করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে আগামী ২ মে ভারতের চার রাজ্য ও এক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিধানসভা ভোটের বিজয় মিছিলে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ভারতের নির্বাচন কমিশন। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘দেশে চলমান করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলা এবং সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া রোধে আগামী ২ মে ও তারপর পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, কেরালা, তামিলনাড়ু ও পদুচেরিতে বিজয় মিছিল নিষিদ্ধ করা হলো। এই অঞ্চলগুলোর রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে এ ব্যাপারে সহযোগিতা প্রত্যাশা করা হচ্ছে।’

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ভারতের চার রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, কেরালা, তামিল নাড়ু ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল পদুচেরিতে বিধানসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছিল ভারতের নির্বাচন কমিশন। সেই অনুযায়ী, গত ২৭ মার্চ থেকে এই অঞ্চলগুলোতে বিধান সভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে।

কমিশনের তফসিলে বলা হয়েছিল, এই রাজ্যগুলোর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে ৮ দফায় ভোট হবে, আসামে হবে ৩ দফায় ভোট। এছাড়া তামিল নাড়ু, কেরালা ও পদুচেরিতে এক দফাতেই ভোটের কাজ শেষ করা হবে। এই পাঁচ অঞ্চলের ১৮ কোটি ভোটার এবারের বিধানসভা নির্বাচনে ভোট দিচ্ছেন।

আসাম, তামিল নাড়ু, কেরালা ও পদুচেরিতে ইতোমধ্যে ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে; সোমবার পশ্চিমবঙ্গে অনুষ্ঠিত হলো সপ্তম দফার ভোট। আগামী বৃহস্পতিবার সেখানে অষ্টম দফা ভোট গ্রহণের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে এই পাঁচ অঞ্চলে বিধানসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। ভোটের ফলাফল প্রকাশ করা হবে ২ মে।

গত মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ভারতে বাড়ছে করোনায় দৈনিক আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। ৬ এপ্রিল প্রথমবারের মতো দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা অতিক্রম করে এক লাখের কোঠা।

তারপর থেকেই লাগামহীনভাবে ভারতে বাড়তে শুরু করে করোনায় দৈনিক আক্রান্ত ও মৃত্যু। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে সংক্রমিত হয়েছেন প্রায় সোয়া তিন লাখ মানুষ, মারা গেছেন ২ হাজার ৭৭১ জন।

এই পরিস্থিতিতে বিভিন্ন মহল থেকে দাবি উঠেছিল, ভোটের ফলাফল ঘোষণার পর বিজয় মিছিল বা সমাবেশ বন্ধ করা হোক। তাদের শঙ্কা, এই পদক্ষেপ না নেওয়া হলে সংক্রমণ আরও দ্রুত গতিতে বেড়ে যাবে।

ভারতে করোনার এই মহাদুর্যোগের সময়ও বিধান সভা ভোট ঘিরে করোনা পরিস্থিতিতেও নিয়মিত জনসভা করে গিয়েছেন রাজনৈতিক নেতারা। হাজার হাজার মানুষের জমায়েতে হাতেগোনা কয়েক জনের মুখেই মাস্ক দেখা গিয়েছে।

সোমবার এই নিয়ে কমিশনকে তীব্র ভর্ৎসনা করেছেন চেন্নাই হাইকোর্ট। করোনায় এত মানুষের মৃত্যুর জন্য কমিশনকেই দায়ী করেছেন আদালত।

চেন্নাই প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিচারপতি সেন্থিলকুমার রামমূর্তির ডিভিশন বেঞ্চ থেকে রীতিমতো হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলা হয়েছে, বিধিনিষেধ মানা নিয়ে সঠিক পরিকল্পনা দেখাতে না পারলে ২ মে কমিশনের ভোটগণনা আটকে দেওয়া হবে।

এরপরই মঙ্গলবার এই বিবৃতি দিল ভারতের নির্বাচন কমিশন। কমিশন সূত্রে জানানো হয়েছে, নিষেধাজ্ঞার আওতায় কী কী থাকবে, তা পরে সবিস্তারে ঘোষণা করা হবে।

সূত্র: এনডিটিভি, আনন্দবাজার

এসএমডব্লিউ