মার্কিন যুদ্ধজাহাজসহ ইসরায়েলি জাহাজে হামলার দাবি হুথিদের
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে হামাস ও ইসরায়েলের সংঘাত চলছে সাড়ে চার মাস ধরে। ইসরায়েলি আগ্রাসন যতই তীব্র ও দীর্ঘ হচ্ছে, চলমান এই সংঘাত আঞ্চলিক রূপ নেওয়ার ঝুঁকিও ততই বাড়ছে।
এমন অবস্থায় মার্কিন যুদ্ধজাহাজে হামলার দাবি করেছে ইয়েমেনের হুথি গোষ্ঠী। সেইসাথে ইসরায়েলি পণ্যবাহী জাহাজ এবং ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলীয় লোহিত সাগরের তীরবর্তী শহর ইলাতে হামলার কথাও জানিয়েছে ইরান-সমর্থিত ইয়েমেনের এই সশস্ত্র গোষ্ঠীটি।
বিজ্ঞাপন
বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লোহিত সাগরের প্রবেশপথের কাছে এডেন উপসাগরে একটি ইসরায়েলি পণ্যবাহী জাহাজে বেশ কিছু ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালানো হয়েছে বলে ইয়েমেনের হুথি গোষ্ঠী জানিয়েছে। এমএসসি সিলভার নামের ওই জাহাজটিকে ইসরায়েলের বলেও দাবি করেছে তারা।
হুথি গোষ্ঠীর সামরিক মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারিয়া হামলার বিষয়ে বিস্তারিত বলেননি। তবে মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, হুথি গোষ্ঠী লোহিত সাগর এবং আরব সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি যুদ্ধজাহাজ এবং সেইসাথে দক্ষিণ ইসরায়েলি রিসোর্ট শহর ইলাতের বেশ কিছু লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাতে ড্রোন ব্যবহার করেছে।
তবে ব্রিটিশ মেরিটাইম সিকিউরিটি ফার্ম অ্যামব্রে বলেছে, মঙ্গলবার হুথিদের হামলার শিকার হওয়া কন্টেইনার জাহাজটি লাইবেরিয়া-পতাকাবাহী এবং এটি সোমালিয়ার দিকে যাচ্ছিল। অ্যামব্রের অ্যাডভাইজরি নোটে বলা হয়েছে, ‘হুথিরা জাহাজটিকে ইসরায়েলি বলে চিহ্নিত করেছে। অপারেটরটিকে জিআইএম-এর সহযোগিতায় তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল এবং নিয়মিতভাবে ইসরায়েলি বন্দরে যাতায়াত করত জাহাজটি।’
জিম ইন্টিগ্রেটেড শিপিং সার্ভিসেস লিমিটেড সাধারণত জিআইএম নামে পরিচিত এবং এটি ইসরায়েল-ভিত্তিক একটি আন্তর্জাতিক ইসরায়েলি কার্গো শিপিং কোম্পানি।
মূলত ইয়েমেনের সর্বাধিক জনবহুল অঞ্চল হুথি গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রণ করে থাকে এবং সেখান থেকেই তারা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ইসরায়েলের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্কযুক্ত জাহাজগুলোতে আক্রমণ করে চলেছে।
ইয়েমেনে হুথি সামরিক স্থাপনাগুলোতে মার্কিন-ব্রিটিশ হামলা সত্ত্বেও, যতক্ষণ না ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় তাদের যুদ্ধ বন্ধ না করে ততক্ষণ পর্যন্ত ফিলিস্তিনিদের সাথে সংহতি জানিয়ে ইসরায়েলের সাথে যুক্ত জাহাজগুলোকে হামলার লক্ষ্যবস্তু করা হবে বলে ইরান-সমর্থিত হুথিরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
হুথির মুখপাত্র মোহাম্মদ আবদুল সালাম মঙ্গলবার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত কোনও আক্রমণাত্মক অভিযান না হয়, ততক্ষণ আন্তর্জাতিক বা ইউরোপীয় নৌচলাচলের জন্য কোনও বিপদ নেই এবং এইভাবে, লোহিত সাগরকে সামরিকীকরণ করার দরকার নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ব লোহিত সাগরের সামরিকীকরণ নয়, বরং গাজায় অবিলম্বে এবং বিস্তৃত যুদ্ধবিরতির ঘোষণার জন্য অপেক্ষা করছে। মানবিক কারণে এটি যে প্রয়োজন, তা যে কারও কাছে স্পষ্ট।’
এদিকে ইয়েমেনের কাছে হুথিরা একটি সামরিক এমকিউ-৯ রিপার ড্রোন ভূপাতিত করেছে বলে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন মঙ্গলবার নিশ্চিত করেছে। পেন্টগনের ডেপুটি মুখপাত্র সাবরিনা সিং সাংবাদিকদের বলেন, ড্রোনটি ইয়েমেনের হুথি-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের উপকূলে লোহিত সাগরে পড়ে যায়।
তিনি বলেন, ড্রোনটি লক্ষ্য করে হুথিরা সারফেস টু এয়ার মিসাইল নিক্ষেপ করেছিল এবং এটিকেই ড্রোনটি ভূপাতিত হওয়ার প্রাথমিক কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে। ভূপাতিত ড্রোনটি উদ্ধার করা হয়নি বলেও জানিয়েছেন তিনি।
সিএনএন জানিয়েছে, ইয়েমেনি এই সশস্ত্র গোষ্ঠী গত বছরের নভেম্বরে ইয়েমেনের উপকূলে একই মডেলের আরেকটি মার্কিন ড্রোন ভূপাতিত করেছিল। মনুষ্যবিহীন এই ড্রোনটি গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের জন্য ব্যবহার করা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা বলেছেন, প্রাথমিক তথ্যে দেখা গেছে, জেনারেল অ্যাটমিকসের তৈরি মার্কিন এই ড্রোনে গত সোমবার ইয়েমেনের বন্দর শহর হোদেইদাহের কাছে আঘাত হানে। কর্মকর্তা বলেছেন, তথ্য পরিবর্তন হতে পারে এবং ড্রোনটি আন্তর্জাতিক আকাশসীমায় ছিল কিনা তা তিনি বলেননি।
দ্বিতীয় আরেক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, হোদেইদাহ থেকে ছোঁড়া হুথিদের সারফেস টু এয়ার মিসাইলের আঘাতে ড্রোনটি ভূপাতিত করা হয়।
আরও পড়ুন
মূলত ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় দখলদার ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদে লোহিত সাগরে ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের মালিকানাধীন জাহাজে হামলা চালাচ্ছে হুথিরা। হুথিদের ঠেকাতে ইয়েমেনে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য যৌথ হামলা চালালেও; সেগুলো তেমন কার্যকরী হচ্ছে না।
এছাড়া হুথিদের হামলার কারণে লোহিত সাগর দিয়ে জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে বিশ্বের বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো। বিশ্বে সমুদ্র পথে যত বাণিজ্য হয়, তার ১২ শতাংশ এই লোহিত সাগর দিয়ে হয়।
এদিকে বাণিজ্যিক জাহাজ লক্ষ্য করে হুথিদের এসব হামলার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে এর অনেক প্রভাব পড়েছে। লোহিত সাগর থেকে মিসরের সুয়েজ খাল হয়ে যেসব জাহাজ ইউরোপে যেত; সেসব জাহাজকে এখন আফ্রিকা ঘুরে যেতে হচ্ছে।
হুথিরা মূলত ইয়েমেনের শিয়া মুসলিম সংখ্যালঘু জাইদি নামের উপ-সম্প্রদায়ের সশস্ত্র গোষ্ঠী। বেশিরভাগ ইয়েমেনি হুথিদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় বসবাস করে। পাশাপাশি সানা এবং ইয়েমেনের উত্তরে হুথিরা লোহিত সাগরের উপকূলরেখাও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে তারা।
টিএম