ট্রান্সনিস্ট্রিয়া অঞ্চলের সবচেয়ে বড় শহর তিরাসপোলের দৃশ্য। ছবিটি ২০২৩ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি তোলা

রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ চলছে দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে। এরই মধ্যে মস্কোর আরেক প্রতিবেশী মলদোভার সঙ্গে রাশিয়ার উত্তেজনা বেশ বেড়েছে। মলদোভা বলেছে, গণতন্ত্র নিয়ে লেকচার বা বক্তৃতা দেওয়ার কোনও অধিকার রাশিয়ার নেই।

রোববার (৩ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়ার গণতন্ত্রের ওপর বক্তৃতা দেওয়ার কোনও অধিকার নেই বলে মলদোভান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শনিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে। মূলত মলদোভার ট্রান্সনিস্ট্রিয়া অঞ্চলটি সহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে রাশিয়ার প্রতি আহ্বান জানানোর পর সম্প্রতি দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে।

ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী মলদোভার ট্রান্সনিস্ট্রিয়া বা ট্রান্সডনিস্ট্রিয়া অঞ্চলটি মূলত একটি রুশ-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী এলাকা। রাশিয়া প্রায়ই দাবি করে থাকে, ট্রান্সনিস্ট্রিয়া অঞ্চলে রুশ-ভাষী জনগোষ্ঠীর ওপর নিপীড়নের ঘটনা ঘটছে। যদিও অঞ্চলটিতে রুশ সেনা মোতায়েন আছে।

রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ কয়েকদিন আগে বলেন, মলদোভান সরকার ‘কিয়েভের পদাঙ্ক অনুসরণ করছে’। এর আগে ট্রান্সডনিস্ট্রিয়া অঞ্চলটি তার অর্থনীতিকে মলদোভান সরকারের ‘চাপ’ মোকাবিলায় সহায়তা করার জন্য মস্কোর সহায়তা কামনা করে।

যদিও ট্রান্সনিস্ট্রিয়া অঞ্চলকে চাপ দেওয়ার অভিযোগকে প্রোপাগান্ডা হিসাবে আখ্যায়িত করে প্রতাখ্যান করেছে মলদোভা।

মলদোভার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শনিবার জারি করা এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাভরভ এবং ক্রেমলিন সরকারের গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা নিয়ে বক্তৃতা দেওয়ার কোনও নৈতিক অধিকার নেই। যে দেশটি বিরোধী রাজনীতিকদের বন্দি করে এবং তাদের হত্যা করে, অযৌক্তিকভাবে তার প্রতিবেশীদের আক্রমণ করে, তার কাছে রক্ত ​​এবং ব্যথা ছাড়া বিশ্বকে দেওয়ার কিছু নেই।’

প্রসঙ্গত, কারাগারে মৃত্যুর দুই সপ্তাহ পর শনিবার রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর মস্কোভা নদীর তীরে চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছেন দেশটির বিরোধী নেতা ও প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কট্টর সমালোচক নাভালনি। কারারুদ্ধ অবস্থায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ৪৭ বছর বয়সে তিনি মারা যান। সমর্থকদের অভিযোগ, তাকে হত্যা করা হয়েছিল।

মূলত মস্কোর ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রায় আগ্রাসন শুরু করার প্রায় দুই বছর পর নাভালনির মৃত্যু হয়। ইউক্রেনে চলমান এই যুদ্ধটি এমন একটি যুদ্ধ যার কোনও শেষ নেই এবং এতে বেসামরিক মানুষ মারা যাচ্ছেন।

এদিকে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের ফলে মস্কো দক্ষিণ ইউক্রেনের মধ্য দিয়ে পশ্চিম দিকে ট্রান্সনিস্ট্রিয়া বিচ্ছিন্নতাবাদী অঞ্চলে প্রবেশ করতে পারে। বিচ্ছিন্নতাবাদী এই অঞ্চলটি বলছে, তাদের ভূখণ্ডে ২ লাখ ২০ হাজার রাশিয়ান নাগরিক রয়েছে।

রয়টার্স বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে মলদোভা এবং রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্ক বেশ বিপর্যস্ত হয়েছে। কারণ মলদোভান সরকার ইউরোপ-পন্থি পথ অনুসরণ করছে এবং একইসঙ্গে মলদোভাকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করার দায়ে মস্কোকে অভিযুক্ত করেছে।

মলদোভান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তার শনিবারের বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা একটি ইউরোপীয় ভবিষ্যত গড়ে তুলছি যাতে ভাষা ও জাতি নির্বিশেষে আমাদের সকল নাগরিক শান্তি ও সমৃদ্ধিতে বসবাস করতে পারে।’

উল্লেখ্য, মাত্র ২৬ লাখ জনসংখ্যার দেশ মলদোভা ইউরোপের সবচেয়ে দরিদ্রতম অর্থনীতির দেশগুলোর একটি এবং প্রতিবেশী ইউক্রেনের যুদ্ধে এই দেশটি ব্যাপকভাবে সামনে চলে এসেছে। ১৯৯২ সালে রোমানিয়া এবং ইউক্রেনের মাঝে অবস্থিত ছোট্ট রাষ্ট্র মলদোভার একটি অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

রাশিয়া ঘনিষ্ঠ এই অংশের নাম ট্রান্সনিস্ট্রিয়া। বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর ওই অঞ্চলে রাশিয়া তাদের সেনা মোতায়েন করে রেখেছে।

টিএম