গাজায় খাদ্য সহায়তার জন্য যারা দাতব্য সংস্থা এবং স্বেচ্ছাসেবকদের ওপর নির্ভর করছে তাদের মধ্যে শিশুরাও রয়েছে

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জার পাশাপাশি হামলা হচ্ছে হাসপাতালেও। এতে করে গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ইতোমধ্যেই ভেঙে পড়েছে।

এরসঙ্গে অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডটিতে দেখা দিয়েছে তীব্র মানবিক সংকট। এমন অবস্থায় গাজায় অপুষ্টির শিকার হয়ে মারা যাচ্ছে শিশুরা। অন্যদিকে ইসরায়েলের বর্বর হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজারে পৌঁছেছে।

বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় বিপর্যয়কর মানবিক পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় উত্তর গাজার হাসপাতালে পানিশূন্যতা ও অপুষ্টিতে ছয় শিশু মারা গেছে বলে অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি এই ভূখণ্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

গাজা শহরের আল-শিফা হাসপাতালে দুই শিশু মারা গেছে বলে বুধবার মন্ত্রণালয়টি জানিয়েছে। এর আগে তারা জানিয়েছিল, উত্তর গাজার কামাল আদওয়ান হাসপাতালে চার শিশু মারা গেছে, এবং অন্য সাতজন গুরুতর অবস্থায় রয়েছে।

গাজায় ইসরায়েলের হামলা অব্যাহত রয়েছে এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল-কুদরা এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমরা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে উত্তর গাজায় মানবিক বিপর্যয় এড়াতে অবিলম্বে হস্তক্ষেপ করতে বলছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘গাজায় গণহত্যা বন্ধ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একটি নৈতিক ও মানবিক পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছে।’

কামাল আদওয়ান হাসপাতালের পরিচালক আহমেদ আল-কাহলুত বলেছেন, জেনারেটর চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানির অভাবে হাসপাতালটি তার পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে। মঙ্গলবার জাবালিয়ার আল-আওদা হাসপাতালও একই কারণে পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে।

ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা একটি ভিডিওতে সাংবাদিক ইব্রাহিম মুসালামকে গাজার কামাল আদওয়ান হাসপাতালের শিশু বিভাগের ভেতরে বিছানায় একটি শিশুকে দেখাতে দেখা যাচ্ছে এবং তখন সেখানে বারবার বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করতে দেখা যায়।

মুসালাম বলেন, বিভাগের শিশুরা অপুষ্টি ও শিশু সূত্রের অভাবে ভুগছে এবং জ্বালানি সংকটের ফলে ক্রমাগত বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে প্রয়োজনীয় ডিভাইসগুলোও কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস বুধবার বলেছে, কামাল আদওয়ান হাসপাতাল বন্ধ হলে সেটি উত্তর গাজায় স্বাস্থ্য ও মানবিক সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলবে। কারণ এই অঞ্চলটি ইতোমধ্যেই দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে এবং ইসরায়েল সেখানে সহায়তা মিশনগুলোকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে বা তাদের কার্যক্রম ব্যাহত করছে।

এদিকে ইসরায়েলের বর্বর হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজারে পৌঁছেছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৯ হাজার ৯৫৪ জনে পৌঁছেছে।

মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজায় আরও অন্তত ৭৬ জন মারা গেছেন। এছাড়া গত বছরের ৭ অক্টোবর সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে গাজায় আরও ৭০ হাজার ৩২৫ জন আহত হয়েছেন।

টিএম