জার্মানিতে গাড়ি-প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান টেসলার একটি কারখানায় হামলার দাবি করেছে উগ্র বামপন্থি এক গোষ্ঠী। এর জেরে টেসলা তার জার্মান কারখানায় উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে। এই ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।

মঙ্গলবার (৫ মার্চ) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কট্টর বামপন্থি এক গোষ্ঠী ‘নাশকতার’ মাধ্যমে প্ল্যান্টে সরবরাহকারী বিদ্যুৎ লাইনে আগুন লাগানোর ঘটনার পর টেসলা তার জার্মান কারখানায় উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে।

এর আগে টেসলা প্ল্যান্টের কাছে বার্লিনের দক্ষিণ-পূর্বে একটি বিদ্যুতের টাওয়ারে আগুন জ্বলার খবরে মঙ্গলবার ভোরে জরুরি পরিষেবাগুলোকে ডাকা হয়েছিল।

পরে আগুন নিভিয়ে ফেলা হলেও লাইনগুলো ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ার কারণে ব্র্যান্ডেনবার্গ প্রদেশে অবস্থিত বৈদ্যুতিক গাড়ির এই কারখানার পাশাপাশি আশপাশের গ্রামগুলোও বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পুলিশ জানিয়েছে, তারা সন্দেহজনক এই অগ্নিসংযোগের তদন্ত শুরু করেছে।

কট্টর বামপন্থি গোষ্ঠী ভল্কাংগ্রুপে (ভলকানো গ্রুপ) এই কর্মকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে। গ্রুপটি এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘নাশকতার মাধ্যমে আমরা গিগাফ্যাক্টরির সবচেয়ে বড় সম্ভাব্য ব্ল্যাকআউট অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি।’

কট্টরপন্থি এই গ্রুপটি এর আগে টেসলার এই কারখানার পরিবেশগত প্রভাব এবং স্থানীয় পানি সরবরাহ ব্যবস্থাপনার ওপর প্ল্যান্টের প্রভাব সম্পর্কে উদ্বেগ তুলে ধরেছিল।

এদিকে ব্র্যান্ডেনবার্গের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাইকেল স্টুবেগেন বলেছেন, অগ্নিসংযোগের বিষয়টি নিশ্চিত হলে, এটি হবে ‘আমাদের বিদ্যুৎ পরিকাঠামোর ওপর একটি ভয়ঙ্কর আক্রমণ’।

তিনি বলেন, ‘এই ঘটনায় হাজার হাজার মানুষ তাদের মৌলিক বিদ্যুৎ পরিষেবা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল এবং বিপদে পড়েছিল। আইনের শাসন এই ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে চরম কঠোরতার সাথে প্রতিক্রিয়া জানাবে।’

আল জাজিরা বলছে, নাশকতার এই ঘটনার পর আশপাশের শহর এবং গ্রামে কয়েক ঘণ্টা পরে বিদ্যুৎ পরিষেবা পুনরায় চালু করা হয়েছিল, কিন্তু টেসলা কারখানা এখনও বিদ্যুৎহীন রয়েছে এবং কর্তৃপক্ষ বলেছে, প্ল্যান্টে বিদ্যুৎ পরিষেবা পুনরায় চালু করতে কয়েক দিন সময় লাগবে।

২০২২ সালের মার্চ মাসে কারখানাটি খুলেছিল টেসলা। এর মাধ্যমে জার্মান অটোমেকারদের তাদের নিজের দেশেই চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেয় গাড়ি-প্রস্তুতকারী এই প্রতিষ্ঠানটি। বিশ্বখ্যাত এই কোম্পানিটি এখন একটি মালবাহী ডিপো, গুদাম এবং একটি কোম্পানী কিন্ডারগার্টেন তৈরি করতে তাদের স্থান আরও সম্প্রসারণ করতে চায়।

আর এই পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করতে আরও ১০০ হেক্টরেরও বেশি (২৪৭ একর) বন কেটে ফেলতে হবে।

এমন অবস্থায় সম্ভাব্য আক্রমণকারীদের প্রতি ইঙ্গিত করে টেসলার সিইও ইলন মাস্ক তার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে লিখেছেন, ‘এরা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে বোবা ইকো-সন্ত্রাসবাদী বা তারা সেইসব মানুষের হাতের পুতুল যাদের ভালো কোনও পরিবেশগত লক্ষ্য নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘জীবাশ্ম জ্বালানি-চালিত গাড়ির পরিবর্তে বৈদ্যুতিক যানবাহনের উৎপাদন বন্ধ করা ‘অত্যন্ত বোকামি’।’

আল জাজিরা বলছে, বিদ্যুৎ বিভ্রাটের এই ঘটনা এমন এক সময়ে ঘটল যখন টেসলার সম্প্রসারণের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে পরিবেশ কর্মীরা প্ল্যান্টের কাছে একটি বনে বিক্ষোভ করে আসছেন। কয়েক ডজন কর্মী আবার সেখানে তাঁবু ও গাছের ওপর ঘরও (ট্রি হাউস) তৈরি করেছে।

টিএম