জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক (ফাইল ছবি)

রাশিয়া শুধু ইউক্রেন দখল করেই ক্ষান্ত না হয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন তথা ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর ওপরেও আধিপত্য বিস্তার করতে চায় বলে বিভিন্ন মহল মনে করছে। সেই বৈরি মনোভাবের অংশ হিসেবে মস্কোর বিরুদ্ধে ইউরোপে ব্যাপক গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ উঠছে।

গুপ্তচর সন্দেহে একাধিক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। এবার জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক রাশিয়ার বিরুদ্ধে জার্মানিতে সাইবার হামলার অভিযোগ আনলেন।

অস্ট্রেলিয়া সফরকালে বেয়ারবক বলেন, রাশিয়ার সামরিক গুপ্তচর সংস্থা জিআরইউ-এর এপিটি২৮ নামের একটি ইউনিট ২০২৩ সালের জুন মাসে জার্মানির সরকারি জোটের প্রধান শরিক দল এসপিডি-র সদর দপ্তরে সাইবার হামলা চালিয়েছিল।

তার মতে, রাশিয়ার সরকারি হ্যাকাররা জার্মানির সাইবারস্পেসে যে হামলা চালিয়েছে, তা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয় এবং এর পরিণতি ভালো হবে না।

উল্লেখ্য, সেই বছরের শুরুর দিকেই নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের ই-মেইলে আড়ি পাতার চেষ্টা করা হয়েছিল বলে এসপিডি অভিযোগ করেছিল। মাইক্রোসফট কোম্পানির সফটওয়্যারে সে সময়ে অজানা নিরাপত্তাজনিত দুর্বলতার কারণেই সেটা সম্ভব হয়েছিল।

রাশিয়া এভাবে ঠিক কত গোপন তথ্য সংগ্রহ করতে পেরেছে, তা অবশ্য স্পষ্ট নয়। জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে তদন্তের ফল প্রকাশ করে বেয়ারবক রাশিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন।

সংবাদ সংস্থা ডিপিএর সূত্র অনুযায়ী, জার্মানির অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা ও সামরিক প্রতিরোধমূলক গোয়েন্দা সংস্থাও সেই তদন্তে অংশ নিয়েছিল। তদন্তকারীদের ধারণা, ইউরোপজুড়ে এক সার্বিক সাইবার গুপ্তচরবৃত্তির আওতায় জার্মানির এসপিডি দলকেও লক্ষ্যবস্তু করেছে রাশিয়া।

জ্বালানি সরবরাহ, তথ্য প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা ও এয়ানোস্পেস কোম্পানিগুলো সম্পর্কেও গোপন তথ্য সংগ্রহ করার চেষ্টা করছে মস্কো।

রাশিয়ার এপিটি২৮ ইউনিটের বিরুদ্ধে অতীতেও এমন অভিযোগ উঠেছে। ২০১৫ সালে  জার্মানির সংসদের নিম্নকক্ষ বুন্ডেসটাগের ওপরেও সেই গোষ্ঠী সাইবার হামলা চালিয়েছিল বলে সন্দেহ করা হয়। ২০০৪ সাল থেকে সক্রিয় এই ইউনিট গোটা বিশ্বে সাইবারস্পেসে গুপ্তচরবৃত্তি চালিয়ে আসছে বলে বিভিন্ন দেশের কর্তৃপক্ষ মনে করে।

‘ফ্যান্সি বেয়ার’ নামেও পরিচিত এপিটি২৮ ইউনিট ২০১৭ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে আমেরিকার ডেমোক্র্যাটিক দলের ওপরেও সাইবার হামলা চালিয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছে।

এমন পরিস্থিতিতে বার্লিনে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবাদ জানানো হতে পারে। অতীতে এমন ঘটনার জের ধরে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে। ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা বা সম্পত্তির ওপর নিয়ন্ত্রণ কেড়ে নেওয়ার মতো পদক্ষেপের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

সামরিক জোট ন্যাটোও বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বেড়ে চলা রুশ সাইবার হামলা সম্পর্কে গভীর দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেছে। তবে সে বিষয়ে খুঁটিনাটী তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।

জার্মানি, এস্তোনিয়া, লাটভিয়া, লিথুয়েনিয়া, পোল্যান্ড, চেক প্রজাতন্ত্র ও ব্রিটেনে ‘বৈরি তৎপরতার’ উল্লেখ করেছে ন্যাটো। অন্তর্ঘাত, হিংসা, সাইবার ও ইলেকট্রনিক ক্ষেত্রে ব্যাঘাত ঘটানোর মতো ঘটনা বেড়ে চলেছে।

রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভুয়া তথ্য প্রচারের মতো ‘হাইব্রিড অপারেশন’-এরও অভিযোগ করেছে ন্যাটো।

টিএম