অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্রিটিশ ফার্মাসিউটিক্যালস জায়ান্ট অ্যাস্ট্রাজেনেকার যৌথভাবে তৈরি করা করোনাভাইরাসের টিকার মার্কিন ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে অংশ নেওয়া এক নারী ‘‘স্থায়ীভাবে অচল’’ হয়ে গেছেন বলে দাবি করেছেন। টিকা নেওয়ার পর তার শরীরে দেখা দেওয়া পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কোনও চিকিৎসা অ্যাস্ট্রাজেনেকা দিতে পারেনি অভিযোগ করে ব্রিটিশ এই ওষুধপ্রস্তুতকারক কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তিনি।

ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ৪২ বছর বয়সী ব্রায়ান ড্রেসেন নামের ওই নারী বলেছেন, ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। এই টিকা নেওয়ার পর তার শরীরে গুরুতর নিউরোলজিক্যাল জটিলতা তৈরি হয়; যার ফলে তিনি ‘‘স্থায়ীভাবে অচল’’ হয়ে যান।  

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলীয় উতাহ রাজ্যে অ্যাস্ট্রাজেনেকার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন তিনি। আদালতে দায়ের করা মামলায় দেশটির অবসরপ্রাপ্ত এই শিক্ষক বলেছেন, অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই তার শরীরে তীব্র পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

টেলিগ্রাফ বলেছে, অ্যাস্ট্রাজেনেকার বিরুদ্ধে এমন স্থায়ীভাবে অচল হয়ে যাওয়ার অভিযোগ তুলে যুক্তরাষ্ট্রে ব্রায়ান ড্রেসেনই প্রথম মামলা করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ওই সময় যুক্তরাষ্ট্রে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালানো হলেও দেশটিতে এই টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হয়নি।

আদালতের নথিতে ওই নারী দাবি করেছেন, তিনি টিকার ট্রায়ালে অংশ নেওয়ার জন্য ব্রিটিশ ওষুধ প্রস্তুতকারক এই কোম্পানির সাথে একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন। চুক্তিতে বলা হয়েছিল, টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি হলে তার চিকিৎসার খরচ দেবে অ্যাস্ট্রাজেনেকা।

ব্রায়ান ড্রেসেন বলেছেন, ২০২০ সালের নভেম্বরে টিকা নেওয়ার পরপরই তিনি শরীরে তীব্র ব্যথা অনুভব করেন। এ জন্য তিনি নিজ খরচে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। চুক্তি অনুযায়ী, চিকিৎসার ব্যয় অ্যাস্ট্রাজেনেকার দেওয়ার কথা থাকলেও সেটি করা হয়নি।

টেলিগ্রাফের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, পরে তার শরীরে পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি ধরা পড়ে; যা তাকে শারীরিকভাবে অক্ষম করে তোলে। টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত স্নায়ু শরীরকে অসাড় করে ফেলে এবং তীব্র ব্যথার সৃষ্টি করে। সেসময় তার শরীরের এই জটিলতা টিকার সাথে সংশ্লিষ্ট বলে জানান চিকিৎসকরা।

ড্রেসেন বলেন, ‘‘এই কারণে আমি কোনও কাজই করতে পারি না। এমনকি এখন পর্যন্তও আমি স্থায়ীভাবে অচল। আমি এখনও সেই ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্ন দেখি যে, ইনজেকশনের সূঁচের সংবেদনশীলতা আমার পুরো শরীরে— মাথা থেকে পা পর্যন্ত দিনে ২৪ ঘণ্টা, সপ্তাহের সাত দিন পর্যন্ত অনুভব করি।’’

তিনি বলেন, টিকা নেওয়ার পর বেশ কয়েকবার তাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। তার হাজার হাজার ডলার চিকিৎসা বিল গুণতে হয়েছে। তবে অ্যাস্ট্রাজেনেকার পক্ষ থেকে তাকে সামান্য অর্থ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। পরিমাণ কম হওয়ায় তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন বলে জানিয়েছেন।

ড্রেসেন বলেন, এখন তিনি নিজের শরীরের ছায়া হয়ে উঠেছেন : কাজ করতে পারেন না, যেকোনও ধরনের অ্যাথলেটিক কর্মকাণ্ডে অক্ষম, কারও অভিভাবকের দায়িত্ব পালনেও ব্যর্থ এবং একেবারে গাড়ি চালাতেও পারেন না।

তবে এই মামলার বিষয়ে অ্যাস্ট্রাজেনেকার পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনও মন্তব্য করা হয়নি।

সূত্র: দ্য টেলিগ্রাফ।

এসএস