যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন (ফাইল ছবি)

ইসরায়েলকে আরও ১০০ কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি অর্থের অস্ত্র সহায়তা দিতে চাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। নতুন এই অস্ত্র সহায়তার মধ্যে ট্যাংকের গোলাবারুদ, মর্টার এবং কৌশলগত সাঁজোয়া যান-সহ অন্যান্য আরও সামরিক সরঞ্জাম রয়েছে।

যদিও এই প্যাকেজটি এখনও অনুমোদন করা হয়নি। রাফাতে হামলা চালানো নিয়ে মতবিরোধ থেকে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলে অস্ত্রের চালান আটকে দেওয়ার যে হুমকি দিয়েছিল, তার সপ্তাহখানেকের মাথায় নতুন এই তথ্য সামনে এলো।

বুধবার (১৫ মে) এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা ও ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।

মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট ইসরায়েলকে ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি অস্ত্র সহায়তার প্যাকেজ নিয়ে সামনে এগিয়ে চলেছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা দেশটির মিডিয়াকে জানিয়েছেন।  নতুন এই অস্ত্র সহায়তার মধ্যে ট্যাংকের গোলাবারুদ, মর্টার এবং কৌশলগত সাঁজোয়া যান-সহ অন্যান্য আরও সামরিক সরঞ্জাম রয়েছে।

আল জাজিরা বলছে, অস্ত্র সহায়তার এই প্যাকেজটি এখনও অনুমোদন করা হয়নি। এই প্যাকেজে ট্যাংক গোলাবারুদের জন্য ৭০০ মিলিয়ন ডলার, কৌশলগত সাঁজোয়া যানের জন্য ৫০০ মিলিয়ন ডলার এবং মর্টার রাউন্ডের জন্য ৬০ মিলিয়ন ডলার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

অন্যদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েলের জন্য ১০০ কোটি ডলারের নতুন অস্ত্র নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন বলে প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বুধবার সকালে রিপোর্ট করেছে।

কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই সহায়তা চুক্তিতে ট্যাংক গোলাবারুদে ৭০০ মিলিয়ন, কৌশলগত সাঁজোয়া যানবাহনে ৫০০ মিলিয়ন এবং মর্টার রাউন্ডের জন্য ৬০ মিলিয়নের সম্ভাব্য স্থানান্তর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

গাজার রাফাতে পরিকল্পিত ইসরায়েলি আক্রমণ নিয়ে সাম্প্রতিক মতবিরোধের জেরে ইসরায়েলে বোমার চালান আটকে দেওয়ার কয়েকদিন পর সর্বশেষ এই অস্ত্র প্যাকেজটির খবর সামনে এলো।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বলছে, বাইডেন প্রশাসন কমপক্ষে দুই সপ্তাহ ধরে ইসরায়েলে বেশ কয়েকটি অস্ত্রের চালান আটকে রেখেছে। বিষয়টি সম্পর্কে অবগত একটি সূত্র গত সপ্তাহে এই তথ্য জানিয়েছে বলেও জানানো হয়।

মূলত খবরটি প্রথম সামনে আনে সংবাদমাধ্যম পলিটিকো। মার্কিন এক কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে সংবাদমাধ্যমটি বলেছে, ওয়াশিংটন ইসরায়েলকে একটি রাজনৈতিক বার্তা পাঠাতে চায়। ওয়াশিংটন বলেছে, তারা উপযুক্ত এবং বিশ্বাসযোগ্য মানবিক পরিকল্পনা ছাড়া গাজার সীমান্ত শহর রাফাতে ইসরায়েলি আক্রমণকে সমর্থন করতে পারে না।

যাইহোক, বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার মূল্যের মার্কিন অস্ত্র ইসরায়েলের জন্য এখনও পাইপলাইনে রয়ে গেছে। বোমার একটি চালান বিলম্বিত হওয়া এবং প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের অন্যদের এই বিষয়ে পর্যালোচনা সত্ত্বেও আক্রমণে এসব অস্ত্রের ব্যবহার ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের ওপর আরও ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে পারে বলে উদ্বেগ রয়েছে।

একজন ঊর্ধ্বতন মার্কিন কর্মকর্তা গত সপ্তাহে বলেন, বাইডেন প্রশাসন অস্ত্র সরবরাহের বিষয়টি পর্যালোচনা করেছে যা গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফাতে বড় আক্রমণের জন্য ব্যবহার করতে পারে ইসরায়েল। মূলত ইসরায়েলি আগ্রাসন থেকে বাঁচতে গাজা উপত্যকার দক্ষিণ প্রান্তের এই শহরটি গত সাত মাস ধরে ১০ লাখেরও বেশি বাস্তুচ্যুত মানুষের কাছে আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে।

আর এরপরই বোমার একটি চালান থামিয়ে দেয় যুক্তরাষ্ট্র।

এদিকে অস্ত্রের নতুন এই প্যাকেজের বিষয়ে মার্কিন কংগ্রেসকে অনানুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। মূলত এই সহায়তা প্যাকেজ ইসরায়েলে পাঠানোর আগে কংগ্রেসের অনুমোদন নিতে হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কংগ্রেসের একজন সহকারী জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এসব অস্ত্র সংগ্রহ করা হবে এবং এর দাম ১০০ কোটি ডলারের বেশি। সম্প্রতি প্রতিরক্ষা সহায়তা হিসেবে কংগ্রেসে যে ৯৫ বিলিয়ন ডলারের প্রস্তাব পাস হয়, তা থেকেই এই অস্ত্র সরবরাহ করা হবে।

উল্লেখ্য, গাজায় সাত মাস যুদ্ধের পর ইসরায়েল জোর দিয়ে বলছে, রাফা দখল এবং হামাসের শেষ অবশিষ্ট ব্যাটালিয়নগুলোকে নির্মূল করা ছাড়া ‘বিজয় অর্জন’ অসম্ভব।

কিন্তু জাতিসংঘ এবং পশ্চিমা শক্তিধর দেশগুলো সতর্ক করে বলেছে, রাফাতে সর্বাত্মক হামলা হলে ব্যাপক বেসামরিক হতাহতের ঘটনা ঘটতে পারে এবং মানবিক বিপর্যয় প্রকট আকার নিতে পারে।

আর এমন অবস্থার মধ্যেই ইসরায়েলকে আরও ১০০ কোটি ডলারের অস্ত্র সহায়তা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে বাইডেন প্রশাসন সামনে এগিয়ে চলেছে বলে খবর মিলল। 

টিএম