গাজায় দুর্ভিক্ষের গ্রাস আরও তীব্র হচ্ছে, হুঁশিয়ারি জাতিসংঘের
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জার পাশাপাশি হামলা হচ্ছে হাসপাতালেও। এতে করে গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ইতোমধ্যেই ভেঙে পড়েছে।
এরসঙ্গে অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডটিতে দেখা দিয়েছে তীব্র মানবিক সংকট। এমন অবস্থায় গাজায় মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ আরও তীব্র হওয়ার বিষয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা।
বিজ্ঞাপন
এমনকি ইউএনআরডব্লিউএর কার্যক্রম শেষ করার জন্য প্রতারণামূলক প্রচারণা চলছে বলেও অভিযোগ করেছেন সংস্থাটির প্রধান। বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মনুষ্যসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ গাজা উপত্যকাজুড়ে ‘তার গ্রাস আরও শক্ত করছে’ বলে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর প্রধান বুধবার সতর্ক করেছেন। একইসঙ্গে গাজায় সাহায্য বিতরণে বাধা দেওয়ার এবং ভূখণ্ডটিতে ইউএনআরডব্লিউএ-এর কার্যক্রম বন্ধের চেষ্টা করার জন্য ইসরায়েলকে অভিযুক্ত করেছেন তিনি।
ইউএনআরডব্লিউএ-এর কমিশনার-জেনারেল ফিলিপ লাজারিনি ১৫ সদস্যের জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে বলেছেন, ‘আজ ইউএনআরডব্লিউএ-এর কার্যক্রম শেষ করার জন্য একটি প্রতারণামূলক প্রচারণা চলছে, যার ওপর আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার গুরুতর প্রভাব রয়েছে।’
১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত ইউএন রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্কস এজেন্সি বা ইউএনআরডব্লিউএ গাজায় কাজ পরিচালনা করা জাতিসংঘের বৃহত্তম সংস্থা। সংস্থাটি গাজা, পশ্চিম তীর, জর্ডান, লেবানন এবং সিরিয়ার লাখ লাখ ফিলিস্তিনিকে স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং অন্যান্য মানবিক সহায়তা প্রদান করে। গাজার অভ্যন্তরে সংস্থাটির প্রায় ১৩ হাজার কর্মী রয়েছে।
গাজায় ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে ছয় মাস আগে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে জাতিসংঘের শীর্ষ কর্মকর্তারা ইউএনআরডব্লিউএকে ভূখণ্ডটিতে সাহায্য কার্যক্রমের মেরুদণ্ড হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
লাজারিনি বলেছেন, ‘গাজা জুড়ে মনুষ্যসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ তার কবলকে আরও শক্ত করছে। উত্তরাঞ্চলে শিশু এবং ছোট শিশুরা অপুষ্টি এবং পানিশূন্যতায় মারা যেতে শুরু করেছে। সেখানে খাবার এবং বিশুদ্ধ পানির অপেক্ষায় আছে মানুষ। কিন্তু ইউএনআরডব্লিউএকে সেখানে সাহায্য প্রদান এবং মানুষের জীবন বাঁচাতে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না।’
ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে ইউএনআরডব্লিউএ-র বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আসছে এবং চলতি বছরের জানুয়ারিতে সংস্থাটির কর্মীদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলে গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় জড়িত থাকার জন্য অভিযুক্ত করেছে।
অবশ্য অভিযোগ সামনে আসার পরপরই লাজারিনি অভিযুক্ত কর্মীদের বরখাস্ত করেছেন এবং অভিযোগের বিষয়ে জাতিসংঘের অভ্যন্তরীণ তদন্ত চলছে।
এরপর গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকাশিত পৃথক ইউএনআরডব্লিউএ রিপোর্টে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের হাতে আটক কিছু কর্মীকে মিথ্যা বলতে চাপ দিয়েছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। মূলত ইউএনআরডব্লিউএ-এর সাথে হামাসের সম্পর্ক রয়েছে এবং সেই কর্মীরা গত বছরের ৭ অক্টোবরের হামলায় অংশ নিয়েছিল বলে মিথ্যা বলতে চাপ দেওয়া হয়।
এছাড়া নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার জন্য ইউএনআরডব্লিউএর সক্ষমতার একটি স্বাধীন পর্যালোচনাও এই মাসে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
উল্লেখ্য, ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর যুদ্ধ শুরুর কারণে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের সাহায্য করার জন্য ১৯৪৯ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের মাধ্যমে ইউএনআরডব্লিউএ তৈরি করা হয়েছিল। সেসময় প্রায় ৭ লাখ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন এবং তাদের অনেকে গাজায় পালিয়ে যান।
আরও পড়ুন
লাজারিনি বলেন, ইউএনআরডব্লিউএকে (তার কার্যক্রম থেকে) সরিয়ে দেওয়ার জন্য তারা এক ধরনের প্রচারণার মুখোমুখি হচ্ছেন।
তিনি বলেন, ‘ইসরায়েল সরকার গাজায় ইউএনআরডব্লিউএ-এর কার্যক্রম শেষ করতে চায়। উত্তরাঞ্চলে সাহায্য সরবরাহের জন্য সংস্থার অনুরোধ বারবার প্রত্যাখ্যান করা হচ্ছে। আমাদের কর্মীদের ইসরায়েল এবং মানবিক কর্মীদের মধ্যে সমন্বয় বৈঠকে বাধা দেওয়া হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরও খারাপ বিষয় হচ্ছে- যুদ্ধের শুরু থেকে ইউএনআরডব্লিউএ প্রাঙ্গণ এবং কর্মীদের হামলার লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১৭৮ ইউএনআরডব্লিউএ কর্মী নিহত হয়েছেন।’
টিএম