গাজায় খাদ্য সহায়তার জন্য যারা দাতব্য সংস্থা এবং স্বেচ্ছাসেবকদের ওপর নির্ভর করছে তাদের মধ্যে শিশুরাও রয়েছে

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জার পাশাপাশি হামলা হচ্ছে হাসপাতালেও। এতে করে গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ইতোমধ্যেই ভেঙে পড়েছে।

এরসঙ্গে অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডটিতে দেখা দিয়েছে তীব্র মানবিক সংকট। এমন অবস্থায় দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে গাজার লাখ লাখ মানুষ। জাতিসংঘ বলেছে, গাজার এক-চতুর্থাংশ মানুষ দুর্ভিক্ষ থেকে মাত্র একটি ধাপ দূরে।

বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা উপত্যকায় কমপক্ষে ৫ লাখ ৭৬ হাজার মানুষ বা ভূখণ্ডটির মোট জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ দুর্ভিক্ষ থেকে এক ধাপ দূরে রয়েছে বলে জাতিসংঘের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মঙ্গলবার নিরাপত্তা পরিষদকে জানিয়েছেন। একইসঙ্গে তিনি সতর্ক করে বলেছেন, কোনও ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া না হলে গাজায় ব্যাপক দুর্ভিক্ষ ‘প্রায় অনিবার্য’ হয়ে উঠতে পারে।

জাতিসংঘের অফিস ফর দ্য কোঅর্ডিনেশন অব হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাফেয়ার্স (ইউএনওসিএইচএ)-এর কোঅর্ডিনেশন ডিরেক্টর রমেশ রাজাসিংহাম বলেছেন, ‘এভাবে সংঘাত চলতে থাকলে এবং গাজার দক্ষিণে জনাকীর্ণ এলাকায়ও যখন সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে তখন মানবিক বিষয়ক সমন্বয়ের কাজ খুব কমই সম্ভব হবে।’

তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে বলেন, গাজার উত্তরাঞ্চলে ২ বছরের কম বয়সী প্রতি ছয় শিশুর মধ্যে এক শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার এবং ফিলিস্তিনি এই ভূখণ্ডের ২৩ লাখ মানুষই কার্যত বেঁচে থাকার জন্য ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে অপর্যাপ্ত’ খাদ্য সহায়তার ওপর নির্ভর করছে।

রাজাসিংহাম আরও বলেন, জাতিসংঘ এবং সাহায্য গোষ্ঠীগুলো ‘গাজায় ন্যূনতম সহায়তা সরবরাহ পেতেও অপ্রতিরোধ্য বাধার সম্মুখীন হয়েছে। এর মধ্যে ক্রসিং বন্ধ, চলাচল এবং যোগাযোগের ওপর বিধিনিষেধ, কঠোর পরীক্ষা পদ্ধতি, অস্থিতিশীলতা, ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা এবং অবিস্ফোরিত গোলাবারুদের মতো বিষয় রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

তবে ইসরায়েল গাজার মানবিক পরিস্থিতির উন্নতির জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে দাবি করেছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরায়েলের ডেপুটি অ্যাম্বাসেডর জোনাথন মিলার। তার দাবি, সাহায্যের পরিমাণ এবং তা বিতরণের গতির বিষয়ে বিদ্যমান সীমাবদ্ধতাগুলো আসলে জাতিসংঘ এবং অন্যান্য সংস্থার সক্ষমতার ওপর নির্ভর করে।

মিলার নিরাপত্তা পরিষদকে বলেন, ‘ইসরায়েল তার নীতিতে স্পষ্ট। এর একেবারেই কোনও সীমা নেই এবং আমি আবারও বলছি, গাজার বেসামরিক জনগণের কাছে কী পরিমাণ মানবিক সাহায্য পাঠানো যেতে পারে তার কোনও সীমা নেই।’

পৃথক প্রতিবেদনে আল জাজিরা বলেছে, গাজা চরম ক্ষুধায় নিমজ্জিত হচ্ছে বলে যখন ত্রাণ গোষ্ঠীগুলো ধারাবাহিকভাবে সতর্ক করে চলেছে, তখন ইসরায়েল চলতি ফেব্রুয়ারিতেও এই ভূখণ্ডে অত্যাবশ্যক মানবিক সহায়তা প্রদানের প্রচেষ্টাকে আরও সীমিত করেছে।

কিছু মানবাধিকার গোষ্ঠী বলছে, ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধের অস্ত্র হিসাবে অনাহারকে ব্যবহার করছে।

উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।

ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলের আক্রমণের ফলে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও প্রায় ৭০ হাজার মানুষ।

এছাড়া ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।

মূলত ইসরায়েলি আক্রমণ গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজার সকলেই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন।

এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। হাজার হাজার মানুষ কোনও ধরনের আশ্রয় ছাড়াই বসবাস করছে এবং প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম ত্রাণবাহী ট্রাক এই অঞ্চলে প্রবেশ করছে।

টিএম