ফাইল ছবি

ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। টানা সাড়ে চার মাস ধরে চালানো এই হামলায় এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ২৯ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। বর্বর এই আগ্রাসনের জেরে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে বাড়ছে ক্ষোভ।

তবে এখানেই যেন শেষ নয়। গাজায় ইসরায়েলের এই যুদ্ধে প্রাণ হারাতে পারেন আরও ৮৬ হাজার ফিলিস্তিনি। এমনটিই বলছে একটি সমীক্ষা। বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা আনাদোলু।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান যুদ্ধ আরও বাড়লে প্রায় ৮৬ হাজার মানুষ মারা যেতে পারে বলে যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের একটি যৌথ সমীক্ষায় ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।

‘দ্য ক্রাইসিস ইন গাজা: সিনারিও-বেসড হেলথ ইমপ্যাক্ট প্রোজেকশন’ নামের এই যৌথ সমীক্ষা করে লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিন এবং জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর হিউম্যানিটারিয়ান হেলথ।

গত সোমবার এই সমীক্ষা প্রকাশিত হয়। এই সমীক্ষায় গাজায় চলমান যুদ্ধে তিনটি সম্ভাব্য পরিস্থিতি কী হতে পারে তা সামনে আনা হয়েছে। যার মধ্যে সবচেয়ে খারাপ সম্ভাবনার ব্যাপারে বলা হয়েছে, গাজায় সংঘাত আরও বৃদ্ধি পেলে পরবর্তী ছয় মাসে শারীরিক আঘাত এবং রোগের কারণে ৮৫ হাজার ৭৫০ ফিলিস্তিনি মারা যেতে পারেন।

ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলের আক্রমণের ফলে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও প্রায় ৭০ হাজার মানুষ।

আনাদোলু বলছে, গত চার মাসে বিদ্যমান অবস্থার ধারাবাহিকতার ওপর ভিত্তি করে মধ্যম-মানের সম্ভাব্য পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, আঘাত এবং রোগের কারণে পরবর্তী অর্ধ বছরে ৬৬ হাজার ৭২০ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারাতে পারেন।

আর সর্বোত্তম পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, এখনই যদি গাজায় যুদ্ধবিরতি হয়, তাহলে এখনও অবরুদ্ধ এই উপত্যকায় প্রায় ১১ হাজার ৫৮০ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারাবে। আর এই মৃত্যুর প্রায় অর্ধেকের জন্য দায়ী করা হবে মহামারিকে।

রিপোর্টের লেখকরা লিখেছেন, ‘আমাদের এই সম্ভাব্য অনুমানগুলো ইঙ্গিত দিচ্ছে- বর্তমান পরিস্থিতির আলোকে সর্বোত্তম ক্ষেত্রেও অর্থাৎ যুদ্ধবিরতি হলেও হাজার হাজার অতিরিক্ত মৃত্যুর ঘটনা ঘটতে থাকবে, আর এটি হবে প্রধানত পানি, স্যানিটেশন এবং আশ্রয় ব্যবস্থার বর্তমান অবস্থার কারণে। কারণ এই অবস্থার উন্নতি করতে, অপুষ্টি কমাতে এবং গাজায় কার্যকরী স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবাগুলো পুনরায় চালু করতে সময় লাগবে।’

আনাদোলু বলছে, গাজায় পরিস্থিতি কোন দিকে এগোবে সেদিকে লক্ষ্য রেখে সময়ের সাথে সাথে এই সমীক্ষাটি মে মাসের মধ্যে নিয়মিতভাবে ফলাফল আপডেট করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু চলমান যুদ্ধকে দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় এই শহরে প্রায় ১৫ লাখ মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। মূলত যুদ্ধের কারণে গাজার অন্যান্য এলাকা থেকে বাস্তুচ্যুত হওয়ার পর বেশিরভাগই রাফাহতে পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছেন।

হামাসের হাতে আটক থাকা ১৩০ জনেরও বেশি বন্দিকে মুক্তি না দিলে আগামী মাসে রমজান শুরুর মধ্যে শহরটিতে স্থল হামলা চালানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন নেতানিয়াহু।

টিএম