাবগুলো নিয়ে কখনো বিতর্ক হয়নি, কোনো বিকল্পও উপস্থাপন করা হয়নি। গ্যালান্ট বলেন, পরিকল্পনা নির্ধারণে ব্যর্থতা ইসরায়েলকে গাজার বিষয়ে ‘বিপজ্জনক পথের’ দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

তিনি সেই সম্ভাবনাটিকে ‘কৌশলগতভাবে, সামরিকভাবে এবং নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ থেকে ইসরায়েল রাষ্ট্রের জন্য নেতিবাচক এবং বিপজ্জনক বিকল্প’ হিসাবেও বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমাকে আবার বলতে হবে: আমি গাজায় ইসরায়েলি সামরিক শাসন প্রতিষ্ঠায় রাজি হব না। ইসরায়েল গাজায় বেসামরিক শাসনও প্রতিষ্ঠা করবে না।’

গ্যালান্টের ভাষায়, ‘আমি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এবং সেটি ঘোষণা করার আহ্বান জানাচ্ছি যে, ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় বেসামরিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করবে না, ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় সামরিক শাসনও প্রতিষ্ঠা করবে না এবং গাজা উপত্যকায় হামাসের শাসনের বিকল্প শাসন অবিলম্বে প্রতিষ্ঠা করা হবে।’

এদিকে বুধবার ইউক্রেন সফরে গিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেছেন, ইসরায়েলকে গাজার ভবিষ্যতের জন্য একটি সুস্পষ্ট পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে।

তিনি বলেন, ‘সেখানে কোনও অরাজকতা হবে না এবং এমন কোনও শূন্যতাও থাকতে পারে না যা বিশৃঙ্খলা দিয়ে পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

নেতানিয়াহু এর আগে অবশ্য জোর দিয়ে বলেছেন, হামাস যতদিন এই ভূখণ্ডে থাকবে ততদিন গাজার ভবিষ্যৎ শাসন কাদের হাতে থাকবে তা নিয়ে আলোচনা কেবল ‘অর্থহীন’।

টিএম