কৌশলগত প্রতিষ্ঠানগুলোর বাইরে অন্যান্য সব সরকারি কোম্পানি বেসরকারি খাতে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাকিস্তানের সরকার। দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ মঙ্গলবার এই ঘোষণা দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে পাকিস্তানের জাতীয় দৈনিক ডন জানিয়েছে, সরকারি বিভিন্ন কোম্পানি ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের বিগত কয়েক বছরের পণ্য-পরিষেবা উৎপাদন ও অর্জিত মুনাফার সার্বিক অবস্থা যাচাই শেষে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। চলতি ২০২৪ সাল থেকে বাস্তবায়ন করা শুরু হবে এই পরিকল্পনা এবং আগামী ২০২৯ সালের মধ্যে এ সব প্রতিষ্ঠানকে বেসরকারি খাতে স্থানান্তর করা হবে।

মূলত সরকারি অর্থ সাশ্রয়ের জন্যেই এ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর  থেকে বলা হয়েছে, ‘আগামী ৫ বছরের মধ্যে কৌশলগত নয়— এমন সব প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানি বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেবে সরকার। করদাতা জনগণের অর্থ সাশ্রয়ের জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

প্রসঙ্গত, পর্যাপ্ত বরাদ্দের অভাব, অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির জেরে বছরের পর বছর ধরে লোকসানে রয়েছে পাকিস্তানের সরকারি পণ্য ও পরিষেবা কোম্পানিগুলো। এসবের মধ্যে সরকারি বিমান পরিষেবা কোম্পানি পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সসহ (পিআইএ) কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রীতিমতো ধুঁকছে।

তবে দেশটির কোনো সরকার এর আগে এ ইস্যুতে বেশি মনযোগ দেয়নি। আগেও বেসরকারি খাতে কোম্পানি স্থানন্তরের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, কিন্তু সেসবের অধিকাংশই সফল হয়নি। মূলত রাজনৈতিক কারণে টানা লোকসানে থাকা সত্ত্বেও এই কোম্পানিগুলোকে টিকিয়ে রাখছে ইসলামাবাদ।

কিন্তু ডলারের মজুত তলানিতে ঠেকে যাওয়ায় প্রায় দুই বছর ধরে যে নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে দেশটি, সেই সংকট সরকারের ‘হুঁশ’ ফিরিয়েছে বলে মনে করেন অনেক অর্থনীতি বিশ্লেষক। ডলারের মজুত ন্যূনতম স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরাতে বিস্তর চেষ্টা-তদবির শেষে গত বছর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছ থেকে ৩০০ কোটি ডলার ঋণ নেয় পাকিস্তান। সেই সঙ্গে আইএমএফের বিভিন্ন পরামর্শও মেনে চলার প্রতিশ্রুতি দেয় সরকার।

ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির জন্য সোমবার ইসলামাবাদে পাকিস্তানের সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে আইএমএফ প্রতিনিধিদের। সেই বৈঠকের পরই মঙ্গলবার এই বিবৃতি এলো প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে।

প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরসূত্রে আরও জানা গেছে, শিগগিরই বেসরকারি খাতে স্থানান্তর করা হবে— এমন সব সরকারি কোম্পানির একটি প্রাথমিক তালিকাও প্রস্তুত করা হয়েছে ইতোমধ্যে । তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে পিআইএ, চারটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানি (এই চারটির মধ্যে দু’টির বার্ষিক বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াটের বেশি), ১০টি বিদ্যুৎ সরবরাহ কোম্পানি, নিউইয়র্কের ম্যানহাটানে অবস্থিত বিলাসবহুল রুজভেল্ট হোটেল এবং দু’টি বিমা কোম্পানিসহ ২৫টি প্রতিষ্ঠান।

সূত্র : রয়টার্স

এসএমডব্লিউ