শারজাহর মরুভূমিতে ‘ইফতার বৌল’ উৎসব, সমাগম ২ হাজার মানুষের
সংযুক্ত আরব আমিরাতের অন্যতম এমিরেত (রাজ্য) শারজাহর রাফিদাহ মরুভূমিতে বরাবরের মতো এবারও অনুষ্ঠিত হয়েছে গণইফতার উৎসব ‘ইফতার বৌল’। বৃহস্পতিবার উৎসবে যোগ দিতে আমিরাতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মরুভূমিতে চলাচলের উপযোগী ৭৫০টি গাড়িতে চেপে উপস্থিত হয়েছিলেন ২ হাজারেরও বেশি মানুষ।
উৎসবে মধ্যে আমিরাতের নাগরিকদের পাশাপাশি অন্তত ৩৮টি দেশের নাগরিকরা ছিলেন বলে জানা গেছ।
বিজ্ঞাপন
মরুভূমি ও পাহাড়ি এলাকায় ভ্রমণ ও গাড়ি চালানো যেসব চালকের শখ, আমিরাতের সেই সব শৌখিন চালকদের (অফরোডার) ‘অ্যারাবিয়ান অফরোডার্স’ নামের একটি সংগঠন রয়েছে। এই সংগঠনটিই ‘ইফতার বৌল’ নামের ইভেন্টটির মূল আয়োজক। অ্যারাবিয়ান অফরোডার্সের অন্যতম সংগঠক শাহার সারওয়ার জানিয়েছেন, ১৯৯১ সাল থেকে তারা ইফতার বৌলের আয়োজন করে আসছেন।
এক প্রশ্নের উত্তরে শাহার বলেন, ‘১৯৯১ সাল থেকে অফরোডাররা আমিরাতের বিভিন্ন মরুভূমিতে ভ্রমণ শুরু করে। স্বাভাবিকভাবেই রাফিদাহ মরুভূমিও তাদের তালিকায় ছিল। রাফিদাহর বালিয়াড়ি ও টিলাগুলোতে ভ্রমণের এক পর্যায়ে এ মরুভূমিতে বৌল বা গামলার মতো একটি জায়গা তারা আবিষ্কার করে। তারপর ওই বছরই সেখানে প্রথম গণইফতারের আয়োজন হয়। তারপর থেকে প্রতি বছর রমজানে আমরা এই ইভেন্টের আয়োজন করে আসছি।’
‘প্রথম দিকে লোকজন অনেক কম হতো। কেবল আমিরাত ও আশপাশের প্রতিবেশি আরব দেশগুলোর নাগরিকরা এই ইভেন্টে আসতেন। তবে গত কয়েক বছর ধরে লোকজন বাড়ছে, সেই সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের বাইরে থেকে আসা লোকজনের সংখ্যাও বাড়ছে; আর এখন শুধ মুসলিমরাই নন, অনেক অমুসলিমও ইফতার বৌলে আসছেন। এবারের ইফতার বৌলে আসার জন্য আমাদের সংগঠনে নাম নিবন্ধন করেছেন অন্তত ৩৮টি দেশের মানুষ।’
অ্যারাবিয়ান অফরোডার্সের আরেক সংগঠক সাঈদ কিলানি জানান, ‘ইফতার বৌল’ ইভেন্টে যারা আসেন, তাদের প্রধান আকর্ষণ এখানকার অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।
‘এখাকার বালিয়াড়ি, চারপাশে উঁচু উঁচু টিলা এবং বিস্তৃত সমতল অঞ্চল দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি বড় জনসমাগমের জন্যও আদর্শ। বিশেষ করে বিকেল বা সন্ধ্যার দিকে এই এলাকাটি অপূর্ব সুন্দর দেখায়। তাই পরিবারের সদস্য ও বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে অনেকেই এখানে ইফতার করতে আগ্রহ বোধ করেন।’
দুবাইভিত্তিক অফরোডারদের সংগঠন দুবাই ফোর এক্স ফোরের সংগঠক জামিল জামাল তার পরিবার পরিজন ও বন্ধু-বান্ধব নিয়ে এসেছেন ইফতার বৌলে। গালফ নিউজকে তিনি বলেন, ‘ইফতার বৌল আসলে বিশাল একটি সম্মিলনের জায়গা। আমি প্রতিবছরই পরিবার-পরিজন-বন্ধু-বান্ধব নিয়ে এই ইভেন্টে আসি। আমার জানামতে, এবারের ইফতার বৌলে আমিরাতের সব অফরোডার সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত রয়েছেন।’
বৃহস্পতিবার দুপুরের আগে থেকেই গাড়িতে করে লোকজন আসা শুরু করে রাফিদায়। প্রতি বছর মরুভূমির যে এলাকাটিতে ইফতার বৌলের আয়োজন হয়, সেখানে তারা গুছিলে বসা শুরু করেন দুপুরের পর থেকে। রোজার নিয়ম মেনে যথারিত সূর্যাস্তের সময় তারা ইফতার করেন, নামাজ পড়েন এবং বিভিন্ন গ্রুপ নিজেদের ইফতার, চা, কফি পরস্পরের সঙ্গে ভাগাভাগিও করে নেন।
ইফতারের পর রাতে সেখানে থাকার পরিকল্পনা নিয়ে এসেছিলেন অনেকে। সেজন্য প্রয়োজনীয় খাবার ও তাঁবুও সঙ্গে এনেছেন তারা।
অ্যারাবিয়ান অফরোডার্সের জেষ্ঠ্য সংগঠক শাহার সারোয়ার গালফ নিউজকে জানান, এই ইভেন্টে যারা আসেন, তাদেরকে অবশ্যই একটি শর্ত পালন করতে হয়; সেটি হলো— খাবারের উচ্ছিষ্ট, প্লাস্টিকের প্যাকট, ক্যান বা কোনো প্রকার বর্জ্য এখানে ফেলে যাওয়া যাবে না। ইফতারের পর যাবতীয় বর্জ্য নিজ উদ্যোগে পরিষ্কার করে সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে।
‘বিদায়ের সমায় আমরা এখানে কেবল আমাদের স্মৃতি ও পদচিহ্ন রেখে যেতে চাই। আর কিছু নয়,’ গালফ নিউজকে বলেন শাহার।
সূত্র : গালফ নিউজ
এসএমডব্লিউ