ইরানের ইসফাহান শহরে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা নিয়ে ইরান এবং ইসরায়েল— উভয়ই নিশ্চুপ থাাকর নীতি নিয়েছে। দুই দেশের মন্ত্রী, সরকারি এবং সেনা কর্মকর্তারা এ ইস্যুতে বক্তব্য-বিবৃতি দেওয়া থেকে বিরত থাকছেন, এমনকি সংবাদমাধ্যম কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তারা এ ইস্যুতে কোনো কথা বলছেন না।

শুক্রবার সারাদিন ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলোতে ইসফাহানে হামলা সংক্রান্ত যেসব সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, সেগুলোর প্রায় সবই প্রকাশিত হয়েছে সূত্রের বরাত দিয়ে, নয়তো মার্কিন বা পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত সংবাদের অনুবাদ কপি হিসেবে।

অন্যদিকে হামলার পর প্রথম কয়েক ঘণ্টা ইরানের সংবাদমাধ্যমগুলোতে এই হামলার খবর গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করা হলেও সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে এর গুরুত্ব কমেছে। অনেক সংবাদমাধ্যমেই এ সংক্রান্ত নতুন কোনো সংবাদ নেই। এমনকি সরকার নিয়ন্ত্রিত কিছু সংবাদমাধ্যম এমন দাবিও করেছে যে ইরানে বিদেশি কোনো রাষ্ট্র হামলা চালায় নি।

গত ১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানি দূতাবাসে বোমা হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। এতে নিহত হন ১৩ জন। নিহতদের মধ্যে ইরানের সামরিক বাহিনীর এলিট শাখা ইসলামিক রেভোল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) দুই জ্যেষ্ঠ কমান্ডার মোহাম্মদ রেজা জাহেদী এবং মোহাম্মদ হাদি হাজি রাহিমিও ছিলেন।

হামলার দায় এখন পর্যন্ত ইসরায়েল স্বীকার করেনি। তবে সাক্ষ্য-প্রমাণ যা পাওয়া গেছে,তাতে হামলাটি যে আইডিএফ করেছিল— তা পরিষ্কার।

গত সপ্তাহে ইরানের সর্বোচ্চ আধ্যাত্মিক নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছিলেন— এই হামলার জন্য ইসরায়েলকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে।

তারপর শনিবার রাত ও রোববার ইসরাইলকে লক্ষ্য করে ৩ শতাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে ইরানের সামরিক বাহিনী। হামলায় হতাহতের কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি। যুক্তরাষ্ট্র, জর্ডান ও আঞ্চলিক মিত্রদের সহায়তায় বেশিরভাগ ড্রোন-ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার আগেই ধ্বংস করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। তবে ইসরায়েলের ৯টি স্থাপনায় ইরানি ড্রোন আঘাত হানতে সফল হয়েছে ইরান।

আকস্মিক এই হামলার পর ইরানকে পাল্টা জবাব দেওয় হবে বলে ঘোষণা করেছিল ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। রাষ্ট্রটির প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুও দ্ব্যর্থহীনভাবে আইডিএফের এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়েছে।

তারপর আজ শুক্রবার গ্রিনিচ মান সময় দুপুর সাড়ে ১২ টার (বাংলাদেশের স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৬ টা) দিকে ইরানের তৃতীয় বৃহত্তম নগরী ইসফাহানে ড্রোন হামলা চালায় আইডিএফ। তবে হামলায় ব্যবহৃত ৩টি ড্রোনই ধ্বংস করে দিয়েছে ইরানের আকাশ সুরক্ষা ব্যবস্থা।

রাজধানী তেহরান থেকে ৩৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত ইসফাহানে ইরানি সেনাবাহিনীর বেশ বড় একটি বিমান ঘাঁটি ও বেশ কয়েকটি পরমাণু স্থাপনা রয়েছে।

ইসফাহান শহরের এক বাসিন্দা ইরানের সরকারি সংবাদমাধ্যম প্রেস টিভিকে বলেছেন, সকালবেলায় তারা বিস্ফোরণের শব্দ পেয়েছেন ঠিকই কিন্তু প্রথমদিকে তারা মনে করেছিলেন যে এটি সম্ভবত আতশবাজীর ফাটার শব্দ। ওই বাসিন্দার দাবি, শব্দের ধরনও ছিল আতশবাজী ফাটার মতোই।

ইসরায়েলের বৃহত্তম দৈনিক পত্রিকা ইয়েদিওথ আহরোনোথে নিয়মিত কলাম লেখেন— এমন একজন কলামিস্ট বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন ইরানে চালানো হামলা নিয়ে এক সামরিক কর্মকর্তার সঙ্গে তার কথা হয়েছে।

‘ওই সামরিক কর্মকর্তা আমাকে জানিয়েছেন, মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে সরকার খুব ভালোভাবে ওয়াকিবহাল এবং এই মুহূর্তে যে কোনো বেফাঁস কথা বা অসাবধানী পদক্ষেপ যে ইসরায়েলসহ গোটা মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে— সে সম্পর্কেও যথেষ্ট সচেতন। এ কারণে ইসরায়েল সরকার সাবধানী অবস্থান নিয়েছে,’ রয়টার্সকে বলেন ওই কলামিস্ট।

সূত্র : রয়টার্স

এসএমডব্লিউ