ইসরায়েলের হামলায় ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার বেশিরভাগই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে আগেই। এখন বাকি রয়েছে অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডটির রাফা শহর। গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় এই শহরেই এবার হামলা জোরদার করেছে ইসরায়েল।

আর এরই জেরে শহরটি ছেড়ে ইতোমধ্যেই পালিয়ে গেছেন ৮০ হাজারেরও বেশি মানুষ। জাতিসংঘ এই তথ্য সামনে এনেছে। ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে গাজার অন্যান্য অংশ থেকে তারা এখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন।

শুক্রবার (১০ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত সোমবার থেকে ৮০ হাজারেরও বেশি মানুষ দক্ষিণ গাজার রাফা শহর থেকে পালিয়ে গেছে বলে জাতিসংঘ জানিয়েছে। এছাড়া রাফার বিভিন্ন অংশে ক্রমাগত বোমাবর্ষণের মধ্যে ইসরায়েলি ট্যাংকগুলি শহরের কাছাকাছি এসে জড়ো হচ্ছে বলে জানা গেছে।

ফিলিস্তিনি সশস্ত্র দলগুলো বলেছে, তারা পূর্ব দিকে ইসরায়েলি সেনাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। অন্যদিকে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলেছে, তাদের স্থল বাহিনী পূর্ব রাফাতে ‘নির্দিষ্ট লক্ষ্যে তাদের কার্যকলাপ’ পরিচালনা করছে।

জাতিসংঘ আরও সতর্ক করে বলেছে, গাজায় খাদ্য ও জ্বালানি ফুরিয়ে যাচ্ছে কারণ ভূখণ্ডটি কাছাকাছি ক্রসিং দিয়ে কোনও সাহায্য পাচ্ছে না।

চলতি সপ্তাহের প্রথম দিকে ইসরায়েলি সৈন্যরা তাদের অভিযানের শুরুতে মিসরের সাথে রাফা ক্রসিংয়ের নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং পরে তা বন্ধ করে দেয়। এছাড়া জাতিসংঘ সেসময় বলেছিল, সংস্থার কর্মীদের এবং সহায়তাবাহী লরিগুলোর জন্য কেরাম শালোম ক্রসিংয়ে পৌঁছানো ছিল খুবই বিপজ্জনক।

এদিকে রাফাতে হামলা করলে ইসরায়েলে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করার যে হুমকি প্রেসিডেন্ট বাইডেন দিয়েছেন তা প্রত্যাখ্যান করেছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। তিনি এক ভিডিও বিবৃতিতে বলেছেন, ‘যদি আমাদের প্রয়োজন হয়, আমরা আমাদের নখ দিয়ে লড়াই করব। কিন্তু আমাদের নখের চেয়ে অনেক বেশি আছে।’

বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর দাবি, প্রয়োজনে ইসরায়েল ‘একাই দাঁড়াতে পারে’।

গাজায় গত সাত মাসেরও বেশি সময় ধরে আগ্রাসন পরিচালনাকারী ইসরায়েল জোর দিয়ে বলেছে, রাফা শহরটি দখল করা এবং হামাসের শেষ অবশিষ্ট ব্যাটালিয়নগুলোকে নির্মূল করা ছাড়া গাজায় বিজয় অসম্ভব।

তবে বর্বর ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে গাজার অন্যান্য অংশ থেকে ১০ লাখেরও বেশি বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি বর্তমানে রাফাতে আশ্রয় নিয়েছেন এবং জাতিসংঘ ও পশ্চিমা শক্তিধর দেশগুলো সতর্ক করে বলেছে, শহরটিতে সর্বাত্মক হামলা চালানো হলে তা ব্যাপক বেসামরিক হতাহতের কারণ হতে পারে এবং মানবিক বিপর্যয় ঘটাতে পারে।

রাফা শহরের বাসিন্দারা এবং ত্রাণকর্মীরা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার দিনজুড়ে কামান ও বিমান হামলার শব্দ ছিল অবিরাম।

ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের জন্য জাতিসংঘের সহায়তা সংস্থার (ইউএনআরডব্লিউএ) মুখপাত্র লুইস ওয়াটারিজ বিবিসিকে বলেছেন, তিনি পশ্চিম দিকের একটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে রয়েছেন এবং ‘বোমাবর্ষণের শব্দ ক্রমেই কাছাকাছি আসার বিষয়টি অনুভব করছেন’।

তিনি বলেন, ‘বিল্ডিংটি ঘন ঘন কেঁপে উঠছে। এখানে ক্রমাগত ড্রোনের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। রাফাতে মানুষের মধ্যে যে ভয় ছিল, তা এখন আতঙ্কে পরিণত হয়েছে।’

ফিলিস্তিনি মিডিয়া জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার বিকেলে আল-জেনেহ পাড়ায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় দু’জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া আরেক এলাকায় বিমান হামলায় আরও তিনজন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস এবং ইসলামিক জিহাদ বলেছে, তাদের যোদ্ধারা শহরের পূর্ব উপকণ্ঠে ইসরায়েলি ট্যাংকগুলোতে ট্যাংক-বিধ্বংসী রকেট এবং মর্টার নিক্ষেপ করেছে।

এছাড়া পশ্চিম তাল আল-সুলতান পাড়ায় একটি বাড়িতে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত পাঁচজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে তিনজন শিশু এবং তাদের মধ্যে একটি বছরের শিশু বলেও চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বুধবার সন্ধ্যায় বলেছে, তাদের সৈন্যরা ‘রাফা ক্রসিংয়ের গাজা অংশের পার্শ্ববর্তী সন্ত্রাসী অবকাঠামোতে অভিযান চালিয়েছে এবং এলাকার সন্দেহজনক ভবনগুলোতেও অভিযান পরিচালনা করেছে’, এবং প্রায় ৩০ ‘সন্ত্রাসীকে’ নির্মূল করা হয়েছে।

তারা আরও বলেছে, ইসরায়েলি বিমান সেনাদের সমর্থনে বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে।

গাজায় ইউএনআরডব্লিউএ’র ডেপুটি ডিরেক্টর স্কট অ্যান্ডারসন বিবিসিকে বলেছেন, সংস্থাটি ‘মানুষকে বিভিন্ন দিকে ছোটাছুটি করতে দেখেছে এবং এখন পর্যন্ত ৮০ হাজারেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে’। আর এর কারণ হচ্ছে- লড়াইটি ‘আরও পশ্চিম দিকে সরে রাফার কেন্দ্রে চলে এসেছে’।

তিনি আরও বলেন, ‘সম্ভবত সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয়ে হচ্ছে রাফা এবং কেরেম শালোম ক্রসিং পয়েন্ট বন্ধ রয়েছে, আমাদের জ্বালানি ফুরিয়ে যেতে শুরু করেছে। মূলত এই জ্বালানিই বাস্তুচ্যুত হওয়া লোকদের পাশাপাশি গাজার অন্যান্য লোকদের সহায়তা প্রদান করতে আমাদের সক্ষম করে।’

টিএম