জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদ
ফিলিস্তিনের আবেদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত এ মাসেই
জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদের জন্য ফিলিস্তিনের পক্ষে সুপারিশ করা হবে কি না—চলতি এপ্রিল মাসেই এ ইস্যুতে সিদ্ধান্ত নেবে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। বিশ্বের বৃহত্তম সংস্থার সবচেয়ে ক্ষমতাধর এই অঙ্গ সংগঠন থেকে সোমবার এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
নিরাপত্তা পরিষদের মোট সদস্যসংখ্যা ১৫। এই ১৫ সদস্যরাষ্ট্রের মধ্যে ৫টি রাষ্ট্র স্থায়ী এবং বাকি ১০টি অস্থায়ী। পরিষদে কোনো প্রস্তাব উত্থাপিত হলে স্থায়ী সদস্যরা আপত্তি জানানোর মাধ্যমে সেটি বাতিল করে দিতে পারেন। এই ক্ষমতাকে বলে ভেটো ক্ষমতা। কেবল স্থায়ী সদস্যরাষ্ট্রগুলোর এই ক্ষমতা রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
অস্থায়ী সদস্যরাষ্ট্রগুলোর ভেটো ক্ষমতা নেই। জাতিসংঘের বিভিন্ন সদস্যরাষ্ট্রের মধ্য থেকে তাদের বেছে নেওয়া হয় এবং এই সদস্যপদের মেয়াদ হয় ২ বছর।
প্রতি মাসে নিরাপত্তা পরিষদের প্রেসিডেন্টের পদটি আবর্তিত হয়। ১৫ সদস্যরাষ্ট্রের প্রত্যেকেই ক্রমানুযায়ী এক মাসের জন্য পরিষদের প্রেসিডেন্টের আসনে বসতে পারে। চলতি এপ্রিলে নিরাপত্তা পরিষদের প্রেসিডেন্টের পদে রয়েছে অস্থায়ী সদস্যরাষ্ট্র মাল্টা।
সোমবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে মাল্টার জাতিসংঘ প্রতিনিধি ভানেসা ফ্রেজিয়ের বলেন, ‘আজ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে পূর্ণ সদস্যপদের জন্য ফিলিস্তিনের আবেদনের ব্যাপারে চলতি এপ্রিল মাসেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
জাতিসংঘের সনদ অনুসারে, কোনো দেশ যদি এই সংস্থার সদস্য হতে চায়—সেক্ষেত্রে তাকে প্রথমে আবেদনের পক্ষে নিরাপত্তা পরিষদের সুপারিশ জোগাড় করতে হয়। আবেদন পত্রের সঙ্গে সেই সুপারিশ সংযুক্ত করলেই কেবল দেশটিকে সদস্যপদ দেওয়ার ব্যাপারটি বিবেচনা করে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ।
প্রসঙ্গত, পূর্ণ সদস্যপদের জন্য বহু বছর ধরে চেষ্টা-তদবিরের পর ২০১১ সালে ‘পর্যবেক্ষক’ হিসেবে জাতিসংঘে প্রবেশের অনুমতি পায় ফিলিস্তিন। এই ক্যাটাগরিভুক্ত দেশ বা ভূখণ্ডগুলো জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে আলোচনা-বিতর্কে যুক্ত হতে পারে, কিন্তু উত্থাপিত কোনো প্রস্তাবের পক্ষে-বিপক্ষে ভোট দেওয়ার এক্তিয়ার তাদের নেই।
গত ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান শুরুর পর ফের পূর্ণ সদস্যপদের জন্য তৎপরতা শুরু করে ফিলিস্তিন। ভানেসা ফ্রেজিয়েরের বক্তব্য অনুযায়ী, চলতি মাস শেষ হওয়ার আগেই মিলবে সেই তৎপরতার ফলাফল।
সোমবার ভানেসা ফ্রেজিয়েরের ব্রিফিংয়ের পর এক প্রতিক্রিয়ায় জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি প্রতিনিধিদলের সর্বজ্যেষ্ঠ সদস্য রিয়াদ মনসুর নিরাপত্তা পরিষদের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘আজ একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। বছরের পর বছর ধরে আমরা বিভিন্ন জাতির এই বৈশ্বিক সম্মিলন কেন্দ্রে আমাদের ন্যায্য স্থান অর্জনের চেষ্টা করছি। আমরা চাই, আমাদের সঙ্গে সমতাপূর্ণ দৃষ্টিকোণ থেকে আমাদের আবেদন বিবেচনা করা হোক।’
‘বিশ্বর অন্যান্য জাতিদের মতো আমরাও স্বাধীনতা, মর্যাদা, শান্তি ও নিরাপত্তা চাই। আমাদের পূর্বপুরুষরা যে জমিতে তাদের দেহ রেখেছেন, সেখানে বসবাসের অধিকার চাই। আমাদের চাওয়া খুব বেশি নয়।’
এদিকে নিরাপত্তা পরিষদের এই সিদ্ধান্তে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের ইসরায়েল প্রতিনিধি দল। প্রতিনিধি দলের প্রধান গিলাড এরদান এক বার্তায় বলেছেন, ‘যখন হামাসকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বৈশ্বিক স্বীকৃতি দেওয়া উচিত, তখন নিরাপত্তা পরিষদ ‘ফিলিস্তি-নাৎসি’ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। ফিলিস্তিন যদি সত্যিই জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদ পায়, তাহলে সেটি হবে তাদের জঘন্য অপরাধের জন্য পুরস্কার প্রদান করার মতো ব্যাপার।’
এর আগেও পূর্ণ সদস্যপদের জন্য আবেদন করেছিল ফিলিস্তিন। কিন্তু ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগের মাধ্যমে তা খারিজ করে দিয়েছিল ইসরায়েলের সবচেয়ে পুরোনো ও বিশ্বস্ত মিত্র যুক্তরাষ্ট্র।
জাতিসংঘের যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধিদলের প্রধান লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড নিরপত্তা পরিষদের সভাপতির সোমবারের ব্রিফিংয়ের পর এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে আমাদের অবস্থান সবার কাছে পরিচিত এবং তাতে কোনো পরিবর্তন আসবে না।’
‘তবে যুক্তরাষ্ট্র সব সময়ই ওই অঞ্চলে দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের পক্ষে সোচ্চার এবং এই সমাধান বাস্তবায়নের পথ খুঁজছে। আমাদের এই প্রচেষ্টাও অব্যাহত থাকবে।’
সূত্র : বিএসএস/এএফপি
এসএমডব্লিউ