গতিপথ বদলে বাল্টিমোরের সেতুতে আঘাত হানে সেই জাহাজ
যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোরের ফ্রান্সিস স্কট কি ব্রিজে আঘাত হানার আগে গতিপথ পরিবর্তন করেছিল সিঙ্গাপুরের পতাকাবাহী জাহাজ দ্য ডালি। আঘাত করার কিছুক্ষণ আগে জাহাজটি গতিপথ পাল্টে একটি স্তম্ভের দিকে চলে যায়। ওই সময় জাহাজের সব লাইটে অন্তত দু’বার আলো জ্বলে ওঠে। এরপর হঠাৎই সেটি একটি স্তম্ভে আঘাত হানে এবং মুহূর্তের মধ্যে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে প্রায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুটি।
মঙ্গলবার স্থানীয় সময় রাত ১টা ৩৫ মিনিটের দিকের এই দুর্ঘটনায় অন্তত ২০ জন নদীতে পড়ে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছেন বলে জানিয়েছে বাল্টিমোর সিটি ফায়ার ডিপার্টমেন্ট।
বিজ্ঞাপন
জাহাজ চলাচল পর্যবেক্ষণকারী ওয়েবসাইট মেরিনট্রাফিকের ডাটা বিশ্লেষণে জাহাজটির আকস্মিকভাবে লাইট জ্বলে ওঠার কোনও কারণ নিশ্চিত হওয়া যায়নি। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাহাজটি সেতুতে কী কারণে আঘাত হেনেছে কিংবা কেন এর লাইট জ্বলছিল তা পরিষ্কার নয়।
জাহাজটির বিদ্যুৎ ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়েছিল কি না, সেই বিষয়ে জানতে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় পরিবহন সুরক্ষা বোর্ডের সাথে যোগাযোগ করেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন। যদিও এই বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে সুরক্ষা বোর্ডের পক্ষ থেকে কোনও তথ্য দেওয়া হয়নি।
সিঙ্গাপুরের পতাকাবাহী কনটেইনার জাহাজ দ্য ডালি বাল্টিমোরের বন্দর থেকে শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোর উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছিল। মেরিনট্রাফিকের তথ্য ও দুর্ঘটনার ভিডিও অনুযায়ী, স্থানীয় সময় রাত ১টা ২৬ মিনিটের দিকে কাছাকাছি এলাকায় এসে সেতুর একটি স্তম্ভের দিকে গতিপথ পরিবর্তন করতে শুরু করে দ্য ডালি। এর দুই মিনিটের মাথায় অর্থাৎ ১টা ২৮ মিনিটে জাহাজটি সেতুতে আঘাত করে।
ভিডিওতে দেখা যায়, রাত ১টা ২৫ মিনিটের দিকে জাহাজটি থেকে গাঢ় ধোঁয়া বের হতে শুরু করে। পরে সেতুতে আঘাত হানার আগ মুহূর্তে ডালিতে অন্তত দুবার আলো জ্বলে ওঠে।
প্যাটাপস্কো নদীতে চলাচলের সময় জাহাজটির আলো প্রথম নিভে যায় ১টা ২৪ মিনিটে। এরপর পেছনের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে এবং ১টা ২৬ মিনিট থেকে ১টা ২৭ মিনিটের মধ্যে আবারও আলো জ্বলে উঠতে দেখা যায়। এর পরপরই সেতুটির একটি স্তম্ভে আঘাত হানে দ্য ডালি। মুহূর্তের মধ্যে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে সেতুটি।
• দ্য ডালির পাইলট ছিলেন কে?
কন্টেইনার জাহাজ দ্য ডালি বাল্টিমোর বন্দর থেকে শ্রীলঙ্কার কলম্বো বন্দরের উদ্দেশে মাত্র যাত্রা শুরু করেছিল। বাল্টিমোর বন্দর থেকে আন্তর্জাতিক রুটে পৌঁছে দেওয়ার জন্য সেখানকার বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত স্থানীয় একজন পাইলট জাহাজটিকে পরিচালনা করছিলেন। জাহাজটি পরিচালনার দায়িত্বে থাকা পাইলট সেই সময় ওই পাইলটের পাশেই ছিলেন।
সাধারণত এই ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য অত্যন্ত দক্ষ ও বিশেষ প্রশিক্ষিত স্থানীয় পাইলটদের মাধ্যমে সব জাহাজকেই বাল্টিমোর বন্দর থেকে নিরাপদ রুটে পৌঁছে দেওয়া হয়। মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে মেরিল্যান্ডের পরিবহনমন্ত্রী পল উইডেফেল্ড বলেছেন, স্থানীয় অভিজ্ঞ পাইলটরা বাল্টিমোর বন্দরের ভেতরে এবং বাইরে জাহাজগুলো সরিয়ে থাকেন।
স্থানীয় চ্যানেলের ঠিক বাইরে জাহাজে ওঠেন পাইলটরা। পরে জাহাজগুলোকে বন্দরে নিয়ে যান তারা। এই ধরনের বহির্গামী জাহাজগুলোকে বন্দর থেকে উন্মুক্ত জলসীমায় নেওয়া হয়।
উইডেফেল্ড বলেছেন, সারা দেশের সব বন্দর, চ্যানেল এবং নদীতে চলাচলকারী জাহাজের ক্ষেত্রে এটাই সঠিক নিয়ম। স্থানীয় পাইলটরা প্রতিটি বন্দর, নদী এবং চ্যানেলের ঝুঁকি সম্পর্কে অবগত থাকেন। এই কারণেই তাদের মাধ্যমে জাহাজগুলো বন্দর থেকে বের করে দেওয়া হয়। মঙ্গলবারের দুর্ঘটনার কারণ জানতে আরও সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।
দ্য অ্যাসোসিয়েশন অব মেরিল্যান্ড পাইলট যুক্তরাষ্ট্রের পাইলটদের প্রাচীনতম সংগঠন। তাদের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ১৮৫২ সাল থেকে দেশটিতে এই সংগঠনটি পরিচালিত হয়ে আসছে। সংগঠনটির সদস্য পাইলটরা সেখানে স্থানীয় পাইলট হিসেবে জাহাজ চলাচলের কাজে সহায়তা করে আসছেন। ম্যারিল্যান্ডের সরকারি রেকর্ডস অনুযায়ী, সংগঠনটি সেখানে ১৬৪০ সাল থেকে পরিচালিত হয়ে আসছে। এই সংগঠনটিরই এক সদস্য পাইলট দ্য ডালিকে পরিচালনা করছিলেন।
সূত্র: সিএনএন, এনবিসি নিউজ, নিউইয়র্ক টাইমস।
এসএস