ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ যদি ইউক্রেনে তার দেশের সৈন্যদের পাঠিয়ে দেন, তাহলে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী ফরাসি সেই সৈন্যদের বৈধ নিশানা হিসেবে দেখবে। বুধবার মস্কোতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা।

গত ফেব্রুয়ারিতে ম্যাক্রোঁ ভবিষ্যতে ইউক্রেনে ফ্রান্সের স্থল সৈন্য মোতায়েনের সম্ভাবনা নাকচ করছেন না বলে মন্তব্য করার পর ব্যাপক বিতর্কের শুরু হয়। ইউক্রেনে রাশিয়া জয়ী হলে ইউরোপের বিশ্বাসযোগ্যতা শূন্যে নেমে যাবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন ফরাসি এই নেতা।

মারিয়া জাখারোভা বলেছেন, ম্যাক্রোঁ নিজেই রাশিয়ার জন্য একধরনের ‘কৌশলগত অনিশ্চয়তা’ তৈরি করার ইচ্ছা থেকেই এই ধরনের হঠকারী মন্তব্যের ব্যাখ্যা করেছেন। রুশ এই কর্মকর্তা বলেছেন, আমাদের তাকে হতাশ করতে হবে। কারণ আমাদের জন্য সেই পরিস্থিতি আরও বেশি নিশ্চিত।

‘‘যদি ফরাসিরা সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে উপস্থিত হয়, তাহলে তারা অনিবার্যভাবে রুশ সশস্ত্র বাহিনীর লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবে। আমার মনে হচ্ছে, প্যারিসের কাছে ইতিমধ্যে এর প্রমাণও রয়েছে।’’

জাখারোভা বলেন, ইউক্রেনে নিহতদের মধ্যে ফরাসি নাগরিকদের সংখ্যা বাড়ছে। আর রাশিয়া ইতিমধ্যে তা দেখেছে। ফ্রান্স, ব্রিটেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হুমকির পর সোমবার  রাশিয়া বলেছে, তারা সামরিক মহড়ার অংশ হিসাবে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েনের মহড়া চালাবে।

রাশিয়া বলেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা ইউক্রেনকে কয়েক বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করে বিশ্বকে পারমাণবিক শক্তিগুলোর মাঝে সংঘর্ষের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিচ্ছে। আর এসব অস্ত্রের কিছু রাশিয়ার ভূখণ্ডের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, মস্কো নন-স্ট্র্যাটেজিক পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের প্রস্তুতি ও মোতায়েনসহ সামরিক মহড়া চালাবে। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই মহড়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

‘‘মহড়া চলাকালীন নন-স্ট্র্যাটেজিক পারমাণবিক অস্ত্রের প্রস্তুতি এবং ব্যবহারের বিষয়গুলোর মহড়া চালানোর বিষয়ে কয়েক ধাপের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

রাশিয়ার সাউদার্ন মিলিটারি ডিস্ট্রিক্টের ক্ষেপণাস্ত্র বাহিনী, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীও এই মহড়ায় অংশ নেবে। মন্ত্রণালয় বলেছে, রাশিয়ান ফেডারেশনের বিরুদ্ধে কিছু পশ্চিমা কর্মকর্তার উস্কানিমূলক বিবৃতি ও হুমকির প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়ার আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করাই এই মহড়ার লক্ষ্য।

এখন পর্যন্ত রাশিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই বিশ্বের বৃহত্তম পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র। বিশ্বের মোট ১২ হাজার ১০০টি পারমাণবিক ওয়ারহেডের মধ্যে ১০ হাজার ৬০০টিরও বেশি এই দুই দেশের অস্ত্র ভাণ্ডারে রয়েছে। তৃতীয় বৃহত্তম পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে চীনের হাতে। এরপরই পারমাণবিক অস্ত্রধর দেশের তালিকায় চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে আছে ফ্রান্স এবং ব্রিটেন।

ফেডারেশন অব আমেরিকান সায়েন্টিস্টের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে রাশিয়ার কাছে প্রায় এক হাজার ৫৫৮টি নন-স্ট্র্যাটেজিক পারমাণবিক ওয়ারহেড রয়েছে। তবে স্বচ্ছতার অভাবের কারণে রাশিয়ার এই ধরনের অস্ত্রের সঠিক পরিসংখ্যান সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায় না।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৪৫ সালে জাপানের হিরোশিমা এবং নাগাসাকি শহরে প্রথম পারমাণবিক বোমা হামলা চালানোর পর থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্বের কোনও দেশই যুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার করেনি।

সূত্র: রয়টার্স।

এসএস