হুথিদের ঠেকাতে গত মাস থেকে ইয়েমেনের বিভিন্ন স্থানে হামলা চালানো শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য (ফাইল ছবি)

ইয়েমেনে সশস্ত্র গোষ্ঠী হুথিদের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে নতুন করে হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য। এদিনের হামলায় হুথিদের ১৮টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করে দেশ দুটি।

লোহিত সাগরে একের পর এক জাহাজে হামলার পর মার্কিন ও ব্রিটিশ বাহিনীর যৌথ এই হামলার ঘটনা ঘটল। রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের যুদ্ধবিমান ইয়েমেনের হুথি গোষ্ঠীর ১৮টি স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। ইরান-সমর্থিত হুথিদের বিরুদ্ধে পরাশক্তি এই দুই মিত্র দেশের এটি চতুর্থদফা যৌথ অভিযান।

যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, শনিবারের এসব হামলায় হুথিদের স্টোরেজ সুবিধা, ড্রোন, আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, রাডার এবং সশস্ত্র এই গোষ্ঠীর একটি হেলিকপ্টারকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়। অন্যদিকে যুক্তরাজ্য বলছে, হুথিদের সক্ষমতাকে ‘আরও অবনমিত’ করতে কাজ করেছে মিত্ররা।

ইরান-সমর্থিত হুথিরা লোহিত সাগরের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য রুট দিয়ে যাতায়াতকারী ইসরায়েল ও পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে যুক্ত জাহাজগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করে চলেছে এবং তাদের এই হামলা অব্যাহত রয়েছে। আর হুথিদের জাহাজে বারবার হামলার প্রতিক্রিয়ায় এই হামলা চালানো হয়েছে।

লোহিত সাগরে হুথিদের এই হামলা বিশ্ব বাণিজ্যকে ব্যাহত করেছে এবং অনেকের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে বলে দাবি পশ্চিমাদের। মূলত হুথিরা রাজধানী সানাসহ ইয়েমেনের বিশাল অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন অব্যাহত থাকার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল এবং পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে যুক্ত জাহাজগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করছে তারা।

এক যৌথ বিবৃতিতে পেন্টাগন বলেছে, শনিবারের ‘প্রয়োজনীয় এবং আনুপাতিক হামলায় বিশেষভাবে ইয়েমেনের আটটি স্থানে হুথি গোষ্ঠীর ভূগর্ভস্থ অস্ত্র স্টোরেজ অবকাঠামো, ক্ষেপণাস্ত্র স্টোরেজ অবকাঠামো, একমুখী হামলার জন্য প্রস্তুতকৃত মানবহীন বিমান ব্যবস্থা, আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, রাডার ব্যবস্থার সাথে যুক্ত ১৮টি হুথি লক্ষ্যবস্তুকে লক্ষ্য করে এবং একইসঙ্গে একটি হেলিকপ্টারকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়’।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য, নৌযান এবং বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নৌপথে নিরীহ নাবিকদের জীবনকে হুমকির মুখে ফেলার জন্য হুথিদের সক্ষমতা ব্যাহত এবং অবনমিত করার উদ্দেশ্যে এই নিখুঁত হামলাগুলো চালানো হয়েছে।’

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘গত বছরের নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে হুথিরা এখন পর্যন্ত বাণিজ্যিক ও নৌ জাহাজে ৪৫টিরও বেশি আক্রমণ করেছে যা বিশ্ব অর্থনীতি, সেইসাথে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি এবং এই কারণে তাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া থাকা উচিত।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘অস্ট্রেলিয়া, বাহরাইন, কানাডা, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস এবং নিউজিল্যান্ডের সমর্থনে এই হামলা চালানো হয়েছে’।

পরে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন জোর দিয়ে বলেন, আমেরিকা ‘বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নৌপথে জীবন এবং বাণিজ্যের অবাধ প্রবাহ রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে দ্বিধা করবে না’।

আলাদাভাবে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রী গ্রান্ট শ্যাপস বলেছেন, ‘সমুদ্রে মানুষের জীবন রক্ষা করা এবং নৌ চলাচলের স্বাধীনতা রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য’।

প্রসঙ্গত, ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক থাকার সন্দেহে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বাণিজ্যিক জাহাজগুলোতে হুথিদের হামলা লোহিত সাগরে উত্তেজনা ব্যাপকভাবে বাড়িয়েছে। মার্কিন ও ব্রিটিশ বাহিনী হুথিদের বিরুদ্ধে হামলার জবাব দিয়েছে। এর বিপরীতে হুথিরা আমেরিকান এবং ব্রিটিশ স্বার্থকেও হামলার বৈধ লক্ষ্য হিসেবে ঘোষণা করেছে।

এছাড়া হুথিদের বিরুদ্ধে হামলার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র একটি বহুজাতিক নৌ টাস্কফোর্সও গঠন করেছে যার লক্ষ্য লোহিত সাগরের ট্রানজিট রুটে জাহাজ চলাচলের নিরাপত্তা রক্ষা করা। হুথিদের সাথে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা জোটের হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনায় ব্যাপক উদ্বেগ বৃদ্ধি পেয়েছে।

হুথিরা মূলত ইয়েমেনের শিয়া মুসলিম সংখ্যালঘু জাইদি নামের উপ-সম্প্রদায়ের সশস্ত্র গোষ্ঠী। বেশিরভাগ ইয়েমেনি হুথিদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় বসবাস করে। পাশাপাশি সানা এবং ইয়েমেনের উত্তরে হুথিরা লোহিত সাগরের উপকূলরেখাও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

মূলত ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরুর পর থেকে গত প্রায় পাঁচ মাস ধরে লোহিত সাগরে ইসরায়েল সংশ্লিষ্ট ও ইসরায়েলগামী জাহাজে অব্যাহতভাবে হামলা চালিয়ে আসছে হুথি বিদ্রোহীরা। ইরান সমর্থিত সশস্ত্র এই গোষ্ঠী জানিয়েছে, যতদিন গাজায় ইসরায়েলের বর্বরতা চলবে ততদিন তারা হামলা চালিয়ে যাবে।

এদিকে বাণিজ্যিক জাহাজ লক্ষ্য করে হুথিদের এসব হামলার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে এর অনেক প্রভাব পড়েছে। লোহিত সাগর থেকে মিসরের সুয়েজ খাল হয়ে যেসব জাহাজ ইউরোপে যেত; সেসব জাহাজকে এখন আফ্রিকা ঘুরে যেতে হচ্ছে।

টিএম