গাজায় অপুষ্টি ও অনাহারে শিশু মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে প্রায়ই (ফাইল ছবি)

টানা পাঁচ মাস ধরে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের সংঘাত চলছে। সংঘাতের শুরু থেকেই অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে নির্বিচারে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। ইতোমধ্যেই ৩০ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি ইসরায়েলের বর্বর হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন।

এছাড়া গাজায় মানবিক সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। অপুষ্টি ও অনাহারে শিশু মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে প্রায়ই। এই পরিস্থিতিতে, ইসরায়েলি অবরোধের মধ্যে গাজায় শিশু মৃত্যু দ্রুত বৃদ্ধির আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের শিশু নিরাপত্তা ও অধিকার বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ।

এছাড়া গাজার উত্তরাঞ্চলে আরও বেশি সংখ্যক শিশু অযত্নের সম্মুখীন হচ্ছে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি। রোববার (৩ মার্চ) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি আক্রমণ ও অবরোধ অব্যাহত থাকায় রোববার ভূখণ্ডটিতে শিশু মৃত্যুর বিষয়ে সতর্ক করেছে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ। ইসরায়েল গাজার উত্তরাঞ্চলে কঠোর অবরোধ জারি রেখেছে এবং স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, উত্তর গাজা উপত্যকার কামাল আদওয়ান হাসপাতালে পানিশূন্যতা এবং অপুষ্টির কারণে অন্তত ১৫ ফিলিস্তিনি শিশু মারা গেছে।

মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় ইউনিসেফের আঞ্চলিক পরিচালক অ্যাডেল খোদর এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘গাজার অবশিষ্ট যে কয়েকটি হাসপাতাল চালু আছে তার মধ্যে কোথাও কোথাও সম্ভবত আরও বেশি শিশু তাদের জীবন বাঁচানোর জন্য লড়াই করছে এবং ভূখণ্ডটির উত্তরাঞ্চলে সম্ভবত আরও বেশি শিশু সঠিক যত্ন ও পরিষেবা পাচ্ছে না।’

তিনি আরও বলেছেন, ‘এই মর্মান্তিক এবং ভয়াবহ মৃত্যু মানবসৃষ্ট, পূর্বাভাসযোগ্য এবং সম্পূর্ণরূপে প্রতিরোধযোগ্য।’

ইউনিসেফ বলেছে, গাজায় পুষ্টিকর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং চিকিৎসা সেবার যে ব্যাপক সংকট দেখা দিয়েছে তা আসলে জাতিসংঘের মানবিক কার্যক্রম পরিচালনায় প্রতিবন্ধকতাসহ একাধিক বিপদের সরাসরি পরিণতি।’

জাতিসংঘের এই সংস্থার তথ্য অনুসারে, প্রায় ১৬ শতাংশ বা দুই বছরের কম বয়সী প্রতি ছয়জন শিশুর মধ্যে একজন উত্তর গাজায় তীব্রভাবে অপুষ্টিতে ভুগছে। অ্যাডেল খোদর সতর্ক করে বলেন, ‘এখন, আমরা যে শিশু মৃত্যুর আশঙ্কা করছিলাম তা এখানে বিদ্যমান রয়েছে এবং যুদ্ধ শেষ না হলে ও মানবিক ত্রাণ বিতরণে প্রতিবন্ধকতাগুলো অবিলম্বে সমাধান করা না হলে তা (শিশু মৃত্যু) দ্রুত বাড়তে পারে।’

এছাড়া মানবিক সহায়তা সংস্থাগুলোকে উত্তর গাজাসহ সমস্ত সম্ভাব্য ক্রসিং থেকে গাজায় সাহায্য আনার সুযোগ দিতেও আহ্বান জানিয়েছেন ইউনিসেফের এই আঞ্চলিক পরিচালক।

অ্যাডেল খোদর বলেন, ‘মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে জীবনরক্ষাকারী সাহায্য থাকলেও তা গাজার মানুষের নাগালের বাইরে রাখা হচ্ছে এবং এই ধরনের পরিস্থিতিতে বাবা-মা এবং ডাক্তারদের মধ্যে অসহায়ত্ব ও হতাশার অনুভূতি অবশ্যই অসহনীয়। তবে আরও খারাপ বিষয় হচ্ছে, গাজার এসব শিশুদের যন্ত্রণাদায়ক কান্না বিশ্বের দৃষ্টি থেকে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে।’

তার ভাষায়, ‘গাজার আরও হাজার হাজার শিশু এবং বাচ্চাদের জীবন এখন জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার ওপরই নির্ভর করছে।’

উল্লেখ্য, গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।

ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলের আক্রমণের ফলে এখন পর্যন্ত ৩০ হাজার ৪১০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও ৭১ হাজার ৭০০ জন।

এদিকে ইসরায়েল গাজার ওপর কঠোর অবরোধ আরোপ করে রেখেছে এবং এই পদক্ষেপ গাজার ফিলিস্তিনিদের বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দাদের অনাহারের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিয়েছে।

স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গাজা শহরের দক্ষিণে মানবিক সহায়তা নেওয়ার অপেক্ষায় থাকা ফিলিস্তিনিদের ওপর গত বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি বাহিনী গুলি চালালে অন্তত ১১৬ জন নিহত হন।

টিএম