ফাইল ছবি

ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। টানা প্রায় সাত মাস ধরে চালানো এই হামলায় এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৩৪ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। বর্বর এই আগ্রাসনের জেরে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে বাড়ছে ক্ষোভ।

এমন অবস্থায় ইসরায়েল গাজায় আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করতে পারে বলে জানিয়েছেন কিছু ঊর্ধ্বতন মার্কিন কর্মকর্তা। তারা এই বিষয়টি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনকেও জানিয়েছেন।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের একটি অভ্যন্তরীণ মেমো পর্যালোচনা করে রোববার (২৮ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহকৃত অস্ত্র আন্তর্জাতিক মানবিক আইন অনুসারে ব্যবহার করার বিষয়ে যে আশ্বাস ইসরায়েল দিয়েছে, সেটিকে ‘বিশ্বাসযোগ্য বা নির্ভরযোগ্য’ বলে খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে কিছু ঊর্ধ্বতন মার্কিন কর্মকর্তা পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনকে পরামর্শ দিয়েছেন।

রয়টার্স বলছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন একটি জাতীয় নিরাপত্তা স্মারক (এনএসএম) জারি করেছিলেন। স্মারকটি অনুসারে, মার্কিন অস্ত্র ব্যবহার করে ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন না করার বিষয়ে তেল আবিবের আশ্বাস সঠিক বলে প্রতীয়মান হয়েছে কিনা তা আগামী ৮ মের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেনকে কংগ্রেসে রিপোর্ট করতে হবে।

তবে গত ২৪ মার্চের মধ্যে অন্তত সাতটি স্টেট ডিপার্টমেন্ট ব্যুরো ব্লিংকেনকে প্রাথমিক ‘মেমো’-তে তাদের মতামত পাঠিয়েছিল। এসব মেমোর বিষয়ে আগে রিপোর্ট করা হয়নি এবং এর অংশগুলোও ছিল গোপনীয়।

ইসরায়েল গাজায় আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘন করতে পারে কিনা তা নিয়ে স্টেট ডিপার্টমেন্টের অভ্যন্তরে এখন পর্যন্ত বিভক্তির সবচেয়ে বিস্তৃত চিত্র পাওয়া গেছে এসব মেমোতে। একজন মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘দপ্তরের কিছু অংশ ইসরায়েলের আশ্বাস গ্রহণের পক্ষপাতী, কিছু তাদের আশ্বাস প্রত্যাখ্যান করার পক্ষপাতী এবং কিছু কোনও অবস্থানই নেয়নি।’

চারটি ব্যুরো – গণতন্ত্র মানবাধিকার ও শ্রম; জনসংখ্যা, উদ্বাস্তু এবং অভিবাসন; গ্লোবাল ক্রিমিনাল জাস্টিস; এবং ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অ্যাফেয়ার্স – থেকে জমা দেওয়া যৌথ মেমোতে গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলের অভিযানের সময় আন্তর্জাতিক মানবিক আইন ‘মেনে চলার বিষয়ে গুরুতর উদ্বেগ’ সামনে এনেছে।

এই চারটি ব্যুরোর মূল্যায়নে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের আশ্বাস ‘বিশ্বাসযোগ্য বা নির্ভরযোগ্য নয়’। তারা ওই মূল্যায়নে ইসরায়েলি সামরিক কর্মকাণ্ডের আটটি উদাহরণ উদ্ধৃত করেছে। কর্মকর্তারা বলেছেন, আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের সম্ভাব্য লঙ্ঘন সম্পর্কে এসব কর্মকাণ্ড ‘গুরুতর প্রশ্ন’ উত্থাপন করেছে।

এর মধ্যে রয়েছে – সুরক্ষিত স্থান এবং বেসামরিক অবকাঠামোতে বারবার হামলা করা; সামরিক সুবিধার জন্য অযৌক্তিকভাবে উচ্চ মাত্রায় বেসামরিক ক্ষতি; আইন লঙ্ঘনের তদন্ত করতে বা উল্লেখযোগ্য বেসামরিক ক্ষতির জন্য দায়ীদের বিচারে খুবই সামান্য পদক্ষেপ নেওয়া এবং অভূতপূর্ব হারে মানবতাবাদী কর্মী ও সাংবাদিকদের হত্যা।

চারটি ব্যুরোর মূল্যায়নে ইসরায়েলি সামরিক পদক্ষেপের ১১টি উদাহরণও উদ্ধৃত করা হয়েছে, যেখানে কর্মকর্তারা বলেছেন, যথেচ্ছভাবে মানবিক সহায়তা সীমিত করা, একক ‘দ্বৈত-ব্যবহারের’ আইটেমের কারণে সাহায্যের পুরো ট্রাকের প্রবেশের অনুমতি প্রত্যাখ্যান করা, পরিদর্শনে ‘কৃত্রিম’ সীমাবদ্ধতা-সহ মানবিক স্থাপনাগুলোতে বারবার আক্রমণ করার মতো বিষয়গুলোও রয়েছে।

টিএম