ফাইল ছবি

করোনাভাইরাসের সেই ভয়াবহতা এখন আর নেই। কিন্তু ঘুরে ফিরে আবারও আলোচনায় করোনার টিকা। আরও নির্দিষ্টভাবে বললে কোভিশিল্ড।

এই করোনা টিকা প্রস্তুতকারী সংস্থা অ্যাস্ট্রাজেনেকা স্বীকার করে নিয়েছে, তাদের টিকায় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। কোভিশিল্ডের টিকার কারণে ‘থ্রম্বোসিস থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া সিনড্রোম’ (টিটিএস) নামে বিরল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।

যা রক্ত জমাট বাঁধিয়ে দিতে পারে। বাংলাদেশ ও ভারতের অনেকেই কোভিশিল্ডের ডোজ নিয়েছেন। সেক্ষেত্রে ঝুঁকি কতটা থাকছে? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?

ভারতের সংবাদ সংস্থা আইএএনএস-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দেশটির সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ঈশ্বর গিলাদা জানিয়েছেন, থ্রোম্বোটিক থ্রম্বোসাইটোপেনিক সিনড্রোম হলো বিরল। কিন্তু এর প্রভাব গুরুতর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। মাত্র ০.০০২ শতাংশ ক্ষেত্রেই এই ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে।

অন্যদিকে হায়দরাবাদের এক নামী বেসরকারি হাসপাতালের নিউরোলজিস্ট চিকিৎসক সুধীর কুমার অবশ্য আশ্বস্ত করেছেন, বিষয়টি নিয়ে অযথা ভয় পাওয়ার কারণ নেই। তার মতে, ‘যদি খারাপ কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হওয়ার থাকে, তাহলে এই টিকা শরীরে প্রবেশ করার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তা হয়ে যায়। টিকা নেওয়ার ১-৬ সপ্তাহের মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যাওয়ার কথা। সেক্ষেত্রে ভারতে এই টিকা নেওয়ার পর ২ বছর কেটে গেছে। তাই চিন্তার কোনও কারণ নেই।’

ভারতের ন্যাশনাল ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের কো-চেয়ারম্যান চিকিৎসক রাজীব জয়দেবও জানাচ্ছেন, এই নির্দিষ্ট পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াটি শুধুমাত্র প্রথম ডোজ নেওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে হতে দেখা গেছে। তারপর আর দেখা যায়নি।

এছাড়া ভারতে এই ‘থ্রম্বোসিস থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া সিনড্রোম’ হওয়ার কোনও খবর নেই বলেও আশ্বস্ত করেছেন তিনি।

উল্লেখ্য, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্রিটিশ-সুইডিশ ফার্মাসিউটিক্যাল জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত করোনাভাইরাসের টিকা কোভিশিল্ডে ভয়াবহ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি হতে পারে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

তারা বলেছেন, এই টিকার একটি বিরল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো মানুষের শরীরের রক্ত জমাট বাধার ব্যাধি থ্রম্বোসিস থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া সিন্ড্রোমে (টিটিএস) আক্রান্ত হওয়া। টিটিএসের কারণে মানুষের মস্তিষ্কসহ শরীরের জটিল কিছু জায়গায় রক্ত জমাট বাঁধার ঘটনা ঘটে।

এর আগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা টিকা কোভিশিল্ডের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি এই করোনা টিকা উৎপাদন করেছে ভারতীয় টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া।

মূলত ভারতে কোভিশিল্ড নামে পরিচিত এ টিকা সাধারণ সর্দিজ্বরের ভাইরাসের একটি দুর্বল সংস্করণ থেকে তৈরি। এটি শিম্পাঞ্জির দেহে হয় এবং এর নাম অ্যাডেনোভাইরাস। এতে সরাসরি ভাইরাসের প্রোটিন যাতে শরীরে ঢুকে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে না পারে, সে কারণেই অন্য একটি ভাইরাসকে ভেক্টর হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার সাথে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ভারতে কোভিশিল্ড উৎপাদন ও বাজারজাত করা হয়। ভারতের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯০ শতাংশকে করোনার এই টিকা দেওয়া হয়েছে।

টিএম