সিরিয়ায় দরিদ্রদের ইফতার দিচ্ছেন বাইকার স্বেচ্ছাসেবীরা
গৃহযুদ্ধ জর্জরিত সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে দরিদ্র-অভাবী লোকজনদেরকে প্রতিদিন ইফতার বিতরণ করছে সিরিয়ার শৌখিন মোটরসাইকেল চালকদের (বাইকার) ক্লাব হোপ বাইকার্স সিরিয়া। প্রতিদিন দামেস্কের বিভিন্ন এলাকায় ইফতারের প্যাকেট বিতরণ করে ‘হোপ বাইকার্স সিরিয়া’র ৫০ জন স্বেচ্ছাসেবী।
ক্লাবের প্রধান তারেক ওবায়েদ এএফপিকে বলেন, ‘এবারের রমজানের শুরু থেকেই আমাদের স্বেচ্ছাসেবীরা দরিদ্রদের মধ্যে ইফতার বিতরণ করছে। ইফতার বিতরণের ক্ষেত্রে দামেস্কের সবচেয়ে দরিদ্র এলাকাগুলোকে আমরা অগ্রাধিকার দিই। স্বেচ্ছাসেবীদের সে রকম নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
বিজ্ঞাপন
৫০ বছর বয়সী ওবায়েদ পেশায় একজন সুইমিং কোচ। প্রতিদিনের ইফতার বিতরণ সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ তিনি নিজে তত্ত্বাবধান করেন।
প্রতিদিন দুপুরের পর ইফতার বিতরণের জন্য বেরিয়ে পড়েন ক্লাবের স্বেচ্ছাসেবীরা। তাদের সবার পরণে থাকে ক্লাবের ইউনিফর্ম নীল রঙের জ্যাকেট এবং সবার বাইকে থাকে সিরিয়ার পতাকা।
এএফপিকে ওবায়েদ বলেন, ‘মানবিকতাকে অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছি। বাইকারদের মধ্যে এক ধরনের বেপরোয়া মনোভাব থাকে। এ কারণে সাধারণ লোকজন এক সময় বাইকারদের এড়িয়ে চলত।’
‘কিন্তু ইফতার বিতরণ কর্মসূচি হাতে নেওয়ার পর থেকে এই পরিস্থিতি পুরো বদলে গেছে। যেসব এলাকায় আমরা নিয়মিত ইফতার বিতরণ করি, সেসব এলাকার লোকজন এখন দুপুরের পর থেকে বাইকের শব্দের জন্য উৎকর্ণ হয়ে থাকেন, আমাদের বাইকারদের দেখলে হাসিমুখে স্বাগত জানান। তাদের ভালবাসা আমরা বুঝতে পারি।’
সিরিয়ার মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশ খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী। দামেস্কের দারিদ্র্যপীড়িত এলাকাগুলোতে মুসলিমদের পাশাপাশি অনেক খ্রিস্টানও বসবাস করেন। তাদেরকেও ইফতারের প্যাকেট দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন ওবায়েদ।
‘আমরা নিজেদের পকেট এবং শুভানুধ্যায়ীদের কাছ থেকে সংগৃহীত অর্থ দিয়ে এই কর্মসূচি চালাচ্ছি। কোনো রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠীর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক নেই। আমরা মুসলিমদের পাশাপাশি খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের মধ্যেও ইফতার বিতরণ করি। আমাদের স্বেচ্ছাসেবী দলেও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী সদস্য রয়েছেন।’
গত ১৩ বছর ধরে গৃহযুদ্ধ চলছে সিরিয়ার বিভিন্ন প্রদেশে। এই গৃহযুদ্ধের কারণে দেশটির মোট জনসংখ্যার ৯০ শতাংশই বর্তমানে দারিদ্র্যের শিকার।
অবশ্য হোপ বাইকার্স সিরিয়ার স্বেচ্ছাসেবীরা যে এই প্রথম সেবামূলক কাজ করছেন— এমন নয়। ২০২০ সালে করোনা মহামারির সময় লোকজনের বাড়ি বাড়ি অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দিয়েছেন তারা। তারপর ২০২৩ সালে তুরস্ক-সিরিয়ায় যে ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়েছিল, সে সময়ও স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে উদ্ধার তৎপরতায় তারা অংশ নিয়েছেন।
ইফতার বিতরণের এই কর্মসূচি চালাতে গিয়ে হোপ বাইকার্স সিরিয়ার স্বেচ্ছাসেবীদের যেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে, সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় কোনটি— প্রশ্নের উত্তরে ক্লাবের সদস্য জর্জ হাফতেহ বলেন— পেট্রোলের দাম।
‘যদিও বাইকে তেল কম লাগে, কিন্তু নিয়মিত পেট্রোল কেনা এখন আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।’
প্রসঙ্গত, গত বছর থেকে জ্বালানি তেলের ওপর থেকে ভর্তুকি প্রত্যাহার করেছে সিরিয়ার সরকার। তারপর থেকে দেশটিতে বেড়েছে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম।
সূত্র : এএফপি, এনডিটিভি ওয়ার্ল্ড
এসএমডব্লিউ