ইসরায়েলি আগ্রাসনে গাজার অনেক এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে (ফাইল ছবি)

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জার পাশাপাশি হামলা হচ্ছে হাসপাতালেও। এতে করে গাজার অধিকাংশ অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে।

আশ্রয়হীন হাজারও মানুষ থাকছেন অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে। এই অবস্থায় গাজা পুনর্গঠনে ৯০ বিলিয়ন বা ৯ হাজার কোটি মার্কিন ডলার খরচ হবে বলে জানিয়েছেন মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি।

এছাড়া গাজায় যা ঘটেছে তা মিসর এবং সমগ্র অঞ্চলের জন্য চ্যালেঞ্জ বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। শনিবার (৯ মার্চ) এক প্রতিদেনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।

প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি শনিবার বলেন, তার দেশের সীমান্ত সংলগ্ন গাজা উপত্যকার পুনর্গঠনের জন্য ৯ হাজার কোটি ডলারের প্রয়োজন হবে। কায়রো নিউজ চ্যানেল অনুসারে, কায়রো কনভেনশন সেন্টারে দেওয়া এক বক্তৃতায় সিসি বলেন, ‘ইসরায়েলি বোমা হামলার ফলে বিধ্বস্ত হওয়া গাজা উপত্যকা পুনর্নির্মাণের জন্য কত অর্থ প্রয়োজন’ তার হিসাব (মিশরীয় রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে) দেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন তিনি। তার দাবি, গাজা উপত্যকার পুনর্গঠনের জন্য ৯০ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন।

তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘গাজায় যা ঘটেছে তা মিসর এবং সমগ্র অঞ্চলের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। রাফাহ ক্রসিং সপ্তাহে সাতদিন ২৪ ঘণ্টাই খোলা থাকে এবং আমরা গাজা উপত্যকায় সাহায্য আনতে আগ্রহী।’

তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, স্থলপথে সহায়তা সরবরাহে সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার কারণে মিসর গাজা উপত্যকায় সহায়তা এয়ারড্রপ করেছে।

এমিরাতি বার্তাসংস্থা ডব্লিউএএম জানিয়েছে, মিসর এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত যুদ্ধ বিধ্বস্ত গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনিদের জন্য গত শুক্রবার পঞ্চম দফা এয়ারড্রপের মাধ্যমে যৌথভাবে মানবিক সহায়তা মিশন পরিচালনা করে।

উল্লেখ্য, গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।

ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলের আক্রমণের ফলে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩১ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও ৭২ হাজারেরও বেশি মানুষ।

এছাড়া ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।

মূলত ইসরায়েলি আক্রমণ গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজার সকলেই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন।

এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। হাজার হাজার মানুষ কোনও ধরনের আশ্রয় ছাড়াই বসবাস করছে এবং প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম ত্রাণবাহী ট্রাক এই অঞ্চলে প্রবেশ করছে।

ইসরায়েল ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে এক অন্তর্বর্তী রায়ে এই আদালত তেল আবিবকে গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে এবং গাজার বেসামরিক নাগরিকদের মানবিক সহায়তা প্রদানের নিশ্চয়তা দেওয়ার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়।

টিএম